পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
বস্তুত : ১৯৪৭ সালের পর সৃষ্ট কাশ্মীর সঙ্কটের মূল নিহিত রয়েছে ‘বিক্রি চুক্তির’ মধ্যে। এই চুক্তি বলে ডোগরা জমিদার গুলাব সিং কাশ্মীরের মালিক বনে গেলেও কাশ্মীরিরা কখনো তার মালিকানা স্বীকার করে নেয়নি। শিখ সমাজের অধিন কাশ্মীরের শাসক ছিলেন শেখ গোলাম মহিউদ্দীন। তিনি তখন মৃত্যু শয্যায়। তার পুত্র শেখ ইমামুদ্দীন গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে গুলাব সিংয়ের কাছে কাশ্মীর হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন। ফলে তাদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং যুদ্ধে গুলাব সিং পরাজিত হন। তখন তার সাহায্যে এগিয়ে আসে বিট্রিশ সৈন্য। উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধে শেখ ইমামুদ্দীন পরাজিত হন। অত:পর ডোগরা জমিদার (রাজা, মহারাজ) কাশ্মীরিদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের অবিশ্বাস্য অধ্যায়ের সূচনা করেন। ডোগরা যে একশ’ বছর (১৮৪৬-১৯৪৭) কাশ্মীর দখল ও শাসন করেন। এই সময়ে তারা তাদের বিনিয়োজিত অর্থের সাত শতগুণ বেশি অর্থ কাশ্মীরিদের কাছ থেকে ট্যাক্স-খাজনা বাবদ আদায় করেন। ডোগরাদের অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণ এতই নির্মম ও অমানবিক ছিল যে, ব্রিটিশ কর্মকর্তা লর্ড কিম্বারলি ১৮৮৪ সালে তখনকার ভাইসরয়ের কাছে লিখেছিলেন, ‘যদিও হিন্দু পরিবারকে রাজ্যের সার্বভৌমত্ব ন্যস্ত করা হয়েছিল, তবু মুসলমান জনগণের পক্ষে ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপ করতে ইতোমধ্যেই বেশি দেরি হয়ে গেছে।’ বলা বাহুল্য, লর্ড কিম্বারলির বক্তব্যের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ওই ‘হস্তক্ষেপ’ যদি তখনই করা হতো, ডোগরাদের কাছ থেকে শাসন কর্তৃত্ব ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতো তাহলে কাশ্মীরের পরবর্তী ইতিহাস ভিন্নরকম হতে পারতো। ডোগরা রাজাদের অধীন জম্মু-কাশ্মীরসহ অন্যান্য এলাকা সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অধিভুক্ত হলে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতো অনিবার্যভাবে। সেক্ষেত্রে কাশ্মীর নিয়ে পরবর্তীতে পাকিস্তান-ভারত একাধিক যুদ্ধ হতো না। কাশ্মীর সংকট সৃষ্টিই হতো না।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতে তিন ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। সে মোতাবেক ভারত আসলে তিন প্রশাসনিক এলাকায় বিভক্ত ছিল। যথা : তিনটি প্রেসিডেন্সি (বাংলা, মাদ্রাজ, বোম্বে) ১৭টি প্রদেশ এবং ৫৫৬টি প্রিন্সলি স্টেট বা করদ রাজ্য। শুরুতে কোম্পানি কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ম থেকে এবং পরবর্তীতে দিল্লি থেকে ব্রিটিশ সরকার এ ত্রিধা বিভক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনা করতো। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি প্রশাসনিক পদ্ধতি ছিল আলাদা আলাদা। প্রেসিডেন্সি, প্রদেশ ও প্রিন্সলি স্টেটগুলো ছিল স্বতন্ত্র সত্ত¡া।
প্রিন্সলি স্টেটগুলো কতিপয় বিষয় (প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র যোগাযোগ ইত্যাদি) ছাড়া কার্যত স্বাধীন ছিল। ব্রিটিশের আনুগত্য প্রদর্শন এবং নির্ধারিত একটি অর্থ ব্রিটিশদের প্রদান করাই ছিল শর্ত। প্রিন্সলি স্টেটগুলোর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর ছিল বৃহত্তম। খরিদ সূত্রে কাশ্মীরের মালিক হওয়ায় ডোগরা রাজারা অন্যান্য রাজাদের তুলনায় অনেক স্বাধীনতা ভোগ করতো। এই অবস্থায় ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশগুলো যথারীতি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। ভারত বিভাগের যে নীতিমালা গৃহীত হয়, তার মূল কথা ছিল, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে গঠিত হবে মুসলমানদের হোমল্যান্ড বা পাকিস্তান। আর হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে গঠিত হবে হিন্দুদের হোমল্যান্ড বা ভারত। ভারত বিভাগের নীতিমালার মধ্যে প্রিন্সলি স্টেটগুলোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা ছিল না। না থাকার পেছনে ব্রিটিশদের যুক্তি ছিল, প্রিন্সলি স্টেটগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে এমন কিছু লেখা নেই। এটা ছিল একটা খোঁড়া যুক্তি। ভারত বিভাগের নীতিমালার মধ্যে প্রিন্সলি স্টেটগুলোর ব্যাপারে অবশ্যই সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে পারতো। তবে তখন সাধারণভাবে বলা হয়, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা প্রিন্সলি স্টেটগুলোর। তারা যেকোনো রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে কিংবা স্বাধীন থাকতে পারে। এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার। প্রিন্সলি স্টেটগুলোর ছিল ভারত ও পাকিস্তান ভূখÐের মধ্যে বা সীমান্তে। মধ্যবর্তী স্টেটগুলোর পক্ষে স্বাধীন থাকা বাস্তব কারণেই সম্ভব ছিল না। অনেক স্টেট ছিল ছোট ও দুর্বল। ফলে তাদের স্বাধীনতার কথা ছেড়ে দিতে হয়। প্রিন্সলি স্টেটগুলোর মধ্যে ৩টি পাকিস্তানের মধ্যে ছিল আর সবই ছিল ভারতের মধ্যে। পাকিস্তানের ভূখÐের মধ্যে থাকা স্টেটগুলো পাকিস্তানে যোগদান করে। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা স্টেটগুলো ভারতে যোগদান করে। এসব স্টেট যাতে ভারতেই যোগদান করে তা নিশ্চিত করার জন্য নেহেরু আগের থেকেই তৎপর ছিলেন। নেহেরু এক্ষেত্রে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করেন। স্বেচ্ছায় যোগদানকারী রাজাদের ভাষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়ার টোপ দেয়া হয়। এতে অনেকেই প্রলভিত হয়ে যোগ দান করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।