Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচ্ছিন্ন রাখাকে অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে দেখছে দিল্লি

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বিনা বিচারে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মীরের প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তাদেরকে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চাইছে ভারত সরকার। ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত সশস্ত্র গোষ্ঠী আর নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাথর ছুড়ে মারা তরুণদের ঠেকাতে এসব নেতাকে বিচ্ছিন্ন রাখাকে অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লি সরকার। পুরো বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে এমন ১০ জনের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেওয়া কিংবা স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার চেয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকাকেই সমর্থন করেন- এমন অহিংস নেতাদেরও ছাড় দিচ্ছে না দিল্লি। নজিরবিহীন এই দমন পীড়নের পেছনে ভারত সরকারের যুক্তি হচ্ছে, সশস্ত্র বিদ্রোহকে উস্কে দেয়ার পেছনে এসব বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরও হাত রয়েছে।’ এসব নেতাদের বিচ্ছিন্ন রাখতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়াদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর চাপপ্রয়োগ এবং স¤প্রতি নিরস্ত্র একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা।

এ বিষয়ে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন অন্যতম নেতা, কূটনীতিক, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা এবং নয়াদিল্লিতে সরকারের চিন্তাভাবনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে এমন কয়েকটি মন্ত্রণালয়। সরকারের চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র বলেছে, ‘যে কোনোভাবে যে কেউ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কিংবা উস্কে (সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে) দেয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর দশকের পর দশক ধরে পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান বিবাদে জড়িয়ে আছে। উভয় দেশই কাশ্মীরের সম্পূর্ণ অংশ নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। তবে দুই দেশই কাশ্মীরের দুটি অংশকে শাসন করছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরে পাকিস্তানভিত্তিক এক জঙ্গি সংগঠন আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর ৪০ জনকে হত্যা করে। এরপর এই অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রয়টার্স জানিয়েছিল, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন শতাধিক ব্যক্তিকে মধ্যরাতের অভিযানে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এদের মধ্যে কাশ্মীরের বিশিষ্ট নেতাদের পরিবারের সদস্যও রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিক সমাজ জোটের (জেকেসিসিএস) সমন্বয়ক খুররম পারভেজ জানান, এদের কয়েকজনকে পরবর্তীতে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এখনো কারাগারে অনেকেই আটক আছেন। জেকেসিসিএসের প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেছে, অন্ততপক্ষে ৩৩ জন জ্যেষ্ঠ নেতা এখনও কারাগারে আটক আছেন।

এদের মধ্যে ১০ জনকে দিল্লির কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানিয়েছে, কাশ্মীর থেকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদের দেখতে যেন সমর্থকরা কারাগারে আসতে না পারে। একটি সূত্র বলেছে, ‘তাদেরকে সরিয়ে নেওয়াটা হচ্ছে একটি কৌশল। এটা তাদেরকে অকার্যকর করে তুলবে।’ কাশ্মীর নিয়ে ভারতের বিগত সরকারগুলো বরাবরই সতর্ক অবস্থানে ছিল। তবে প্রায় প্রত্যেকটি সরকারই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছে। এমনকি ২০০৪ সালে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির উপ-প্রধানমন্ত্রী এলকে আদভানি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ওমর ফারুকের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসেছিলেন। তবে বর্তমান বিজেপি সরকার কাশ্মীর প্রসঙ্গে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ও কাশ্মীর নিয়ে অন্যতম নীতি নির্ধারক রাম মাধব জানিয়েছেন সংলাপ বা আলোচনা নিয়ে নয়া দিল্লির আগ্রহ এখন একেবারেই কম। ২০১৬ সালে কাশ্মীরের পরিস্থিতি যখন উত্তাল ছিল তখন সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলেও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে জানান তিনি। রাম মাধব বলেন, ‘কখন আলোচনা হবে বা হবে না সেটি তারা (বিচ্ছিন্নতাবাদীরা) নির্ধারণ করতে পারে না।’ বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো কতোটা চাপের মুখে আছে জানাতে যেয়ে অল পার্টিস হুরিয়াত নেতা কাশ্মীরের হুরিয়াত নেতা ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদেরকে মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয় না, যাদেরকে চাই তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না, আমরা শহরের বাইরে যেতে পারি না।’

তিনি জানান, বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর মধ্যম পর্যায়ের নেতাসহ তাদের স্বজন ও সহযোগী মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জনকে বর্তমানে শ্রীনগর কিংবা ভারতের অন্য কোথাও কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের দেখা-সাক্ষাত বন্ধেও চাপ দিচ্ছে ভারত। নয়া দিল্লিতে থাকা দুই কূটনীতিক জানিয়েছেন, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কাশ্মীরে তাদের সফরের ওপর নজরদারি এবং বৈঠকের ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এদেরই একজন বলেন, ‘কারাগারে কিংবা গৃহঅন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে দেখা করাতো প্রশ্নাতীত ব্যাপার। তবে যারা বন্দী ছিলো না তাদের সঙ্গে কয়েক বছর আগেও আমরা দেখা করতে পারতাম। এখন আমি সেই চেষ্টা করলে সরকার ক্ষুব্ধ হতে পারে। এতে আমাদের দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।’ হুরিয়াত নেতা ফারুক জানিয়েছেন, সহিংসতা উস্কে দেওয়ার পেছনে বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো দায়ী নয়। হুরিয়াত ও অন্যান্য দলগুলোকে একঘরে করার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তাতে কাশ্মীরে ক্ষমতাশূন্যতা সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, ‘হুরিয়াত ছিল ঢাল। আমরা বের হয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করতাম। কিন্তু এখন এই তরুণরা কারো কথাই শুনছে না। রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দিল্লি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ