মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গোলাভরা ধান, খামারে মুরগি, ঘর-সংসার সবই ছিল। আরামেই কাটছিল জীবন। কিন্তু আচমকাই এক দিন গুপ্তচর হওয়ার ইচ্ছা মাথায় আসে। আর তাতেই বদলে যায় বিংশ শতাব্দির ইতিহাস। সিনেমার পর্দায় জেমস বন্ডের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে আগেই। এ বার চিনে নিন বাস্তবের ‘সুপারস্পাই’ হুয়ান পুজল গার্সিয়াকে।
১৯১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্পেনের বার্সেলোনায় জন্ম হুয়ান পুজল গার্সিয়ার। কোথাও কোথাও জোয়ান পুজল গার্সিয়া নামেও পরিচিত তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে কাজ করতেন। তার পর শুরু করেন খামারে মুরগি পালনের ব্যবসা। অন্যান্য ছোটখাটো ব্যবসাতেও হাত লাগিয়েছিলেন। কিন্তু পসার জমাতে পারেননি। তার মধ্যেই ১৯৩৬ থেকে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় স্পেনে। মুক্ত চিন্তাভাবনার মালিক হুয়ানকে সেই সময় গ্রেফতার করা হয়। ছাড়া পেয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলেও, কমিউনিজম এবং নাজিদের সর্বগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, তৎকালীন স্পেন সরকারের বিরোধিতায় ব্রিটেনের হয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন হুয়ান। কিন্তু যুদ্ধে যাওয়ার মতো শারীরিক শক্তি ছিল না তার। তাই গুপ্তচর হবেন বলে মনস্থির করেন। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় তাতেও সুবিধা করতে পারেননি।
ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা এমআই৫-এর দ্বারস্থ হলে, তারাও একাধিক বার প্রত্যাখ্যান করেন তাকে। তাতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন হুয়ান। স্পেনীয় অফিসার এবং হিটলারের সমর্থক সেজে মাদ্রিদে নাজি অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের হয়ে গুপ্তচর বৃত্তি করতে চান বলে জানান। সন্দেহ এড়াতে ভুয়া কূটনৈতিক ভিসাও জোগাড় করে ফেলেছিলেন।
একেবারেই ইংরেজি বলতে পারতেন না গার্সিয়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার কথা বিশ্বাস করে নেন নাজি নেতারা। শুরু হয় তার প্রশিক্ষণ। খরচ বাবদ ৪২ হাজার ডলারও হাতে পান, বাংলাদেশী মুদ্রায় বর্তমানে যা প্রায় ৩৬ লাখ টাকা, যাতে লন্ডন গিয়ে আরও চর নিযুক্ত করতে পারেন।
কিন্তু শুধু টাকা নিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না! বিশ্বাস অর্জন করতে হলে জার্মানিকে তথ্যও পাচার করতে হবে! সেই মতো পড়াশোনা শুরু করে দেন তিনি। খবরের কাগজ, বিজ্ঞাপন ঘেঁটে যা পেতেন, যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত করে তা জার্মানিকে সরবরাহ করতেন তিনি। সেই সঙ্গে কিছু আসল তথ্যও পাঠাতেন।
লিসবন এবং মাদ্রিদে থেকেই এই কাজ করতেন হুয়ান। যদিও তিনি লন্ডন থেকে তথ্য পাঠাচ্ছেন বলে ভাবতেন নাজি অফিসাররা। তবে একেবারেই যে কোনও ভুল করেননি তা নয়। নাজি অফিসারদের তথ্য পাচারের সময় একবার বলে বসেন, গ্লাসগোয় এমন কিছু লোক রয়েছেন, যারা ওয়াইনের জন্য সব কিছু করতে পারেন। আদতে জার্মান বিয়ার পছন্দ করতেন স্কটিশরা।
এর মধ্যেই ব্রিটিশ গুপ্তচরদের কানেও হুয়ান পুজল গার্সিয়ার খবর এসে পৌঁছয়। সন্ধান শুরু হলে নিজেই সামনে আসেন হুয়ান। তাকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়। সদস্য করে নেওয়া হয় এমআই৫-এর। নাম রাখা হয় ‘এজেন্ট গার্বো।’ তা সত্ত্বেও কিছু টের পায়নি জার্মানরা। বরং হিটলারের সমর্থনে ২৭ জন গুপ্তচর নিয়োগ করে ফেলেছেন বলে তাদের ভুয়ো তথ্য পাঠান হুয়ান। খরচ বাবদ মোটা টাকাও আদায় করেন।
গার্সিয়াকে এতটাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন নাজি অফিসাররা যে, তাকে বাদ দেওয়া বা মেরে ফেলার চিন্তাও করতে পারতেন না তাঁরা। ভাবতেন, গার্সিয়াকে সরিয়ে দিলে তার তৈরি গুপ্তচর নেটওয়ার্কও যদি হাতছাড়া হয়ে যায়!
১৯৪৪-এর ৬ জুন উত্তর ফ্রান্স উপকূলের নরম্যান্ডিতে জার্মান সেনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মিত্রপক্ষ। আক্রমণ হতে পারে বলে আগেই খবর পৌঁছেছিল জার্মানির কাছে। কিন্তু গার্সিয়ার উপর ভরসা করে বসেছিল তারা। সব কিছু জেনেও গার্সিয়া তাদের আশ্বস্ত করেন যে, নরম্যান্ডিতে আক্রমণের কোনও আশঙ্কা নেই। বোঝান, ইংলিশ চ্যানেল তথা আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে উত্তর সাগরের সংযোগসাধনকারী ডোভার প্রণালী হয়েই এগিয়ে আসছে মিত্রপক্ষের দেড় লক্ষ সেনার বাহিনী।
এই নরম্যান্ডি আক্রমণ থেকেই মিত্রপক্ষের জয়যাত্রা শুরু। তার এক বছর পরই সমাপ্তি ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। সূত্র: ইন্টারনেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।