পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার এবং জন্মু কাশ্মিরকে দ্বি-খন্ডিত করে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার মধ্য দিয়ে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে এক বিভীষিকাময় অবস্থা বিরাজ করছে। সীমান্তে ভারতের অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ এবং আজাদ কাশ্মিরের নিরাপত্তা প্রশ্নে পাকিস্তানের দৃঢ় অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ইতিমধ্যে পাক-ভারত সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা দেখা দিয়েছে। সীমান্তে গোলাগুলিতে গত কয়েকদিনে উভয় পক্ষে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মত কাশ্মির ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে। বৈঠকে কাশ্মিরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে ভারত ও পাকিস্তানকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পৌছাতে অনানুষ্ঠানিক আহ্বান জানানো হয়েছে। ভারত বরাবরই কাশ্মির ইস্যুকে তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দাবী করলেও নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সমাধানের আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে কাশ্মির ইস্যুর আন্তর্জাতিক বাস্তবতারই প্রতিফলন ঘটল। চীনের পক্ষ থেকে কাশ্মিরে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এমনকি ভারতের পুরনো বন্ধু রাশিয়ার প্রতিনিধিও কাশ্মির ইস্যুকে দ্বিপাক্ষিক ইস্যু বলে মন্তব্য করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন। আগস্টের শুরু থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের মানুষ কার্যত অবরুদ্ধ। ভারতীয় সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর লাখ লাখ সদস্যের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও কাশ্মিরি জনগণকে কোথাও কোথাও প্রতিবাদে ফুঁসে উঠতে দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কাশ্মির প্রশ্নে ভারতের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্ত ঘিরে এক চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।
কাশ্মির পরিস্থিতিকে ঘিরে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মধ্যে এক প্রকার নতুন পোলারাইজেশন দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি দ্বিপাক্ষিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য রাষ্ট্রই একমত। কিন্তু ভারত বিষয়টিকে আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবী করে নিজ অবস্থানে অটুট থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মিরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ভারতীয় রাজনৈতিক মহলের উস্কানিমূলক বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় সরকারের নীতিগত কৌশল যাই হোক, কাশ্মিরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও মানবাধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের অবস্থান বেশ স্পষ্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে বাংলাদেশের সরকার এবং সাধারণ মানুষ কাশ্মির প্রশ্নে উত্তেজনা ও যুদ্ধের পক্ষপাতি নয়। আন্তর্জাতিক কনভেনশান, জাতিসংঘের রেজুলেশন এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে কাশ্মিরের স্বায়ত্ব শাসন ও বিশেষ মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার পক্ষে এ দেশের মানুষ। তবে যে যাই বলুক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত ও ধূমায়িত হয়ে উঠছে। কাশ্মির প্রশ্নে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ বেঁধে গেলে বাংলাদেশসহ পুরো উপমহাদেশে তার চরম প্রভাব পড়বে। এ অঞ্চলের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ তার নিকটতম প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে যেমন অঙ্গিকারাবদ্ধ, তেমনি কাশ্মিরের মজলুম জনগণের অধিকারের পক্ষে এ দেশের সাধারণ মানুষের সংহতি ও সহমর্মিতার বিষয়টিকেও অস্বীকার করা যাবে না। কাশ্মিরে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং কার্ফিউ প্রত্যাহার ও যোগাযোগরে সব ব্যবস্থা বন্ধ রাখার প্রশ্নে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ইসলামি সম্মেলন সংস্থা(ওআইসি)র বিবৃতি ও আহ্বানের সাথে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অবস্থান সঙ্গতিপূর্ণ।
কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ ঢাকায় আসছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর হলেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে তিনি ইতিপূর্বে ঢাকা সফর করেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জনমতের বিষয়ে জয়শঙ্করের ধারণা আছে বলেই ধরে নেয়া যায়। বিজেপি সরকারের সাম্প্রদায়িক মনোভাব এবং নানা বিষয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরও দুই দেশের সরকারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কখনো চিড় ধরেনি। দশকের পর দশক ধরে তিস্তার পানি বন্টনের প্রশ্নে বঞ্চনার শিকার হওয়ার পরও গত এক দশকে বাংলাদেশ ভারতকে তাদের প্রত্যাশিত সবকিছুই দিয়েছে। উত্তরের রাজ্যগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন এবং বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের নামে কার্যত বিনাশুল্কের করিডর ব্যবহারের অভাবনীয় সুযোগ পাচ্ছে। বিনিময়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভারতের কাছ থেকে কোনো দিক থেকেই কোনো ছাড় পায়নি বাংলাদেশ। উপরন্তু পাটের উপর এন্টি ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপসহ তৈরী পোশাক খাতের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। সেই সাথে বাংলাদেশের কাছে অন্যায্য দাবীর বহরও বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি আগরতলা বিমানবন্দর সম্প্রসারণে বাংলাদেশের কাছে জমির দাবী তুলেছে ভারত। জয়শঙ্করের এই সফরে আগামী অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য দিল্লী সফরের বিষয়াদি নিরুপন, কাশ্মির ইস্যুতে বাংলাদেশকে পাশে রাখাসহ বিমানবন্দরের জন্য জমি এবং ত্রিপুরার চা আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবী তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। এ ধরনের প্রস্তাবে সাড়া দিলে বাংলাদেশের চা বাগানগুলো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিজ দেশের স্বার্থে ভারত সরকারের প্রতিনিধিরা যে আবদারই করুন না কেন, বাংলাদেশকে তার ন্যায্য দাবী-দাওয়ার প্রশ্নে কোন ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষত বিমানবন্দরের জন্য বাংলাদেশের জমি বরাদ্দের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতকে মিয়ানমারের সাথে হাত মেলাতে দেখা গেছে, সেখানে কাশ্মির ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকা ওআইসি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থানের বাইরে থাকতে পারে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, তিস্তার পানি বন্টনসহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ভারতের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।