গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদের চতুর্থ দিন গতকাল শুক্রবার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল ঈদের উৎসবমুখর পরিবেশ। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে নগরীর বাসিন্দারা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় জমান। ঈদ উপলক্ষে নতুনরূপে সজ্জিত বিনোদন কেন্দ্রে শিশু-কিশোরেরা নিজেদেরও আরো রঙিন করে তুলেছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন শিশুপার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, ধানমন্ডি লেক, চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, শ্যামলী শিশু মেলা কিংবা ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক সবখানেই ছিলো উপচেপড়া ভিড়। নতুন পোশাকে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ এসব বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে সময় কাটিয়েছেন।
শরতের শুরুতেই মেঘভাঙ্গা হালকা রোদ ও আলো ছায়ার খেলা উপেক্ষা করে সকাল থেকেই শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঢল নামে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রেগুলোতে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ছাড়াও খোলা জায়গা, মাঠ, পার্ক, লেক ছিল লোকে লোকারণ্য। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, আফতাব নগর, হাতিরঝিল, মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো এলাকায় ভিড় জমান অগণিত বিনোদনপ্রেমী মানুষ। অনেকে পরিবারের সবাই মিলে অনেকে আবার বন্ধুবান্ধব নিয়ে দিনভর মেতে থাকেন আডডা গল্পগুজবে। শহরের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেতে ফাঁকা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর সুখ অনুভব করছেন ঈদের সময় ঢাকায় থেকে যাওয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।
হাতিরঝিলে মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদের দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এখানে জমে মানুষের মেলা। ঈদের দিন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করতে পেরেছে এখানকার নান্দনিক সৌন্দর্য। তবে বিকেলে আকাশে ঘনকালো মেঘের ঘনঘটার কারণে সবাইকে ত্যাগ করতে হয় এ এলাকা। তবে ঈদের পর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের ঢল অব্যাহত রয়েছে এখানে।
ঢাকার বিভিন্ন দূর এলাকা থেকেও এখানে ছুটে আসে মানুষ। রাস্তা ফাঁকা থাকায় সারা ঢাকার মানুষ সহজেই আসতে পেরেছেন এখানে। বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের ঢল উপলক্ষে সেসব এলাকায় জমে ওঠে বিভিন্ন পণ্যের একধরনের মেলা। শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, ছোট-বড় সবার বিভিন্ন খাবারের পসরা বসেছে সব বিনোদন কেন্দ্রের আশপাশে।
কুড়িল ফ্লাইওভার, ৩০০ ফিট রাস্তা, জিয়া কলোনি, উত্তরা দিয়াবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ভিড় অব্যাহত ছিল গতকাল পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বিনোদন স্পটেও মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের খবর পাওয়া গেছে।
তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী তো বটেই, অনেক বয়স্ক মানুষদেরও দেখা গেছে ঈদের চতুর্থ দিন যানজটমুক্ত ফাঁকা রাস্তার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্কে ঘুরতে এসেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কেউ কেউ পরিবারের সবাইকে নিয়ে মনের আনন্দে সময় কাটিয়েছেন নানা প্রজাতির বৃক্ষে সাজানো রমনা পার্ক ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
এদিকে ঈদের চতুর্থ দিন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে পুরো এলাকা ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কড়া নজরদারিতে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সামাল দিতে ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকের পুলিশবাহিনীর সদস্যরা ছিলেন সদা প্রস্তুত। শ্যামলীর শিশুমেলাতেও ছিল উপচে ভিড়। এই পার্কেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই সব বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। লোকে লোকারণ্য ছিল ঢাকা চিড়িয়াখানাও। চিড়িয়াখানায় হাজার হাজার দর্শনার্থী এসেছেন পশুপাখি দেখার জন্য।
মিরপুর চিড়িয়াখানার কিউরেটর বলেন, সকাল থেকে দর্শনার্থীদের আগমন শুরু হয়েছে। বাড়তি ভিড় সামলাতে ও দর্শনার্থীদের ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণ সময়ে ঢাকা চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু ঈদের দিনগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে যায়। গতকাল দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখের বেশি। আজ আরও বেশি হবে বলে তিনি জানান।
বছরের অন্য সময়ে রাজধানীর প্রেক্ষাগৃহগুলোতে দর্শক উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় থাকলেও ঈদের ছুটিতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনে কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কের বøক বøাস্টার সিনেমাসহ রাজধানীর সব প্রেক্ষাগৃহে ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শনীতে হাউসফুল যাচ্ছে। শ্যামলীতে শিশুদের বিনোদনের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত শিশু মেলায়ও জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রবেশমুখে দর্শনার্থীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে টিকিট বিক্রেতাদের। অল্প পরিসরে সেখানে অনেক রাইডারের ব্যবস্থা থাকায় শিশুদের প্রিয় পার্কের তালিকায় রয়েছে এটি।
শ্যামলীর শিশু মেলা পার্কের ব্যবস্থাপক নূরুল হুদা মুকুল বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকায়, পার্কে দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে। এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যাও বেশি হয়েছে।
মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গতকাল দুপুরে চিড়িয়াখান গেইটে দেখা গেছে, দীর্ঘ লাইন দিয়ে মানুষ ভেতরে প্রবেশ করছে। ঘুরতে আসা কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সঙ্গে কথা হয় মিরপুর চিড়িয়াখানায়। তাদের একজন জিনিয়া পারভির বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে চিড়িয়াখানা এসেছি। অনেকদিন ঢাকায় থাকলেও বহুদিন এখানে আসা হয়নি। পরিবারের সঙ্গে ছোট বেলায় আসেছি। কিন্তু তখন হই হুল্লুড় করতে পারিনি। এবার পরিকল্পনা করে আসেছি মজা করবো।
চিড়িয়াখানার ভেতরে হকারদের আনাগোনা এবং তাদের পণ্য কিনতে বাধ্য করার চিত্র চোখে পড়েছে। কোথাও যুগল দেখলে তাদের সামনে নানা ফন্দি করে কিনতে বাধ্য করে। দর্শনার্থীদের এই ভোগান্তি থেকে এবারও রক্ষা করতে পারেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানা দেখে বোটানিকাল গার্ডেনের প্রবেশ মুখেও ভিড় ছিল বিকেল পর্যন্ত। বোটানিক্যাল গার্ডেনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আহমদ কামাল চৌধুরী নামের এক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, সময়ের অভাবে তেমন একটা ঘুরতে বের হওয়া সম্ভব হয় না। তাই ঈদ উপলক্ষে আজ পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি।
পুরনো ঢাকার লালবাগের কেল্লায়ও ছিল উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকেই আসতে থাকে দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সরজমিন দেখা গেছে, প্রচন্ড ভিড় থাকায় যারা টিকিট বিক্রির দায়িত্বে আছেন তারা অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছেন। গেট দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই পরী বিবির মাজার। দর্শনার্থীরা প্রথমেই মাজারের সামনে গিয়ে দেখছেন কবরটি। কেউ বসে সময় কাটাচ্ছেন। শিশুরা শুকনো ফোয়ারার নিচে নেমে উল্লাস করছে। তারপর ছুটছেন পাশের দক্ষিণ দিকের দুর্গে। নানা বয়সী দর্শনার্থী দুর্গে উঠছেন আর ঘুরে ঘুরে দেখছেন। এরপর ছুটছেন কেল্লার দরবার হল ও হাম্মামখানায়। দরবার ঘরের নিচতলায় হাম্মামখানায় প্রচন্ড ভিড় ছিল। মোগল স্থাপত্যের নিদর্শনটি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করায় সেই আমলের বিভিন্ন হালকা-ভারি অস্ত্র, যুদ্ধের পোশাক, গোসলখানা ও ব্যবহার্য তৈজসপত্র ঘুরে-ফিরে দেখছিলেন দর্শনার্থীরা।
রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দনপার্ক এবং গাজীপুরের সাফারিপার্কেও উপচেপড়া ভিড় হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।