নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
যদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি যদি বৃষ্টিতে ভেস্তে না যেতো, কিংবা নিউজিল্যান্ডকে বাগে পাওয়া ম্যাচে যদি জয়টা ধরা দিত! বিশ্বকাপের লিগ পর্বের শেষ দিকে এসে এমনই আক্ষেপের আহ্-উহ্, করতে হতো না বাংলাদেশকে, নিজেদের ভাগ্য থাকতো নিজেদের হাতেই। সেটি হয়নি বলেই এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে, প্রতীক্ষায় থাকতে হচ্ছে অন্যদের জয়-পরাজয়ের উপর। আজ ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচেও অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায়। কামনা করতে হবে ইংল্যান্ডের আরেকটি হার। এরপর করতে হবে নিজেদের কাজ, মঙ্গলবার হারাতে হবে ভারতকে। তেমনই স্বপ্ন নিয়ে পাঁচ দিনের লম্বা ছুটি শেষে গতকাল থেকেই হাল্কা অনুশীলনে নেমে পড়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
আগের সুযোগগুলি হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ এখনও পোড়ায় মাশরাফিকে। তবে সেই দীর্ঘশ্বাস থেকেই নতুন আশার আলো খুঁজছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘অন্য ম্যাচগুলির দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবেই। যতোই ওদিকে মন দিতে না চাই, অজান্তেই খেয়াল চলে যাবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজেদের কাজটুকু করতে পারা। সেদিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া। ভারতকে যদি হারাতে পারি, পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে, তাহলে অন্তত নিজেদের কাজটুকু করতে পারার তৃপ্তি পাব।’ টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট ভারতকে কিভাবে হারানো সম্ভব? মাশরাফির ঝটপট উত্তর, ‘৩০০-৩২০ রানের মধ্যে ওদের আটকাতে হবে। আমরা আগে ব্যাট করলে অন্তত ৩৪০ করতে হবে।’
তবে দীর্ঘদিন থেকেই ব্যাটি-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে অলআউট ক্রিকেট খেলে আসা ভারতকে এত সহজেই কী চেপে ধরা সম্ভব। অতীত বলছে পার্থক্য গড়ে দেবে দল হয়ে খেলতে না পারাটা। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে ‘হোমওয়ার্ক’ সেরে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সবশেষ বিশ্বকাপ থেকে মাঝের এ চার বছর হিসাব করলে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ছয় ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জিতেছে দুই ম্যাচ, বাকি চারটিতে হার। এই চার হারের মধ্যে শুধু একটি ম্যাচই বার্মিংহামের এজবাস্টনে খেলেছে বাংলাদেশ।
অধিনায়কের এই হিসাব অবশ্য এজবাস্টনের উইকেটের আগের ধারণা থেকে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে ভারতের সঙ্গে এখানেই খেলেছিল বাংলাদেশ। ২৬৪ রান তুলে কোনো লড়াই করতেই পারেনি মাশরাফিরা। ৯ উইকেটে হারতে হয়েছে ৫৯ বল বাকি থাকতে। বাংলাদেশ অধিনায়কসহ দলের অনেকের ধারণা, এবারও ব্যাটিং উইকেটই হতে পারে। এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত এই মাঠে যে দুটি ম্যাচ হয়েছে, তাতে চার ইনিংসের একটিও স্পর্শ করতে পারেনি আড়াইশ রান। বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচ কোন উইকেটে হবে, ব্যবহৃত উইকেট নাকি নতুন উইকেট, এসব অনেক কিছুই বিবেচনায় নেওয়া হবে রণপরিকল্পনায়। তবে উইকেট শেষ পর্যন্ত যেমনই হোক, ভারতকে চাপে ফেলার একটি সরল অঙ্ক মাশরাফির জানা আছে, ‘টপ অর্ডার ওদের বড় শক্তি। টপ অর্ডার যত দ্রুত সম্ভব ভেঙে মিডল অর্ডারকে উইকেটে আনতে হবে তাড়াতাড়ি। আর ওদের নতুন বলের বোলারদের উইকেট বেশি দেওয়া যাবে না। দুই রিস্ট স্পিনার কুলদীপ ও চেহেল যখন আসবেন, তখন যেন আমাদের হাতে উইকেট থাকে যথেষ্ট।’
বোলিং বিভাগ তেমন আশাপ্রদ না হলে এমন দলের বিপক্ষে পরে ব্যাট করার চাপ দুই ধরনের- পাহাড়সমান রান তাড়া করতে হতে পারে, আর সেই পাহাড়ে উঠতে গিয়ে গতির আগুনে পোড়া কিংবা স্পিনজালে ফেঁসো যাবার ঝুঁকি থাকে। এর চেয়ে কোনো চাপ না নিয়ে আগে ব্যাট করলেই তো ঝুঁকি কম? এসবই সাধারণ হিসাব-নিকাশ। ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই দায়িত্বটা তামিম ইকবালের ওপরই বেশি বর্তায়। এবার বিশ্বকাপে ভালো শুরু করেও উইকেটে কেন যেন থাকতে পারছেন না তামিম। স্ট্রাইক রেটও শঙ্কা করার মতো জায়গায় নেমে গেছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলটা ভারত হওয়ায় তামিমের আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার কথা।
এই চার বছরে ভারতের বিপক্ষে চার ম্যাচ খেলে দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন তামিম। এর মধ্যে ৭০ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন এই বার্মিংহামেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। আর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস সাকিবের সঙ্গে যুগ্মভাবে তামিমেরই বেশি (৭)।
তামিম-সাকিব-মুশফিক ছাড়া এ চার বছরে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান ন্যূনতম ৫০ রানের ইনিংসও খেলতে পারেননি। এশিয়া কাপ ফাইনালে লিটনের সেঞ্চুরি নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়। অমন একটা ইনিংস খেলতে পারলে বিশ্বকাপে সাকিব-মুশফিকের ওপর থেকে টানা রান করার চাপ অন্তত কিছুটা হলেও কমবে। আসলে ভারতের বিপক্ষে দু-একজনের খেলা নয়, দল হয়ে খেলতে না পারলে যে বিপদ বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বিপদের কথা উঠলে বোলিং বিভাগ নিয়েই বাংলাদেশের ভাবনা বেশি। মুস্তাফিজুর রহমান এ ভাবনা অনেকটাই দূর করে দিতে পারেন; অন্তত ভারতের বিপক্ষে। এ চার বছরে মোস্তাফিজকে খেলতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা ভুগেছেন সবচেয়ে বেশি। এ ৬ ম্যাচে সব মিলিয়ে তাঁর শিকার ১৫ উইকেট। বার্মিংহামে নতুন উইকেটে না খেলালে কাটার-স্লোয়ার ধরার সম্ভাবনাই বেশি। তাতে মুস্তাফিজের চোখ চকচক করে ওঠার কথা। বাকিটা পারফরম্যান্স, যা দেখাতে হবে আসলে গোটা দলকেই।
সেই দায়িত্বটা নিতে চান তরুণ মোসাদ্দেক হোসেনও। কিভাবে কি হবে, সেই খুঁটিনাটি ভাবনা তো টিম মিটিংয়ে থাকবেই। তবে এই অলরাউন্ডারের সোজাসাপ্টা ভাবনা, শ্রেয়তর খেলে জিততে হবে, ‘অবশ্যই ভারত শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে আমি মনে করি, আমরা যে ক্রিকেট খেলে আসছি, সেটি খেলতে পারলে ভালো কিছু হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।