পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন কাশ্মীরি আহত হয়েছেন। শনিবার কিছু অঞ্চলে কারফিউ শিথিল হওয়ার পর শ্রীনগরে একাধিক বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যবস্থা নিলে কয়েকজন আহত হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান ক্রনিকলের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। দ্ইু পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, শুক্রবার বিকেল থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। শ্রীনগরের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে তারা ক্রমাগত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ব্যাপক শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছেন। পাথর ছোড়ার মত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের কর্মকর্তারা এখনো কোনো তথ্য দেয়নি যাতে স্পষ্ট হয় এখন পর্যন্ত পাথর ছোঁরা ও এতে আহতের সংখ্যা কত। কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ শ্রীনগরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দাবি করেছে, এই অঞ্চলে ‘শান্তিপূর্ন’ অবস্থা বিরাজ করছে। তবে তারা শ্রীনগরে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনার বিষয়ে অবগত কিনা তা স্পষ্ট করা হয়নি। এদিকে কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও কার্যত এখনো অবরুদ্ধ হয়ে আছে গোটা উপত্যকা। শনিবার কর্তৃপক্ষ জানায়, সমগ্র জম্মুতে এবং কাশ্মীরের বেশ কিছু এলাকায় পরিষেবাগুলো চালু হয়েছে। কিন্তু এখনো সেখানকার বেশিরভাগ শহুরে এলাকাই এখনো অবরুদ্ধ হয়ে আছে। সেখানে চালু হয়নি ইন্টারনেট কিংবা টেলিফোন সেবা। একইসঙ্গে, এখনো ছেরে দেয়া হয়নি কাশ্মীরের আটক অর্ধসহস্র নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে থেকে অনেককেই অন্য রাজ্যের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার হরি মহারাজা সিং হাসপাতালের দুই কর্মকর্তা জানান, শ্রীনগরের সৌরা ও চাদুরা জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর পেলেটে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুজন। হাসপাতালটি আহতদের তথ্য সংগ্রহ করছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম গোলাম রাসুল। তিনি আলিকাদাল এলাকায় একটি দোকান পরিচালনা করতেন। হাসপাতালে তার সন্তান নাসির জানান, তার পিতাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কমপক্ষে ২০টি পেলেটবিদ্ধ করে। শ্রীনগরের বেমিনা এলাকায় প্রায় এক ডজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন যে, সেখানকার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। এসময় তারা কমপক্ষে ৬ জনকে ধরে নিয়ে যায় ও বাড়িগুলো রড দিয়ে পিটিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করে। এর আগে সকাল বেলা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর স্থানীয়দের পাথর নিক্ষেপের তুচ্ছ ঘটনা ঘটে। এদিকে কাশ্মীরজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা বাছবিচারহীনভাবে গ্রেপ্তার করতে শুরু করেছে সেখানে। শাহিদা নামের এক গৃহিনী জানান, তিনি ও তার বর রিয়াজ আহমেদ দার বাড়ির নিচতালায় বসে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় নিরাপত্তাবাহিনীর অন্তত ১৫ সদস্য তাদের বাড়িতে ঢুকে রিয়াজ আহমেদকে নিয়ে চলে যায়। এসময় তারা বাড়ির জানালা ভাঙচুর করে। কান্নাজরিত কন্ঠে শাহিদা বলেন, আমি আমার ২ মাস বয়সী শিশুকে আগলে রাখলেও তারা রিয়াজকে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে। সে ব্যবসা করে, কখনো পাথর ছোরেনি। ১৮ বছর বয়সী আরেক কিশোর সিমরান শাহনেওয়াজের পায়ে ব্যান্ডেজ দেখা যায়। সে জানায়, একজন পুলিশ কর্মকর্তা রাস্তায় তাকে লোহার দন্ড দিয়ে নির্দয়ের মত আঘাত করেছে। গত ৩০ বছর ধরে কাশ্মীরে নানা ধরণের নির্যাতন চালিয়ে আসছে ভারতীয় বাহিনী। এই সময়ের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে কমপক্ষে অর্ধলক্ষ কাশ্মীরিকে। বিশ্লেষকদের ধারণা, মোদি সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্ত কাশ্মীরকে আরো উত্তপ্ত করে তুলবে এবং তাদের সশস্ত্র আন্দোলনে আরো জ্বালানী সরবরাহ করবে। যদিও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দাবি, ৩৭০ ধারা বাতিল কাশ্মীরের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। কিন্তু কাশ্মীরিদের রয়েছে মোদি সরকারের প্রতি তীব্র অবিশ্বাস। কাশ্মীরিদের না জানিয়েই তাদের বিশেষ অধিকার বাতিলের ঘোষণা আসার পরই এর বিরুদ্ধে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা উপত্যকা। এছাড়া, নতুন এ সংকট উত্তাপ ছড়িয়েছে সীমান্তের ওপারেও। লাইন অব কন্ট্রোলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বিরাজ করছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঘোষণা দিয়েছে নির্যাতিত কাশ্মীরিদের পক্ষে থাকার। শনিবার পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে এক ভারতীয় সেনা নিহত হয়। গত সপ্তাহে সীমান্ত যুদ্ধে আরো ৫ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিলো পাকিস্তান। রয়টার্স, ডেকান ক্রনিকল,এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।