মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
স্থানীয় মিডিয়ায় গত সপ্তাহে যে খবরগুলো সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল, সেগুলো হলো নাজি স্বৈরশাসক অ্যাডলফ হিটলার, শ্রীলঙ্কান মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গার উসকানিদাতা বৌদ্ধ ভিক্ষু গালাগোদা আত্থে নানাসারা থেরো, এবং শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ক্লারিক্যাল পরম্পরার উচ্চ পর্যায়ের সদস্য; সঙ্ঘের আসগিরিয়া চ্যাপ্টারের ডেপুটি চিফ ভিক্ষু ভেনদারুয়ে উপালি’র খবর।
ভিক্ষু এনদারুয়ে উপালি হিটলারের প্রেতাত্মাকে আহŸান করেছেন। সাবেক প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি গোতাভায়া রাজাপাকসেকে তিনি হিটলার হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন। ২২ জুন কুখ্যাত গালাগোদা আত্থে নানাসারা থেরো জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ছয় মাস আসে আদালত অবমাননা এবং আদালত চত্বরে নিখোঁজ সাংবাদিকের স্ত্রীকে হুমকি দেয়ার অপরাধে তিনি সাজা পান। সামরিক বাহিনী তাকে অপহরণ করেছিলো বলে মনে করা হয়।
জামিনের পর নানাসারা থেরো একটি সমাবেশের নেতৃত্ব দেন। তিনি বুদ্ধর মূর্তিতে ফুল দেন এবং বন্দী থাকা অবস্থায় যারা তার দেখাশোনা করেছেন, তাদেরকে আশীর্বাদ করেন। তিনি দাবি করেন তার জামিনের দিনটি শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ এবং গোটা পৃথিবীর জন্য একটি বিরাট আনন্দের দিন। এই নাটক যখন চলছিল, তখন আরকটি চক্রান্ত শুরু হচ্ছিল।
এটা একটা রহস্য একজন শীর্ষ বৌদ্ধ সর্বোচ্চ পরিষদের সদস্য সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসার ভাই গোতাভায়া রাসাপাকসেকে হিটলারের অনুকরণের ‘দেশ পুনর্গঠনের’ আহŸান জানিয়েছেন।
গোতাভায়া রাজাপাকসার ৬৯তম জন্মদিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে আশীর্বাদ করে ভেন্দুরুয়ে উপালি দেশের অনেককেই হতবাক করেছেন। যে দেশটি ৩০ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের ধকল সামলাচ্ছে এখনও এবং বর্তমানে যেখানে নানাসারা থেরোর মতো ব্যক্তিরা রয়েছে, সেখানে তিনি সামরিক শাসনের আহŸান জানানোয় হতবাক হয়েছে অনেকে। দেশের একজন ‘ধর্মীয় নেতা’ প্রয়োজন উল্লেখ করে এই ভিক্ষু গোতাভায়া রাজাপাকসাকে লক্ষ্য করে বলেন: “অনেকে আপনাকে হিটলার বলে উল্লেখ করেছে। হিটলার হোন। সামরিক বাহিনীর সাথে যান এবং দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন”।
ভিক্ষু আরও বলেছেন, “জনগণের আকাঙ্ক্ষা হলো মাহিন্দা রাজাপাকসার আশীর্বাদ নিয়ে গোতাভায়া রাজাপাকসা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিবেন এবং দেশকে নেতৃত্ব দিবেন”। সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য অনেকটাই আগাম প্রচারণা শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগ দিয়ে তিনি তার মার্কিন নাগরিকত্ব ছেড়ে দিবেন।
শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত জর্ন রোডকে উদ্ধৃত করে মিডিয়ায় বলা হয়েছে, তিনি হিটলারকে নিয়ে করা মন্তব্যকে ‘জঘন্য’, ‘সুস্পষ্ট বিকৃতি’ এবং ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে গোতাভায়া রাজাপাকসা নিজে বিবৃতির স্বপক্ষে কিছুটা ক্ষীণকণ্ঠে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে বলেছেন ভিক্ষু কি বলতে চেয়েছেন, সেটা তিনি বুঝেছেন এবং ‘এমনকি বুদ্ধও বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে বাণী প্রচার করতেন’।
প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা এই পরিস্থিতি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন এবং শপথ করেছেন যে তিনি কোনভাবেই একনায়ক ব্যবস্থায় ফিরে যাবেন না। তিনি দাবি করেছেন যে তিনি দেশে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। অন্যদিকে এ বক্তব্যে খুব অল্প কয়েকজন সরকারি মন্ত্রীই কেবল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
পেট্রোলিয়াম রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রী অর্জুনা রানাতুঙ্গা বলেছেন, “আমাদেরকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে যারা হিটলার ধরনের নেতৃত্ব চালু করতে চায় যারা অন্যান্য জাতি ও ধর্মকে অসম্মান করে”। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন শ্রীলঙ্কার সামরিক একনায়কের প্রয়োজন নেই কারণ এখানে বৌদ্ধ নীতি ও সংস্কৃতি অনুযায়ী সরকার পরিচালিত হয়।
শিক্ষামন্ত্রী আখিলা বিরাজ কারিয়াবাসাম হিটলার আর গোতাভায়া রাজাপাকসার মধ্যে মিলগুলো তুলে ধরেন। কারিয়াবাসাম বলেন, “হিটলার আর গোতাভায়া উভয়েই নিরামিষভোজি। একইভাবে, তারা দুজনই বিদেশী নাগরিক। হিটলার জার্মান নাগরিক ছিলেন না আর রাজাপাকসাও আমেরিকান নাগরিক”।
নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে এক প্রেস রিলিজে ভিক্ষু ভেন্দারুয়ে উপালি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, তিনি হিটলারের ‘বর্বর আচরণের’ পক্ষে কিছু বলেননি এবং শুধু ‘হিটলার’ শব্দটি নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারণার মাধ্যমে তার ৩০ মিনিটের বক্তব্যকে ‘রাজনীতিকিকরণ’ করা হয়েছে।
বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম অথবা হিন্দু যে কেন ধর্ম অথবা অন্য যে কোন ধর্মের সঠিক চিন্তাধারার নেতারা এটা নিয়ে অবাক হবেন যে, কিভাবে একজন ধর্মীয় নেতা দৃঢ় নেতৃত্বের উদাহরণ হিসেবে হিটলারের নাম নিতে পারেন। তা তিনি যদি একনায়কের বদলে দৃঢ় নেতৃত্বও বুঝিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও এটা অস্বাভাবিক।
যাদের ইতিহাস সম্পর্কে এমনকি প্রাথমিক ধারণা রয়েছে, তারাও হতবুদ্ধি হয়ে যাবেন – কেন নেলসন ম্যাÐেলা এবং মহাত্মা গান্ধীর মতো ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে একজন বিকৃত মানসিকতার লোক যে কিনা জার্মানিকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিল এবং যার হাতে কোন উন্নয়ন হয়নি – তাকে কেন উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হবে।
দুঃখজনক হলো, শ্রীলঙ্কান ভিক্ষুর মন্তব্যে এটা বোঝা গেছে যে ক্রিমিনালদের কত সহজে শক্তিশালী সরকার পরিচালনার শক্তি হিসেবে তুলে ধরা যায়।
অন্যদিকে, এক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, ভিক্ষুর মন্তব্য (এবং গোতাভায়ার জবাব) যিনি দাবি করেছেন যে তিনি জানেন এ মন্তব্যে কি বোঝানো হয়েছে – এই বক্তব্য গোতাভায়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ বর্তমান কোয়ালিশন সরকার (যদিও গত তিন বছর ধরে অনেকটা বিশৃঙ্খল ও অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে) এটা ব্যবহার করে প্রচারণা চালাতে পারবে এবং এটা বলতে পারবে যে, তারা অন্তত একনায়কসুলভ আচরণ করেনি।
যদিও গত তিন বছরে নানাসারা থেরোর মতো ব্যক্তিদের সমর্থকদের প্রত্যাখ্যান করার মতো সক্ষমতা দেখাতে পারেননি মৈত্রিপালা সিরিসেনা, তবু তার সময়ে সরকার সাদা ভ্যান হাপিশ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতিতে গিয়ে পৌঁছায়নি যেমনটা ২০১৫ সালে হয়েছিল। গোতাভায়া রাজাপাকসা সে সময় প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন।
এটা সবারই জানা যে নানাসারা থেরো এবং তার বোদু বালা সেনা (বিবিএস) সংস্থা রাজাপাকসা সরকারের পতনের পেছনে ভূমিকা রেখেছিল। এই গ্রæপটি মুসলিম-বিরোধী সহিংসতা উসকে দেয়ায় মুসলিম ভোটাররা রাজাপাকসাকে ভোট দেয়া থেকে সরে গিয়েছিল, যারা এক সময় রাজাপাকসার বাধা ভোটার ছিল। আবারও এটা হতে পারে যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আরও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে গোতাভায়া রাজাপাকসার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।
এটাকে সাধারণত ওপেন সিক্রেট মনে করা হয় যে বিবিএস রাজাপাকসাদের সমর্থন পেয়ে আসছে, যদিও প্রকাশ্যে উভয় পক্ষই বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। যদিও রাজাপাকসারা ক্ষমতা হারানোর পর তাদের এ সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনা দেখিয়েছিল, কিন্তু সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো অতীত থেকে তারা শিক্ষা নিয়েছে কি না।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আরও দুই বছর বাকি আছে। এই আশঙ্কা রয়েই গেছে যে বিবিএসের নানাসারা থেরো জামিনে মুক্ত হয়ে এখন চরে বেড়াবেন এবং জাতিগত সহিংসতা ছড়াবেন এবং একটা পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করবেন যেন বৌদ্ধবাদকে অবমাননা করা হচ্ছে এবং এর উপর হামলা হচ্ছে। যদিও রাজাপাকসা সরকারের আমরে নানাসারাকে কারাগারে পাঠানোটা কল্পনা করাও প্রায় অসম্ভব ছিল, কিন্তু এখন যে প্রশ্নটা উঠছে সেটা হলো বিবিএস জেনারেল সেক্রেটারির এই কারাদÐকে ‘বৌদ্ধ ধর্মের জন্য উৎসর্গীকৃত’ এক ব্যক্তির যাতনা ভোগ হিসেবে মহীমান্বিত করা হয় কি না। আর এই মহীমান্বিত করার প্রক্রিয়াটা কিভাবে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে শ্রীলঙ্কায় ‘হিটলারবাদের’ ডাক দেয়। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
আফগানিস্তানে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ২০ আইএসের দায় স্বীকার
ইনকিলাব ডেস্ক : আফগানিস্তানে একটি আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জালালাবাদ শহরে ওই হামলার ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই শিখ স¤প্রদায়ের। পুলিশ জানিয়েছে, তারা একটি গাড়িতে করে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। সে সময়ই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে নানগর প্রদেশে সফর করছেন প্রেসিডেন্ট গনি। আগামী নভেম্বরে দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে দেশের একমাত্র শিখ প্রার্থী বোমা হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন। জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) জানিয়েছে, তারা ওই হামলা চালিয়েছে। কয়েক ঘণ্টা আগেই জালালাবাদে একটি হাসপাতালের উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট গনি। নানগরে তিনি দু’দিনের সফর করবেন। আত্মঘাতী হামলার সময় সেখানে প্রেসিডেন্ট গনি ছিলেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
নানগরের স্বাস্থ্য পরিচালক নাজিবুল্লাহ কামাওয়াল এএফপিকে জানিয়েছেন, হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তারা শিখ স¤প্রদায়ের এবং হিন্দু। ওই হামলায় আরো ২০ জন আহত হয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তানে ভয়াবহ বোমা হামলায় ২০ জন নিহত ও ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় সোমবার ভারত নিন্দা জানিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি আহতদের দ্রæত সুস্থতা কামনা করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আফগানিস্তানের এই দুঃসময়ে ভারত আফগান সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’ দিল্লীতে ভারতীয় শিখ কমিউনিটি জানায়, ওই হামলায় ১১ শিখ নিহত হয়েছে। তারা নিহতদের নাম প্রকাশ করেছে। সূত্র : এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।