পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দেশের আমদানি-রফতানি তথা জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম লাইফলাইন। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদিত পণ্য রফতানি এবং রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের অর্থ যোগানের ক্ষেত্রে এই বন্দর অগ্রণী ভ’মিকা পালন করছে। বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানী একদিকে যেমন অর্থনীতির মূল বুনিয়াদ অন্যদিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বন্দর ও বৈদেশিক গেটওয়েগুলো গুরুত্বপূর্ণ অণুঘটকের ভ’মিকা পালন করে থাকে। বন্দরের একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ অনেক পুরনো। সেই সাথে মিথ্যা ঘোষণায় অবৈধ পণ্য আমদানির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার এবং মাদকসহ অবৈধ পণ্য আমদানি ও বিপণনের মাধ্যমে দেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে এবং সামাজিক অপরাধ প্রবণতা ও নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে বন্দরে আমদানি-রফতানি কর্মকান্ডে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা, যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, দুর্বলতা অথবা অস্বচ্ছতা দেশের জন্য অনেক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও বাস্তব পরিবর্তন এখনো খুব সামান্যই হয়েছে। এখনো আমাদের বন্দর ব্যবস্থাপনা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
গতকাল ইনকিলাবসহ বিভিন্ন দৈনিকে চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা অবৈধ চালান আটকের একাধিক ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব চালানে শত শত কোটি টাকার মাদক, শুকরের বর্জ্য আমদানি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, ব্যাপক রাজস্ব ক্ষতি ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগজনক। সরকারি বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা ক্যাপিটাল মেশিনারিজের শুল্কহার মাত্র ১ শতাংশ আর মদ-বিয়ারের আমদানি শুল্ক ৩০০-৫০০ ভাগ পর্যন্ত। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকনায় নির্মীয়মাণ বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য ৪০৬ টন ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির ঘোষণা দিয়ে জাহাজ ভর্তি ৬০০ বাক্সে বিপুল পরিমাণ মদ ও বিয়ার আমদানি করেছে জালিয়াতচক্র। পরীক্ষা বা যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই পণ্য খালাস করার সময় কার্টন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মদের বোতল বেরিয়ে পড়লে এই জালিয়াতি ধরা পড়ে। এভাবে কতবার কি পরিমাণ অবৈধ পণ্য মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি ও খালাস হয়েছে তা জানার কোনো সযোগই হয়তো নেই। আরেক চালানে মাছ ও মুরগীর খাদ্যের নামে ১৪০৮ মেট্টিক টন শূকর ও গবাদিপশুর বর্জ্য আমদানির তথ্য উৎঘাটন করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস হাউজ। তিনটি ভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে ফিশ ও পোল্ট্রি ফিডের নামে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং মুসলমানদের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ পণ্য শূকরের বর্জ্য আমদানির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এমন মিথ্যা ঘোষণা ও জালিয়াতি কাস্টমস হাউজগুলো এখন দৃঢ় হাতে রুখে দিতে শুরু করেছে। এ ধারা যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে। জোরদার করতে হবে।
গতকাল প্রকাশিত আরেক রিপোর্টে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে খাদ্যের ফ্লেবার বা সুগন্ধি আমদানির নামে ভারত থেকে ২০০ কেজি ভায়াগ্রা পাউডার আমদানির চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় একই সময়ে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর জালিয়াতি, মিথ্যা ঘোষণা ও অবৈধ ও নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির তথ্য উঘাটন থেকেই বোঝা যাচ্ছে দেশের সমুদ্র ও স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ অবৈধ পণ্য মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি ও খালাস করা হচ্ছে। বন্দরে খালাস হওয়া বেশিরভাগ পণ্যের যথাযথ পরিক্ষণসহ উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সরকারি বিদ্যুত কেন্দ্রের নামে আমদানিকৃত ক্যাপিটাল মেশিনারিজের নামে শত শত টন বিদেশি মদ আমদানির ঘটনা অনেকটা কাকতালিয় ভাবে উৎঘাটিত হলেও এই ঘটনার মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত প্রতিটা পণ্যের যথাযথ পরিদর্শন ও উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় ল্যাবরেটরি টেস্ট নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশের যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি ব্যাপক আকার ধারণ করার অন্যতম কারণ এর সহজলভ্যতা। মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি করা মাদক ও স্বাস্থ্যহানিকর পণ্য বিপণন করে একটি চক্র রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, পক্ষান্তরে দেশের যুব সমাজ তথা জাতির ভবিষ্যত রসাতলে যাচ্ছে। দেশের সব বন্দরের আমদানি প্রক্রিয়ায় আধুনিক ল্যাবরেটরি টেস্ট সিস্টেম ও কর্মকর্তাদের দায়িত্বে স্বচ্ছতা ও কাউন্টার-মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বড় বড় কপোর্রেট কোম্পানির বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির অভিযোগ উঠেছে। শত শত চালান জব্দ করা হয়েছে। এখন সরকারি বিদ্যুত কেন্দ্রের নামে আমদানি করা ক্যাপিটাল মেশিনারিজের নামে মদ আমদানির চিত্র ধরা পড়ল। অতএব কাউকেই সন্দেহ ও মনিটরিংয়ের বাইরে রাখার সুযোগ নেই। একদিকে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি, অন্যদিকে মাদক, ভায়াগ্রা এবং শূকরের বর্জ্য আমদানির মত ঘটনা সবদিক থেকেই দেশ ও জাতির জন্য বিপজ্জনক। এ ধরনের জালিয়াতির সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যে সব আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে এসব কর্মকান্ড সংঘটিত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে গতানুগতিক জরিমানা দিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।