Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়

ষষ্ঠ কিস্তি

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৫৬ পিএম | আপডেট : ৩:৫৬ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

‘কাশ্মীর ইস্যু’ বা ‘কাশ্মীর সঙ্কট’ হিসেবে গত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি, তা হয়তো সৃষ্টিই হতো না যদি না কাশ্মীরে মুসলিম শাসনের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়তো। আফগান শাসকদের কাছ থেকে শিখরা কাশ্মীর অধিকার করে নিলে এর নীতি ও শাসন ব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়। ব্যতিক্রমবাদে যারা শিখ রাজার প্রতিনিধি বা গভর্নর হিসেবে কাশ্মীরে আসেন তাদের সবাই ছিলেন হিন্দু। তাদের দুঃশাসনে কাশ্মীরিরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সে সুযোগ গ্রহণ করে শিখদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় ও বিজয় অর্জন করে। এহেন ফলাফল কাশ্মীরিদের জন্য হিতে বিপরীত হয়। কোম্পানির কর্মকর্তারা ডোগরা জমিদার গুলাব সিংয়ের কাছে কাশ্মীরকে ৭৫ লাখ রুপিতে বিক্রি করে দিলে সেটা কাশ্মীরিদের জন্য কাল হয়ে দেখা দেয়।
বস্তুত কাশ্মীর পরিস্থিতির জন্য ব্রিটিশ শাসকরা বিশেষভাবে দায়ী। কোম্পানি যদি কাশ্মীরকে ওইভাবে বিক্রি না করে নিজেই সরাসরি শাসন করতো তাহলে ১৯৪৭ সালে কাশ্মীর না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থায় পৌঁছাতো না। লর্ড কিম্বারলির ভাইসরয়ের কাছে লেখা বক্তব্যেও এটা বুঝা যায়, ব্রিটিশ সরকার চাইলে বিষয়টি সংশোধন করতে পারতো। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও জরুরি ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এদিকে কান ও দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। শেষ সুযোগও একটা ছিল। ভারত বিভাগের সময় প্রিন্সলি স্টেটগুলোর ব্যাপারে যদি যৌক্তিক নির্দেশনা থাকতো তাহলে কাশ্মীর স্বাধীন অথবা পাকিস্তানের অংশ হতো। কাশ্মীর ইস্যুর মতো দীর্ঘমেয়াদি অমানবিক ও বেদনাদায়ক ইস্যু তৈরি হতো না।
ভারত কাশ্মীর ইস্যু বা কাশ্মীর সঙ্কটকে তার অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে। তার আন্তর্জাতিক মিত্ররা অবলীলায় ভারতের অভিমতের প্রতি সমর্থন জানায়। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমত, কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ হয়েছে। এই যুদ্ধের ফলে কাশ্মীরের একাংশ ভারত ও অপরাংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে গেছে। অন্যদিকে চীন-ভারত যুদ্ধের ফল হিসেবে কাশ্মীরের একাংশ চীনের দখলে চলে গেছে। দ্বিতীয়ত, কাশ্মীর ইস্যু ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘে গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু তখন ইস্যুটি জাতিসংঘে নিয়ে যান। নেহরুর উদ্দেশ্য ছিল, জাতিসংঘের মাধ্যমে কাশ্মীরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ লাভ করা। সেটা হয়নি, বরং উল্টো হয়েছে। জাতিসংঘ এই মর্মে সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারণের এখতিয়ার কাশ্মীরিদের। গণভোটের মাধ্যমে সেটা হতে পারে। শেষ পর্যন্ত গণভোটের এই দাবি মেনে নিয়েই নেহরু জাতিসংঘ থেকে ফিরে আসেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, নেহরু জীবিত থাকা অবস্থায় যেমন গণভোটের আয়োজন করেননি, তেমনি তার মৃত্যুর পরও ভারতের কোনো ক্ষমতাসীন দল সেটা করেনি।

পঞ্চম কিস্তি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাশ্মীর


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ