পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
পুঁজিবাজারের চলমান মন্দা অবস্থায় একদিকে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা, অন্যদিকে দুর্দিন নেমে এসেছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে। খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউস। ফলে চাকরি হারানোর আতঙ্ক ভর করছে হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। মালিকরা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে বাধ্য হয়ে কর্মী ছাটাই করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেনদেন থেকে পাওয়া কমিশনের ওপর ভর করেই মূলত ব্রোকারেজ হাউসগুলো চলে। কিন্তু পুঁজিবাজারের চলমান মন্দায় লেনদেন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে লেনদেন থেকে পাওয়া কমিশনে মুনাফা তো দূরের কথা উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ব্রোকারেজ হাউসগুলো পরিচালনা করতে মালিকরা বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে রয়েছেন। হাউসগুলো অবশ্যই তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করবে। সুতরাং তাদের ব্যয় হ্রাস করতে হবে। প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিছু কর্মী হ্রাস করতে হতে পারে।
ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১০ সালের মহাধসের পর পুঁজিবাজারে যে মন্দাভাব দেখা দেয় তা এখনও কাটেনি। বরং দিন যত যাচ্ছে বাজার তত তলানিতে ঠেকছে। এ পরিস্থিতিতে সবার মধ্যেই চাকরি হারানোর আতঙ্ক রয়েছে। কারণ এটা স্বাভাবিক যে, মালিকরা বছরের পর বছর ধরে লোকসানের ভার বহন করবেন না।
তাদের মতে, ২০১০ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হতো। সেই লেনদেন এখন ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। এ লেনদেন থেকে যে কমিশন পাওয়া যায় তাতে ব্রোকারেজ হাউসের খরচের এক-তৃতীয়াংশের মতো উঠে আসে। অর্থাৎ মাসে ব্রোকারেজ হাউসের মালিককে প্রায় ৭০ শতাংশের মতো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
পার্কওয়ে সিকিউরিটিজের এক কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজার যখন ভালো ছিল মালিক আমাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতেন। কিন্তু এখন বাজারের যে দশা তাতে মালিকের পক্ষে হাউস চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এটা আমরা সবাই বুঝি। মালিক কিছু বলছেন না, কিন্তু হাউসের প্রায় সবার মধ্যেই চাকরি হারানোর একধরনের আশঙ্কা আছে। মালিক কতদিন এভাবে লোকসান টানবেন?
শাকিল রিজভী স্টকের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজার যখন ভালো ছিল আমাদের হাউস বিনিয়োগকারীদের পদচারণে ভরপুর থাকত। এখন প্রায় সময় বিনিয়োগকারীদের অভাবে হাউজ হাহাকার করে। নয় বছরে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে না পরা দুঃখজনক। পুঁজিবাজারে যে দুরবস্থা বিরাজ করছে, তাতে কার চাকরি কতদিন টেকে বলা মুশকিল। প্রতিনিয়ত চাকরি হারানোর আতঙ্কে থাকি।
এদিকে দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারে দুরবস্থা বিরাজ করলেও সম্প্রতি বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারল্য সংকট কাটাতে বাড়ানো হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর)। রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে অর্থ সরবরাহের সুযোগও দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি ব্যাংক এ সুবিধাও গ্রহণ করেছে।
পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। বন্ড বিক্রি করে সোনালী ব্যাংক থেকে পাওয়া ২০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়াও বাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কাছে দুই হাজার কোটি টাকা চেয়েছে আইসিবি। এ টাকা পেলে তার পুরোটাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া ইউনিট ফান্ডের মাধ্যমে আইসিবিকে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ দিতে চাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতি ফেরাতে এ ধরনের একের পর এক পদক্ষেপ নেয়া হলেও তলানিতেই রয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজার।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, মন্দার পেছনে অনেক কিছুই থাকতে পারে, তবে এ মুহুর্তে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। তারা বাজার-বিমুখ হয়ে গেছেন। ফলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাজারে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলতি মাসে ১২ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে একদিনও ডিএসইর লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। ১২ দিনের মধ্যে ১০ দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। বাকি দুদিন লেনদেন ছিল ২০০ কোটি টাকার ঘরে। লেনদেনের এমন খরার মধ্যে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে। সেপ্টেম্বরের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা, যা ১৭ অক্টোবর লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫৯ হাজার ৩৩ কোটি টাকায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।