মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা যখন তীব্র, তখনই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং মন্তব্য করলেন যে ভারত তার প্রথম ব্যবহার না করার পরমাণু নীতি পরিবর্তন করার কথা বিবেচনা করছে এবং তা নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। পাকিস্তানের ডিজি আইএসপিআর ও বেশ কয়েকজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ যথার্থভাবেই এর সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের পরমাণু রণডঙ্কা বাজানোর বিষয়টির প্রতি নজর দেয়ার জন্য বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও পরমাণু বিশেষজ্ঞরা এটিকে নীতিগত অবস্থান বিবেচনা করলেও পাকিস্তানের সামরিক ও পরমাণু এস্টাবলিশমেন্ট কখনো ভারতের প্রথমে ব্যবহার নয় মতবাদটি গুরুত্ব দিয়ে নেয়নি বা এর ভিত্তিতে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রদান করার পরিকল্পনা করেনি। প্রথমে ব্যবহার নয় নীতিটি গ্রহণ করলে ভারতের সাথে প্রচলিত যুদ্ধে পাকিস্তান খুবই নাজুক অবস্থায় পড়ে যাবে। অধিকন্তু, এই বাস্তবতাও পাকিস্তান এড়িয়ে যেতে পারে না যে ভারত আনায়াসেই তার প্রথম ব্যবহার নীতি থেকে সরে যেতে পারে, সেকেন্ড স্ট্রাইক মতবাদ প্রয়োগ করতে পারে। তাছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যদি জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তবে পরিস্থিতি কী হবে সেটাও উপেক্ষা করা যায় না। পাকিস্তান জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চুক্তিতে সই করেছে। এতে এ ব্যাপারে পাকিস্তানের নীতি প্রতিফলিত হয়েছে।
এতে বোঝা যাচ্ছে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের কোনো সামরিক মূল্য নেই, এটি পাকিস্তানের পরমাণু মতবাদ বা এর বর্তমান ও ভবিষ্যত মোতায়েনের ওপর কোনো প্রভাবও ফেলবে না। তবে অত্যন্ত দায়িত্বহীন এই মন্তব্যে বিজেপির ক্ষমতাসীন জান্তার বর্তমান মানসিক অবস্থাই ফুটে উঠেছে। তাছাড়া তিক্ত প্রতিপক্ষের সাথে বিশেষ করে তীব্র উত্তেজনার সময় পরমাণু সম্পর্ক কীভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হয়, সে ব্যাপারে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ধারণায় ঘাটতির বিষয়টিও এতে প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ভারত সরকার কিভাবে পরমাণু হামলা চালানোর পর পাকিস্তানের কাছ থেকে কোনো ধরনের জবাব না পাওয়ার আশা করতে পারে? পাকিস্তানের অখন্ডতা যখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, যেমনটি ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বিপুলসংখ্যক সৈন্য সীমান্তে মোতায়েন করেছিল ভারত, তখন পাকিস্তান প্রচলিত ও পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতেই পারে। ওই মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে ১৯ বছর ধরে পাকিস্তান ও ভারত তাদের পরমাণু সামর্থ্য আরো উন্নত ও আধুনিক করেছে। এ কারণে বর্তমান কাশ্মীর সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে পরমাণু কার্ডের ব্যবহার নিয়ে ভারতীয় নেতৃত্ব যে মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত দায়িত্বহীন।
আঞ্চলিক উত্তেজনা আরো বাড়ে এমন কোনো মন্তব্য করা বা সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে সংযম প্রদর্শন করা উচিত ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের। এ সময়ে ভারতের প্রচলিত বা পরমাণু শক্তির যেকোনো আক্রমণতাত্মক মোতায়েন বা পদক্ষেপ পাকিস্তানের কাছ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান স্পষ্টভাবে তা বলেছেন এবং সেনাপ্রধানও তা জানিয়েছেন।
ভারত যদি মনে করে থাকে যে প্রচলিত অস্ত্রে বিপুলভাবে এগিয়ে থাকার সুবাদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য পাবে, তবে তাতে তারা ভুল করবে। বারবার দেখা গেছে এবং সা¤প্রতিক সময়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ভারতের প্রচলিত সংখ্যাগত সামরিক সুবিধা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী নিস্ক্রিয় করে ফেলেছে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী অনেক বছরের যুদ্ধে কঠোর হয়েছে, তাদের পেশাগত দক্ষতাও ব্যাপক।
আর পাকিস্তানের পরমাণু নীতিতে এমনকি প্রচলিত যুদ্ধেও প্রথম ব্যবহার করার বিষয়টি রয়েছে। পাকিস্তানের তুলনামূলক সীমিত কৌশলগত গভীরতার বিষয়টি বিবেচনা করলে এই নীতিটি বোধগম্য হবে। এটি কোনো ধরনের হঠকারি কর্মকান্ড গ্রহণ থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে বিরত রেখেছে, ভবিষ্যতেও তা করবে বলে আশা করা যায়। এটি ন্যাটো ও ফরাসি পরমাণু মতবাদের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ইসলাবাদের বিশ্বাসযোগ্য পরমাণু অস্ত্রভান্ডার তার ভীতিপ্রদর্শন সামর্থ্য বাড়িয়েছে। ফলে আগাম হামলা চালিয়ে সহজেই কিছু করে ফেলার কথা যদি চিন্তা করে ভারত, তবে তা হবে বড় ধরনের ভুল। অধিকন্তু, পাকিস্তানের পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ও সম্পদগুলো নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, যথাযথভাবে মজুত ও সংরক্ষিত রয়েছে। এই শক্তি প্রতিশোধমূলক কাজে অত্যন্ত কার্যকর। এই বাস্তবতা নিয়ে ভারতীয় নেতৃত্বের উচিত হবে তাদের অবস্থান নতুন করে চিন্তা করা ও সংযত আচরণ করা। বর্তমান যুদ্ধ উন্মাদনার অবসান হওয়া উচিত।
পাকিস্তানের অঘোষিত পরমাণু মতবাদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি প্রচলিত ও পরমাণু শক্তির সাথে একীভূত রয়েছে। অর্থাৎ ভারত যাতে প্রচলিত যুদ্ধে সুবিধা করতে না পারে সেই লক্ষ্যে এই নীতি প্রণীত। অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে দ্রুত তা পরমাণু যুদ্ধে পরিণত হয়ে যেতে পারে। ভারত মতবাদগত দিক থেকে অনেক কিছু প্রকাশ করলেও পরমাণু শক্তি ব্যবহারের সাংগঠনিক দিক থেকে সে এখনো অস্পষ্টতায় ভুগছে।
ভারত যদি আক্রমণ করে তবে পাকিস্তানের প্রচলিত বাহিনী বাইরের শক্তিগুলোর কূটনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করা ও তা পরমাণু বিনিময়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তা ঠেকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।
ইসরাইলের কাছ থেকে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কিনে ভারত ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। আইনগত বাধার কারণে এই প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের কাছ থেকে পেত না। তবে পাকিস্তানও তার শক্তি উন্নয়নে প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। ক্লাসিক ৫ পরমাণু শক্তির মতো পাকিস্তান ও ভারতও পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপের জন্য বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল।
চীনা ফ্যাক্টরকে বিবেচনা করতে হবে বলেই ভারত সবসময় পাকিস্তানের সাথে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত মুখোমুখি হতে বিরোধিতা করে আসছে। অন্যদিকে, চীন তার প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবছে যুক্তরাষ্ট্রকে। ভারতের সাথে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এবং দুই দেশের সম্পর্ক মারাত্মক বৈরী হওয়ায় পাকিস্তানকে প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভাব্য ও অর্থনৈতিকভাবে টেকসই কোনো প্রতিরোধব্যবস্থা বিকাশ ও বজায় রাখতেই হবে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।