যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
চারদিকে ভ্যাপসা গরমই জানান দেয় ঋতু পরিবর্তন হয়েছে। আর এই গরমে শরীর প্রায়ই নিস্তেজ হয়ে আসে। এ সময় আপনাকে একটু স্বস্তি এনে দিতে পারে যে কোন ঠান্ডা পানীয়, হোক সে ফলের জুস অথবা শরবত। ছোট বড় সব শহরের ফুটপাত, অফিস আদালতের সামনে অর্থাৎ যেখানে লোকসমাগম বেশি এমন স্থানগুলোতে এই গরমে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের শরবত আর নানা জাতের চাটনী ইত্যাদি। তৃষ্ণার্ত পথচারীরা বাছ-বিচার না করেই পান করছে ফরমালিন ও সেকারিন মেশানো রং বেরঙের এই সব শরবত। ফলে নানা রকম পানিবাহিত পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। শুধু তাই নয়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আখের রস পান করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে পথচারিরা। অবশেষে ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিসসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। একেতো ভেজাল তার উপর অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন। সুন্দরভাবে পরিবেশনেরও কোন বালাই নেই। এরপরও খাচ্ছে মানুষ। সরেজমিনে দেখা, ফুটপাতের এসব খাবারের প্রতি ঝোঁক বেশি তরুণ প্রজন্ম ও নিম্ন আয়ের লোকজনের। সস্তা বলেই অবলীলায় তারা খেয়ে যাচ্ছেন ফুটপাতের এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার। কিভাবে এসব খাবার তৈরি হচ্ছে, রোগ বালাইয়ের আশংকা আছে কিনা সেদিকে কারো নজর নেই। প্রচন্ড গরমে তৃষ্ণা নিবারণ করতে সাধারণ মানুষ এসব অস্বাস্থ্যকর পানীয় পান করে। তবে এসব পানীয়তে কৃত্রিম রঙ এবং সেকারিন (কৃত্রিম চিনি) ব্যবহার করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি ঘুরে রাস্তায় বিক্রি হওয়া বিভিন্ন খাবারের এমন দৃশ্যই দেখা যায়। রাস্তার পাশে খোলা অবস্থায় এ ধরনের অস্থায়ী দোকানগুলোর খাবারে অহরহ পড়ছে ধূলোবালি। গরম শুরুর সাথে সাথে নগরীর প্রায় সকল ফুটপাতে এমনকি সড়কের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে শরবতের সাথে নানা রকম কাটা ফল, আইসক্রিম, চাটনী ও ফলের ভর্তা। তৃষ্ণা মেটাতে পথচারীরা নির্বিঘেœ এসব খাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, গরমে এসব খাবারের চাহিদা ও বিক্রি দুই-ই বেশি। স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নানা উপকরণ দিয়ে এসব খাবার তৈরি হচ্ছে। বিক্রিও হচ্ছে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এসব খাবারের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগসহ কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। রিকশাচালক থেকে শুরু করে পথচারী সকলেই স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে এ সকল খাবার গ্রহণ করছেন। নগরীর বিভিন্ন ফুটপাত ঘুরে দেখা গেল এ সকল দৃশ্য।
নগরীর রেলওয়ে ষ্টেশন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এবং ফুটপাতে খোলাবাজারে এ সকল নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি হচ্ছে। এসব আচার খাচ্ছেন পথচারী ট্রেন ও বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরা। শিশু ও তরুণ বয়সের ছেলে-মেয়েদের পছন্দের তালিকায় আছে আইসক্রিম। তবে ফল ভর্তা ও চাটনী ছাড়া অন্য খাবারে আগ্রহ নেই নারীদের। কলেজ পড়–য়া মেয়েদের পছন্দ চাটনী ও আচার। তেমনটাই জানালেন বাসের জন্য অপেক্ষমাণ কলেজ, বিশ্ববিদ্যলায়ে পড়–য়া ক’জন ছাত্র-ছাত্রী। আরো একটি বিষয় লক্ষণীয়- নানা জাতের আচার-ভর্তা ইত্যাদি যে সব ভ্যান গাড়ী রাস্তা দিয়ে চলাচল করে বা কোথাও দাড়িয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এদের ভ্যান গাড়ীর নাম্বার প্লেইট নেই। এগুলো নাকি বিশেষ ব্যবস্থার অধীন অর্থাৎ মাসিক চাঁদার বিনিময়ে ব্যবসায়ীরা করে যাচ্ছে এসব ব্যবসা।
সিলেট নগরীর কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে কলেজ ছাত্র আব্দুল্লাহ খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শসা খাচ্ছেন। এসব ধূলো-বালি মিশ্রিত খাবার কেন খাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বলেন তা দিয়ে আপনি কি করবেন? সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে রাগ নামিয়ে কিছুটা মিষ্টি সূরে বলে, যা গরম পড়েছে! শসা খেলে পানির তৃষ্ণাও মিটবে, শরীরটাও ভালো থাকবে। পাশেই আনারস খাচ্ছেন এক রিকশাচালক। যানবাহন চলাচলের কারণে প্রচন্ড ধুলোবালি উড়ছে তার উপর নোংরা পরিবেশে ধূলাযুক্ত খাবার কেন খাচ্ছেন প্রশ্ন করতেই তার সহজ উত্তর, ভাই গরমে যা পাই তাই ভাল। গরীরের অসুখ-বিসুখ হয়না। এমন বক্তব্য অনেক রিকশাচালক ও পথচারীর। নগরীর বিভিন্ন ফুটপাত ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের ও রঙের শরবতের পাশাপাশি শসা, পেয়ারা ও আনারস কেটে রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে বিক্রি করছে কিছু শ্রমজীবী লোক। কষ্ট অনেকটা কম বলেই তারা এ পেশায় জড়িত। না ধুয়ে বা অনেক সময় সঙ্গে রাখা বালতিতে চুবিয়ে প্লেট ও গøাসে এসব খাবার পরিবেশিত হচ্ছে। বিশেষ করে কাটার পরে মাছি, ধূলো-বালি পড়ে তা নষ্ট হয়ে যায়। এরপরও এ সকল খাবার গ্রহণ করছে মানুষ। এক আইনজীবীর গাড়ি চালান কাশেম। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় তাকে কোর্ট এলাকায় থাকতে হয়। তার প্রতিদিন এক গøাস শরবত চাই-ই। কী দিয়ে এবং কিভাবে ফুটপাতে শরবত তৈরি হয়-জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আগে খেয়াল করিনিতো! নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আনারস বিক্রেতা বলেন, ভাই পেটের দায়ে কত কিছুই করতে হয়। একটা আনারস কাটলে বিক্রি করতে ১-২ ঘন্টা সময় লাগে। এর মধ্যে ঐ তরমুজ ধূলোবালিতে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর বিক্রি করতে হয়। ফুটপাতে যারা আইসক্রিম বিক্রি করে তাদের কাছে পাওয়া গেল আরেক দারুণ খবর। জনৈক আইসক্রিম বিক্রেতা কানে কানে বললো ভাই এ সকল আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে যে সকল বরফ ব্যবহার করা হয় তা মাছের জন্য তৈরি বরফ। অবশ্য ব্যবহারের আগে পানি দিয়ে ধুয়ে নেন মালিকরা।
খোলা রাস্তায় এভাবে যত্রতত্র অস্বাস্থ্যকর শরবত ও ফল বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক সাহানা ফেরদৌস চৌধুরী জানান, রাস্তার পাশের ধূলোবালিযুক্ত খাবার খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, ফুড পয়জনিং, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ হতে পারে। তিনি বলেন, মান বজায় রেখে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার পরিবেশন করলে অন্যান্য দেশের মত এদেশের ফুটপাতের খাবারও হতে পারে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের জন্য ভোগ্য ও উপভোগ্য। তবে এসব দোকানের খাবারের মান নির্ণয় কিংবা ভেজাল প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটাই উদাসীন। সিটি কর্পোরেশন মাঝে মাঝে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করলেও এসব দোকানের খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে জানা যায় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগের কিছুলোকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা, দুর্নীতি ও পুঁজিবাদি মনোভাবের কারণে অসহনীয় গরম থেকে একটু শ্রান্তির পরশ পেতে ফুটপাতে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ সকল খাবার খেয়ে প্রতিনিয়তই অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা না বুঝে এ সকল খাবার খেয়ে পেট ব্যথা, ডায়ারিয়াসহ নানা রেগে ভুগছে। বয়স্করাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানালেন চিকিৎসক নাজমুস সাকিব। ফুটপাতে এ সকল নোংরা খাবারের বিষয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন ও সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করছেন আপামর জনসাধারণ।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।