Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা কাজে লাগিয়ে দুর্নীতি

| প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

অসত্য ঘোষণা বা পণ্যের তথ্য গোপন করে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি কিংবা অর্থপাচারের বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোর বিরুদ্ধেই এই অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। আবার এসব প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউসÑএর সুবিধায় পণ্য এনে তা উৎপাদন কাজে না লাগিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে সরকার শত শত কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এ এক ভয়াবহ দুর্নীতি এবং অর্থনীতি বিধ্বংসী অপকর্ম। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামের ১০০টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউসÑএর সুবিধায় ৭৯০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করে উৎপাদনে কাজে না লাগিয়ে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। সুযোগের এই অপব্যবহারের কারণে সরকার প্রায় ৩৭১ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ৩০০টি বিভাগীয় মামলা করেছে। এর মধ্যে ৫০টি মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে এবং ২৪০টি মামলা কাস্টমস আপিলাত ট্রাইবুনাল ও হাইকোর্টে আপিলের কারণে পেন্ডিং রয়েছে।

ঘোষিত পণ্য আমদানি-রপ্তানি না করার মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থপাচারের বিষয়টি এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে পড়েছে। অতীতে এই প্রবণতার হার কম থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচারের যে অভিযোগ রয়েছে, তার একটি বড় মাধ্যম এই মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা। আবার অনেক রপ্তানিকারক আছেন যারা পণ্য রপ্তানি করেন ঠিকই, তবে রপ্তানিকৃত পণ্যের অর্থ দেশে না এনে বিদেশে রেখে দিচ্ছেন। এভাবেও দেশ থেকে শত শত কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের আমানত বৃদ্ধির বিষয়টি এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, দেশ থেকে বৈধ বা অবৈধভাবে অর্থ পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পাচার কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এতে একটা বিষয়ই প্রতীয়মাণ হচ্ছে, দেশের বড় বড় শিল্পপতিদের মধ্যে দেশপ্রেমের ঘাটতি এবং অসততার বিষয়টি চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে দেশের অর্থনীতিতে তারা ভূমিকা রাখছে না। সরকার দেশের উৎপাদন সক্ষমতা এবং রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যার হাউসের সুবিধা দিয়েছে। অথচ একটি শ্রেণী এ সুযোগের অপব্যবহার করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। এতে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয় তা সরকারের একটি নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার আওতায় বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়। এ এক ভয়াবহ ব্যাপার। প্রতি বছর সরকার এই বিশাল অংকের অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা জাতীয় বাজেটের প্রায় এক চর্তুথাংশ। স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এই দুর্নীতি যদি প্রতিরোধ করা যেত, তবে সরকারের কোষাগারে এই পুরো টাকাটা জমা পড়ত। এতে বাজেটের যে ঘাটতির কথা বলা হয়, তা এই অর্থে পূরণ হয়ে যেত। এমন বল্গাহীন দুর্নীতি বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধার পথ খুলে দিচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, একটি শ্রেণী এসব সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহারে মেতে উঠেছে। নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যথাযথ শুল্ক পরিশোধ না করে রাষ্ট্রের প্রভূত আর্থিক ক্ষতি সাধন করে চলেছে। এ ধরনের অনাচার হলে দেশের অর্থনীতি এগুবে কীভাবে?

আমরা মনে করি, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টির দিকে সরকারের কঠোর দৃষ্টি এবং নজরদারি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানির সাথে জড়িত তারা যথাযথ এবং বৈধভাবে এ কাজটি করছে কিনা, তা নিয়মিত মনিটর এবং তা জোরদার করা দরকার। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সরকারের শুল্কমুক্ত সুবিধা কাজে লাগিয়ে যারা দুর্নীতি করছে এবং শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। শুধু বিভাগীয় মামলা করে সময়ক্ষেপণ না করে আরও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অর্থ অদায়ের পাশাপাশি বড় ধরনের জরিমানার বিধান রাখা যেতে পারে। কোন প্রতিষ্ঠান কি পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করছে এবং তার অর্থ কিভাবে যাচ্ছে, কিভাবে আসছেÑসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এসবের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রাখতে হবে। দুর্নীতি হওয়ার আগেই সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন