পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব আলহাজ্ব শাব্বীর আহমেদ মোমতাজী বলেছেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থেকে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মাদরাসাবান্ধব। ইতোমধ্যেই মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছেন ও আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের ৫৫১টি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুশির সংবাদ। এখন আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে মাদরাসা শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আরো সময়োপযোগী করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের মেধা যোগ্যতা ও দক্ষতাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে।
গতকাল বিকেলে রাজশাহী দারুস সালাম কামিল মাদরাসার অডিটোরিয়ামে ‘বর্তমান সরকারের মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে অবদান শীর্ষক’ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের রাজশাহীর মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
দারুস সালাম কামিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি আলহাজ¦ মো. সারওয়ার কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট ও দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মো. উবায়দুর রহমান খান নদভী, বিশেষ অতিথি, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মো. মোকাদ্দাসুল ইসলাম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশেনের মেয়রের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ আমিন উদ্দিন মাহমুদ, যশোর আমানিয়া কামিল মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল ও জমিয়তে মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মো. সালাউদ্দিন প্রমুখ।
মহাসচিব শাব্বীর আহমেদ মোমতাজী বলেন, আমাদের দেশ বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আমাদের এই চক্রান্তের হাত থেকে রক্ষার জন্য আলেম-ওলামার সহযোগিতা প্রয়োজন। আলেমদেরই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। এই মুহূর্তে দেশে পদ্মা সেতুতে মাথা প্রয়োজন এই গুজব নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। তিনি বলেন, এটা একটি ব্যাপক ষড়যন্ত্র, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য, সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে বিতর্কিত করার জন্য কোনো গোষ্ঠী এই কাজ করেছে। মাদরাসা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী সবাইকে নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই অবস্থায় আলেমদের সোচ্চার হতে হবে। তাদেরকে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন একটি ঐক্যবদ্ধ সংগঠন, এই সংগঠনে কেউ ফাটল ধরাতে পারেনি কখনো পারবে না।
তিনি বলেন, নতুন করে সরকার ৪৩১২টি মাদরাসা তৈরি করছেন। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট হচ্ছে। এটা ভালো উদ্যোগ। আগামীতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার সমস্যা সমাধান হওয়ার পথে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছে মাদরাসা শিক্ষকদের বয়স ৬০ থেকে ৬২ করার দাবি মোদার্রেছীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা আশাকরি এটা বাস্তবায়ন হবে। আমরা সরকারের সফলতার জন্য শুকরিয়া মাহফিল করেছি। আমাদের নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে, আমাদের নিজেদের সন্তানদের আগে মাদরাসায় পড়াতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র আমাদের দেশের চতুর্দিকে ঘিরে ধরেছে। যুব সমাজ আজ অনৈতিকতার দিকে যাচ্ছে, মাদকে আসক্ত হচ্ছে। এদেরকে এই কাজগুলো থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করতে হবে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিশিষ্ট লেখক-কলামিস্ট, দৈনিক ইনকিলাবে সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মো. উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, মসজিদের ইমাম এবং মাদরাসার শিক্ষকরা দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। আলেম-ওলামার সচেতনার কারণে আজ দেশ থেকে মাদকের হার কমে গেছে। সন্ত্রাসের হার কমে গেছে। ইমামরা জুম্মার দিন ও শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতশত ইসলামিক জলসার মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত দেন। কল্যাণের পথে আহ্বান করেন। বর্তমানে গুজবের মাধ্যমে যেসব মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে এ সম্পর্কে আলেম সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, এদেশে একটা সময় জঙ্গিবাদেরও উত্থান হয়েছিল। সেই সাথে রাজশাহীতেও এর বিশাল প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমাদের দেশ তা থেকে রক্ষা পেয়েছে। ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, ককটেল, বোমার কোনো স্থান নেই। কিছু বিভ্রান্ত মানুষের কারণে আজ ইসলামকে কটাক্ষ করা হয় বিভিন্নভাবে, কিন্তু ইসলামের সাথে এই জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আলেমদের এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। তাদেরকে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কিছু মানুষের ভুল আচরণের কারণে সমাজের পরিবেশ নষ্ট হয় আবার কিছু মানুষের সমাজ উন্নয়নমূলক কারণে সমাজের পরিবেশ আরো মজবুত হয়।
তিনি বঙ্গবন্ধুর কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের সংবিধানে সমাজতন্ত্র থাকার পরেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত প্রচেষ্টায় ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে দেশের মানুষ ইসলাম সুন্দরভাবে পালন করছে। আর এই কারণে দেশের আলেম-ওলামা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ইসলামী প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আর এটা বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে ইসলামের ব্যাপক খেদমত হচ্ছে। তিনি বলেন, সন্তানরা যদি আলেম-ওলামা হওয়ার পর কারিগরি বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। তাহলে দেশে নৈতিক অবস্থা ঠিক থাকবে। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও নৈতিক শিক্ষায় পরিপূর্ণ মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাসে কর্মমুখী কারিগরী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে শিক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
বক্তারা সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা আলেমকুল শিরোমনি আলহাজ¦ মাওলানা এম.এ. মান্নান (রহ.)-এর নাম। তার দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম ও সংগ্রাম করার মাধ্যমে এ দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তারা দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বর্তমান সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও তাঁর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করে বলেন, তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে তিনি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার সুচিন্তা, দক্ষতা ও কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সরকার জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিভিন্ন দাবি দাওয়া মেনে নিয়েছে।
শেষে দোয়া পরিচালনা করেন রাজশাহী জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি মাওলানা মো. আব্দুল গফুর মিঞা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন রাজশাহীর জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন দারুস সালাম কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল সাইয়্যেদ মাওলানা এইচ এম শহিদুল ইসলাম। দারুস সালাম কামিল মাদরাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র মো. আসিফ পারভেজের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।