Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুনসান নীরবতা

আত্মগোপনে চট্টগ্রামের অর্ধশত ক্যাসিনো মালিক-জুয়াড়ি : ছাত্রলীগ যুবলীগে হাইব্রিডরা আতঙ্কে

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম


চট্টগ্রামের অবৈধ ক্যাসিনোগুলোতে এখন সুনসান নীরবতা। গা ঢাকা দিয়েছে অর্ধশত অবৈধ ও অঘোষিত ক্যাসিনো, বার, ক্লাবের মালিক ও জুয়াড়িরা। রাজধানী ঢাকায় সাঁড়াশি অভিযানের পর পাতালে যেতে শুরু করে তারা। মালিকদের অনেকে বাসাবাড়ি থেকেও হাওয়া হয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, সময়োচিত ও সাহসী সিদ্ধান্তে রাজধানী ঢাকার ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। চট্টগ্রামেও এ ধরনের অভিযান শুরু হবে এমন প্রত্যাশা সবার।

রাজধানী ঢাকার মত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মহানগরী বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও অবৈধ এবং অঘোষিত ক্যাসিনো, বার, ক্লাবে রমরমা মদ, জুয়ার আসর চলছে। দেশের প্রধান বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্রæত প্রসারের সাথে ধনিক শ্রেণির সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বন্দর, কাস্টম হাউস কেন্দ্রিক ঘুষ, বখশিস, উৎকোচ লেনদেনে অনেকে কাঁচা টাকার মালিক হচ্ছেন। টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি, পরিবহন ব্যবসার নামে চাঁদাবাজি, ইয়াবা, অবৈধ মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসায়ীরাও রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তারাও এসব ক্যাসিনোতে জুয়ার আসরে বসছেন। মদ, জুয়ার আসরে দুহাতে টাকা উড়াচ্ছেন তারা।

আছেন উঠতি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রকল্প ও ইপিজেডে কর্মরত বিদেশি এবং পর্যটকেরাও। সরকার সমর্থিত ঠিকাদারদের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থিত ঠিকাদারেরাও হাজির হন এসব ক্যাসিনোতে। সরকারি দলের যুব সংগঠন- যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং শ্রমিক লীগের কতিপয় বিতর্কিত এবং হাইব্রিড নেতা এসব অবৈধ কারবারে সরাসরি জড়িত। মহানগরীর অভিজাত আবাসিক এলাকা, পর্যটন স্পটসহ বিভিন্ন এলাকায় রেস্টহাউস, গেস্টহাউস, গেস্টইনের নামে রীতিমত বাড়ি ভাড়া করে এসব কারবার চলছে। অনেকে নিজেদের বাসাবাড়ির একটি অংশ এ কাজে ব্যবহার করছেন। অবৈধ এবং অঘোষিত বার, ক্লাব ও ক্যাসিনোতে জুয়ার পাশাপাশি মাদক ও ইয়াবা সেবন এবং সেইসাথে চলে অসামাজিক কার্যক্রম। ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ মাদক কারবারি ও অস্ত্রধারীদের মিলনমেলা ঘটে এসব ক্লাবগুলোতে।

বছরখানেক আগে নগরীর স্টেডিয়াম এলাকার একটি ক্লাবে গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের কতিপয় হাইব্রিড নেতার মদদে চলা এসব অপকর্মে প্রশাসনের কেউ কেউ সহযোগী হয়েছেন। আর এ কারণে বিনা বাধায় চলছে এসব অবৈধ কারবার। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, মহানগরীর সরকার দলীয় বিতর্কিত একজন সংসদ সদস্যের এসব কারবারের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। তার সার্বিক কর্মকাÐ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকারের হাইকমান্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মহানগরীতে বিভিন্ন নামে অর্ধ শতাধিক অঘোষিত ক্যাসিনো, বার ও ক্লাবে মদ, জুয়ার আসর চলছে নিয়মিত। নগরীর মূল খুলশী অভিজাত আবাসিক এলাকায় রয়েছে চারটি গেস্টইন। সেখানে ক্যাসিনোর সাথে চলে মদের আসর। ওই অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী বিদেশিদের অনেকে নিয়মিত হাজির হন। দক্ষিণ খুলশীতে আছে আরও একটি অবৈধ ক্যাসিনো। আকবরশাহ থানার ফয়’স লেক এলাকায় রয়েছে চারটি গেস্টহাউস, একটি রিসোর্ট। এসব রিসোর্টের নামে ক্যাসিনোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও উপস্থিতি চোখে পড়ে।

চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় রয়েছে তিনটি, ফিরিঙ্গিবাজার-সদরঘাট এলাকায় রয়েছে একটি, কর্ণফুলী সেতু এলাকায় একটি, পূর্ব বাকলিয়ায় একটি, আতুরার ডিপোয় একটি, এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের অদূরে একটি। হালিশহর আবাসিক এলাকায় এ ধরনের রেস্ট ও গেস্টহাউস রয়েছে ছোটবড় ১৮টির মত। এর তিনটিতে বিদেশিদের যাতায়াত আছে নিয়মিত। পতেঙ্গা সৈকতে রয়েছে তিনটি, সিটি গেইট এলাকায় রয়েছে দুইটি, ইপিজেডকে ঘিরে বন্দরটিলা ও দক্ষিণ হালিশহরে রয়েছে তিনটি অঘোষিত ক্যাসিনো

এসব রেস্ট ও গেস্টহাউসে বারের কোন লাইসেন্স নেই। যারা নিয়মিত মদ পান করেন তাদেরও লাইসেন্স নেই। সাগরে চোরাই পথে আসা বিদেশি মদ, বিয়ারের বড় চালান আসে এসব ক্যাসিনোতে। জানা যায়, নিয়মিত জমজমাট এসব অবৈধ জুয়ার আসরগুলো। তবে বুধবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার ফকিরের পুল ইয়ংম্যানস ক্লাবে যুবলীগ নেতা খালেদের ক্যাসিনোতে র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানের খবরে চট্টগ্রামের ক্যাসিনোগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পাওয়ার পর অনেকে নীরবে ক্যাসিনো ত্যাগ করে। সন্ধ্যার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় অবৈধ অবৈধ রেস্ট ও গেস্টহাউসের রমরমা কার্যক্রম। মালিকদের অনেকে বাসাবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। এসব রেস্টহাউসে স্টাফ ছাড়া কাউকেই দেখা যায় না। এর পাশাপাশি নগরীর পতেঙ্গা সৈকত, ফয়’স লেকসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা ছোটখাটো জুয়ার আসরগুলো ছিল ফাঁকা। চরম আতঙ্কে রয়েছে এসব অবৈধ কারবারে জড়িত ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাইব্রিড নেতাকর্মীরা। ঢাকার অভিযানের পর চট্টগ্রামের প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। এ ধরনের অপকর্মের আখড়াগুলোর তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে।



 

Show all comments
  • Kabeer Ahmed ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    অপেক্ষা করেন সব ক্যাসিনোকে সরকার বৈধতার সুযোগ দিবে। তখন যুবলীগের লোকজনই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদন পাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল গোফরান সেলিম ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    এখন এ অবস্হা ক্ষমতা হারায় লে কি হবে সোনার ছেলেদের!!
    Total Reply(0) Reply
  • Jast You ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    প্রথমে বাংলাদেশ থেকে এই জানোয়ার লীগকে উত্খাত করতে হবে তাহলে এই দেশটা ঠিক হবে.......
    Total Reply(0) Reply
  • Ali Akbar ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    ক্যাসিনিওর আড়ালে সম্রাট ও খালেদ কোন আকাম প্রধানমন্ত্রীর নলেজে গেছে । তাই হয়ত এই দুইজনকে সাইজ করতে এই খেলা ...
    Total Reply(0) Reply
  • Raguan Rony ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    বিশ্বাস ধরে রাখার যোগ্যতা সবার থাকে না,, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগকে,,বিশ্বাস করে নেতা বানিয়ে ছিলো বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বসেরা ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার স্যার আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Khayrul Kobir ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    প্রত্যেক শহরে বা এলাকায় রিগুলার অভিযান চালানো হলে, অনেক খারাপ কাজ কমে আসতো, আর আমাদের সমাজ হত অনেক প্রাতৃিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত, যাহা আমাদের রব আজাব হিসাবে সমাজ পাঠান।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আতঙ্কে

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ