Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লর্ডসে আইরিশ বিস্ময়!

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

লর্ডসে রূপকথার জন্ম দিল আয়ারল্যান্ড। অ্যাশেজ সিরিজের আগে চারদিনে একমাত্র টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ৮৫ রানে গুটিয়ে দিয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের নবাগত দলটি। ১৩০ মিনিট সাড়ে তেইশ ওভারেই ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ঠিকানা হয়েছে ড্রেসিংরুম। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমেও চমক দেখিয়ে চলেছে আয়ারল্যান্ড। গতকাল চা বিরতি পর্যন্ত (৩২ ওভার) ২ উইকেট হারানো আইরিশদের সংগ্রহ ১২৭। ফিফটি তুলে খেলছেন অ্যান্ডি বলবার্নি (৫১), তাকে সঙ্গ দিয়ে চলেছেন ৩৫ রান করা পল স্টার্লিং।

টসে জিতে নিজেদের ব্যাটিং শক্তির কথা চিন্তা করেই প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট। কিন্তু সময় যতই গড়াতে থাকে একে একে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে সদ্য বিশ্বকাপজয়ী দলের একের পর এক তারকা। বিশ্বকাপ আসরে ইংল্যান্ড একাই বহুপথ পাড়ি দিয়েছিলেন জেসন রয়। কিন্তু টেস্টে যে তিনি নবাগত! অভিষিক্ত ম্যাচে মাত্র ৫ রানেই ফিরে যান তিনি। সেখান থেকেই ছন্দপতণের শুরু। দলীয় ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। মুরতাগ এই উইকেট শিকার করেই যেন ক্ষুধার্ত হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ইংলিশ শিবিরে। একে একে বার্নস, মঈন, বেয়ারস্টো ও ওকসকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথম পাঁচ উইকেট তুলে নেন এই তারকা। টেস্টে প্রথম আইরিশ ৫ উইকেট শিকারি!

রয়ের বিদায়ের পর ডেনলির সঙ্গে জুটি গড়েন বার্নস। কিন্তু দলীয় ৩৬ রানের মাথায় ফিরে যান দুই ব্যাটসম্যানই। বার্নস ৬ ও ডেনলি ২৩ রানে ফেরেন। ডেনলিকে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেন মার্ক অ্যাডায়ার। এরপর ব্যক্তিগত ২ রানে রুটকেও তুলে নে এই বোলার। দলীয় ৪২ রানে অধিনায়কের বিদায়ের পর একই রানে ফিরে যান বেয়ারস্টো (০) ও ওকস (০)। একরান যোগ হতেই ব্যাক্তিগত শূণ্য রানে ফিরে যান মঈন। ৪৩ রানেই স্বাগতিক শিবিরের সাত ব্যাটসম্যান সাঝঘরে। শঙ্কা ছিল ৫০ রানের নিচে অলআউট হয়ে যাওয়ার।

কিন্তু শেষর দিকে স্যাম কুরানের ১৬ বলে ১৮ ও স্টোনের ১৮ বলে ১৯ রানের ইনিংসে ভর করে ৮৫ রান তুলতে পেরেছে সদ্য বিশ্বকাপজয় করা দলটি। আইরিশদের মধ্যে মুরতাগ ১৩ রানে ৫ উইকেট লাভ করেন। এছাড়া অ্যাডায়ার ৩ উইকেট ও রানকিন ২ উইকেট নেন।

১৯৮৭ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৫ রানে অলআউট হয়েছিল ইংল্যান্ড। পোর্ট অফ স্পেনে ১৯৯৪ সালে ক্যারিবিয় বোরিং তোপে ৪৬ রানে শেষ হয় ইংলিশ ইনিংস। ২০০৯ সালে ফের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই কিংসটনে ৫১ রানে সাঝঘরে ফেরেন দশজন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৪৮ সালে ৫২ রানে ও ১৮৮৮ সালে ৫৩ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। গত বছরের অকল্যান্ডে কিউইদের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার তরতাজা স্মৃতিটাও মনে থাকার কথা রুটদের। তাছাড়া ৬১ রান দু’বার ও ৬২ রানে একবার অলআউটের ইতিহাসও আছে তাদের। ৬৪, ৬৫, ৭১, ৭২, ৭২, ৭৫, ৭৭,৭৭,৭৭,৭৭, ৭৯ এই সংখ্যাগুলোও ইংলিশ ক্রিকেটের দু:সহ স্মৃতির কথাই মনে করিয়ে দেয়। গতকাল নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের ২২তম সর্বনি¤œ রানের রেকর্ড গড়ল জো রুটের দল।

চার দিনের এ টেস্টে ইংলিশ সমর্থকদের একটি পরিসংখ্যান জেনে রাখাই ভালো। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৫০ রান তোলার আগেই ৬ উইকেট হারিয়ে এ পর্যন্ত একবারই টেস্ট জিততে পেরেছে। সেটি ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর আজ ৪৩ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়েছে রুটের দল। টেস্টে প্রথমবারের মতো আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়ে এমন শুরুর পর জয়টা তাই ভীষণ কঠিনই হবে ইংল্যান্ডের জন্য।
তবে ম্যাচের ভাগ্য যেদিকেই গড়াক না কেন, আইরিশদের এ কীর্তি আজীবন মনে রাখবে ইংল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট এর আগেও পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইংলিশদের। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ আসরে এই পুচকে দলের বিপক্ষে হেরেই আসর থেকে ছিঠকে পড়ে তারকাখচিত ইংল্যান্ড। অ্যাশেজের প্রস্ততি হিসেবেই এই ম্যাচটিকে নিয়েছিল ইংলিশরা। এখন ঘটনা মোড় নিচ্ছে অন্যদিকে। চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ইংল্যান্ডের এই বেহাল দশা দেখে হাসতেই পারে অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকেরা। কার কয়দিন বাদেই তাদের বিপক্ষে মর্যাদাপূর্ণ অ্যাশেজ খেলবে ইংল্যান্ড।

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস : ৮৫ (২৩.৪ ওভার) (বার্নস ৬, রয় ৫, ডেনলি ২৩, রুট ২, বেয়ারস্টো ০, মঈন ০, ওকস ০, কুরাণ ১৮, ব্রড ৩, স্টোন ১৯, লিচ ১*; মুরতাগ ৯-২-১৩-৫, অ্যাডায়ার ৭.৪-১-৩২-৩, থমসন ৪-১-৩০-০, রানকিন ৩-১-৫-২)

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লর্ডস


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ