নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
তার আবির্ভাব হ্যালীর ধুমকেতূর মতো, গভীর দাগ কেটেছেন হৃদয় আকাশে, শেষটায় যা রূপ নিতে চলেছে বিষাদেভরা এক ক্ষতে! মাশরাফি বিন মুর্তজা- বাংলাদেশ ক্রিকেটের জ্বলজ্বলে এক তারা, এক উপাখ্যান, এক লড়াকু সৈনিকের নাম। বয়স আর চোটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করেও দেখিয়ে চলেছেন পথ, বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বসিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। খেলোয়াড়ী, মানুষী আর নেতৃত্বগুণে দেশসেরা পেসার থেকে হয়ে উঠেছেন দেশসেরা অধিনায়ক। সেই মাশরাফিই এখন আদর্শ বিদায়মঞ্চের পথ চেয়ে।
আনুষ্ঠানিক বিদায় না বললেও চোটের কারণে টেস্ট থেকে দূরে সেই ২০০৯ সাল থেকেই। একরকম অভিমান নিয়ে বিদায় বলেছিলেন টি-টোয়েন্টিকেও, সেটিও শ্রীলঙ্কায়। ফুলেল বিদায়মঞ্চ সাজিয়ে এমন এক ক্রিকেটারে বিদায় স্মরণীয় করে রাখতে বিসিবি আয়োজন করছে জিম্বাবুয়ে সিরিজ! আইসিসির সদস্যপদ স্থগিত হওয়ার পর যাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গতিপথই যেখানে অনিশ্চিত! বোর্ডের পরিচালনা ও প্রশাসনে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে গত ১৯ জুলাই আইসিসি জিম্বাবুয়ের সদস্যপদ স্থগিত করে। মূলত আইসিসির অনুদানের অর্থের যথোপযুক্ত ব্যবহার না হওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি। স্থগিতাদেশের আওতায় আছে আইসিসির অনুদান আপাতত বন্ধ রাখা ও জিম্বাবুয়ের কোনো দল আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে না পারা। তবে বাংলাদেশে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বা অন্য টুর্নামেন্টে খেলতে তাই দৃশ্যত বাধা নেই। এমন একটি দলকে এনে মাশরাফির মতো ক্রিকেটারের বিদায়মঞ্চ সাজিয়ে তাকে যোগ্য সম্মান কি তিদে পারছে বিসিবি?
জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন কেবল ওয়ানডেতে, দেশকে দিয়ে চলেছেন নেতৃত্বও। এবারের বিশ্বকাপে তার অধিনায়কত্বেই খেলেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানোর আগেই গুঞ্জন উঠেছিল তার বিদায়ের। ভাবা হচ্ছিল বিশ্বমঞ্চেই বিদায় বলে দিতে পারেন মাশরাফি। তবে শেষ বিশ্বকাপে নিজে যেমন ছিলেন ¤øান, দলও পায়নি কাক্সিক্ষত সাফল্য। আর তাতেই বিদায়টা সময়ের দাবিতে পরিণত করে ফেলেছেন বহু সাফল্যের এই কারিগর।
দেড় যুগ ধরে দেশের ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন মাশরাফি। তাঁর চোটগ্রস্ত দুই হাঁটুতে ভর করে অনেক সফলতা এসেছে দেশের ক্রিকেটে। তবে ক্যারিয়ারের অন্তিমলগ্নে নতুন চোট কাবু করে ফেলেছে মাশরাফিকে। বিশ্বকাপে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে খেলেছেন। চোটের কারণে পুরো বিশ্বকাপে বল হাতে ব্যর্থ তিনি। আট ম্যাচে ৩৭৬ রান দিয়ে পেয়েছেন কেবল একটি উইকেট। দলও ব্যর্থ। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন নানা কথা উঠছে অধিনায়কের অবসর নিয়ে।
‘মাশরাফির বিদায় যত সুন্দরভাবে করা যায়, আমরা সেটাই করব। দেশের মাটিতে করাটাই উচিত হবে। আমরা ভালোভাবে দেশেই তাঁর বিদায়ী ম্যাচের আয়োজন করতে চাই।’ বিশ্বকাপ চলাকালীন লন্ডনের চেজউইক ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বিদায় নিয়ে এমনটাই বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
মাশরাফি নিজেও হয়তো বিদায় নিয়ে ভেবেছিলেন। টাইগারদের শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগের দিন সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘অবশ্যই শ্রীলঙ্কায় শেষবারের মতো খেলতে যাচ্ছি।’ দেশে ফিরে বিদায়ের পরিকল্পনা করবেন। যদিও ইনজুরিতে শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি অধিনায়কের। তবে আশা করা যাচ্ছে, দেশের মাটিতে শেষবারের মতো খেলেই শেষ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে ‘মাশরাফি’ নামক অধ্যায়।
কিন্তু সেটার বাস্তবায়নে কতদূর এগিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড? আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি) জানাচ্ছে, পরবর্তী ওয়ানডে সিরিজের জন্য অন্তত ১০ মাস অপেক্ষা করতে হবে টাইগারদের। কারণ, এ সময়ের মধ্যে কোনো ওয়ানডে নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। অবশ্য এফটিপির সূচিতে ওয়ানডে নেই বলে এমন নয় যে মাঝের সময়ে বাংলাদেশ কোনো ওয়ানডে খেলতে পারবে না। সমঝোতার ভিত্তিতে চাইলেই যেকোনো দেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ আয়োজন করতে পারবে বিসিবি। পরিকল্পনাটাও তেমন। জানা যায়, আগামী সেপ্টেম্বরে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তান। সে টুর্নামেন্ট শেষে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই নাকি মাশরাফির বিদায় উপলক্ষ্যে ওয়ানডে সিরিজ আয়োজনের চেষ্টা করছে বোর্ড।
যদি তাই হয়, তাহলে হাতে সময় খুব কম। আগামী নভেম্বর থেকে শুরু হবে টাইগারদের ব্যস্ততা। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট, টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর দেশে ফিরেই বিপিএল। এরপর ছুটতে হবে পাকিস্তান সফরে। সিরিজের পাশাপাশি দেশের সফলতম অধিনায়কের বিদায় নিয়ে বাড়তি কী ভাবছে ক্রিকেট বোর্ড? নিজাম উদ্দিন জানালেন, মাশরাফির বিদায় নিয়ে আপাতত বাড়তি কোনো পরিকল্পনাই নেই, ‘মাশরাফির বিদায় উপলক্ষে কোনো বাড়তি পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত হয়নি। বোর্ড সভায় এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। আপাতত তাঁর বিদায়ে কী হবে, না হবে তা নিয়ে বলা যাচ্ছে না। এখানে পলিসিগত ব্যাপারও আছে। এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তান এবং জিম্বাবুয়েকে নিয়ে যে সিরিজটি হচ্ছে বা তাতে ত্রিদেশীয় (ওয়ানডে) সিরিজের ব্যাপারেই বলা আছে।’
মাশরাফির বিদায়ী সিরিজ সম্পর্কে জানতে চাইলে যেহেতু নিজামউদ্দিন সংস্করণ বদলের চেষ্টার কথা জানান, তাতে দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে নিবেন যে কেউই। কিন্তু তারপরও স্পষ্ট করে না বলায় ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে খোলাসা করে কিছু বলছেন না মাশরাফিও। নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন, এ কথা নিজেই স্বীকার করেছেন ওয়ানডে অধিনায়ক। কিন্তু বয়স যা, তাতে ক্রিকেট ছাড়ার খুব কাছে চলে এসেছেন তিনি।
বিশ্বকাপ চলাকালীন সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাশরাফির বিদায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার, সংগঠক সৈয়দ আশরাফুল হক বলেছিলেন, ‘ও (মাশরাফি) যা দিয়েছে তা যেন আমরা ভুলে না যাই। হ্যাঁ, এই বিশ্বকাপে সে হয়তো ভালো খেলেনি। কিন্তু তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই ভুল। আর অবসর নিবে কি নিবে না সেটি ওর উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো। আমি মনে প্রাণে প্রার্থনা করি তার বিদায় যেন আগের সবার মতো না হয়। অশ্যই যেন সেরা সম্মানটি সে পায়।’
সেই সঙ্গে আশরাফুল হক ফিরে তাকালেন পুরানো দিনে, ‘দেখেন আমি যখন ক্রিকেট ছাড়ি আমার মনে হয়েছিল আর পারবো না। তাহলে কেন দলের জায়গা ধরে রাখবো? আমার সঙ্গে যারা খেলতো তারা অবাক হয়ে বলেছিলেন, তুমিতো আরো দুই তিন বছর খেলতে পারবে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে অন্যদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেই। ঠিক এভাবেই ক্রিকেটারদেরও নিজের দায়িত্ব থাকতে হবে সময় মতো বিদায় বলে দেয়ার। সেই সঙ্গে বোর্ডেরও উচিত তাদের সম্মান দিয়েই মাঠ থেকে বিদায় বলা। এটি প্রতিটি দেশের ক্রিকেটেই রীতি। মাশরাফির যে অবদান সেই সম্মানতো তাকে না দিলে পরে সবার জন্য বাজে উদহারণ হয়ে থাকবে।’
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে আট ম্যাচে উইকেট মিলেছে মাত্র একটি। এমনকি পুরো ফিটও ছিলেন না। এরপর থেকেই তার অবসর নিয়ে গুঞ্জনটা জোরালো হয়। বিসিবিও বিষয়টি আমলে নেয়। এ নিয়ে ভক্তদেরও আগ্রহের শেষ নেই। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত আসে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।