Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বপ্নপূরণের ভেলায় দুঃস্বপ্ন ডেথ ওভার

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে এখনো টিকে আছে বাংলাদেশ। আশা আরও জোরদার করতে আসছে মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ এবার বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। তাদের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করলে সংগ্রহটা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নিতে হবে। নইলে শঙ্কা থেকেই যাবে।

বিশ্বকাপে এবার বাংলাদেশ যে বাজে ব্যাটিং করছে তা নয়। তিন শর বেশি রান তাড়া করে জয়ের নজির এখন পর্যন্ত কেবল বাংলাদেশেরই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও পরে ব্যাটিং করে ৩৩৩ তোলা গেছে। এরপরও সমস্যা থেকে যাচ্ছেই। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেও দ্রুত রান তোলায় বেশ সমস্যা হয় বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের। সেট হতে হতেই চলে যায় কিছুটা সময়। বিশেষ করে ইনিংসের শেষ ২০ ওভার বাকি থাকতে। ক্রিকইনফোর বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৫ সালের জুলাইয়ে পাওয়ার প্লের নিয়ম পাল্টানোর পর থেকে বাকি দলগুলো এ ২০ ওভারে রান তোলায় বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে।

ইংল্যান্ড শেষ ২০ ওভারে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে রান তোলা দল। ওভারপ্রতি ৭.২৬ গড়ে তুলে থাকে দলটি। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের রান তোলার হার সাড়ে ছয়ের আশপাশে। কিন্তু বাংলাদেশ শেষের ২০ ওভারে রান তোলায় তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। ছয়ের নিচে অর্থাৎ ওভারপ্রতি গড়ে ৫.৮৮ করে শেষ ২০ ওভারে রান তুলতে পারে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

২০১৫ বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর থেকে চলতি বিশ্বকাপ শুরুর আগ পর্যন্ত ইনিংসের প্রথম ৩০ ওভারে গড়ে ৫.০৯ হারে রান তুলেছে বাংলাদেশ, যা শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো। ইংল্যান্ড এ ক্ষেত্রে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে (৫.৭৬)। আর শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের ধারেকাছেও কেউ নেই। এই ১০ ওভারে ইংল্যান্ড গড়ে ৮.৪৯ করে রান তুলে থাকে। বাংলাদেশ ইনিংসের এই শেষ ১০ ওভারেই রান তোলায় বড় দলগুলোর চেয়ে পিছিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা (৭.৮৭), অস্ট্রেলিয়া (৭.৮৫), নিউজিল্যান্ড (৭.৭৭), ভারত (৭.৬৯), পাকিস্তান (৭.৫৯), আফগানিস্তান (৭.০৩) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের (৭.০১) পরই রয়েছে বাংলাদেশ (৬.৭৬)। শুধু শ্রীলঙ্কা (৬.৫৭) বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে।

ওয়ানডেতে খেলার ধাঁচ গত সাত-আট বছরে অনেক পাল্টেছে। বড় দলগুলো এখন ৩০ ওভার শেষ হলেই ‘বিগ হিটার’ নামিয়ে থাকে। কারণ, শেষ ১০ ওভারে অতিরিক্ত একজন ফিল্ডার সীমানায় থাকেন। আর এই ‘ডেথ ওভার’-এ বোলাররা, বিশেষ করে পেসাররা ইয়র্কার ডেলিভারি বেশি করে থাকেন। তাতে রান তোলাটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর তাই ৩০ থেকে ৪০- এ ১০ ওভারকে কাজে লাগাতে বিগ হিটার নামিয়ে থাকে বড় দলগুলো। দ্রুত রান তোলায় বাংলাদেশের সমস্যা ঠিক এখানেই। দলে স্বীকৃত কোনো বিগ হিটার নেই। প্রায় সবাই প্রথাগত ব্যাটসম্যান, সেট হওয়ার পর স্ট্রোক খেলে থাকেন।

আফগানিস্তান ম্যাচের আগে এ বিশ্বকাপে ৩১ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক বল খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তাঁর স্ট্রাইকরেট ৭৪; যেখানে জস বাটলারের ১৪০, উসমান খাজার ১১৮ এমনকি সরফরাজ আহমেদের স্ট্রাইকরেটও ১০০ ছুঁইছুঁই- ৯৩.৫২। তবে বিশ্বকাপে শেষ ১০ ওভারে মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইকরেট বেশ সন্তোষজনক- ১৪৪। তবে তুলনা করলে বাটলার, হার্দিক পান্ডিয়া আর এউইন মরগান তাঁর চেয়ে এগিয়ে (ইনিংসের এ সময় অন্তত ৪০ বল খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে)।

সমস্যা হলো উইকেটের অন্য প্রান্তে স্বীকৃত কোনো বিগ হিটার পাচ্ছেন না মাহমুদউল্লাহ। ২০১৬ সাল থেকে মাহমুদউল্লাহর কাঁধে বিগ হিটিংয়ের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার পর তিনি একেবারে খারাপ করছেন না। কিন্তু দল বিপদে পড়লে তাঁকে খোলসে ঢুকতে হয় এটাও সত্য। উইকেটে সেট হওয়ার পর ধীরে ধীরে হাত খুলতে হয়। তখন অন্য প্রান্তে কোনো বিগ হিটার থাকলে দ্রুতগতিতে রান তোলাটা সুবিধা। বাংলাদেশ দলে তেমন কেউ নেই। ভারতের কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়াও হার্দিক পান্ডিয়া আছেন। তা ছাড়া ভারতের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ খেলবেন কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়। চোটে ভুগছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ না খেলতে পারলে টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো তাঁর জায়গায় সাব্বির রহমানকে ভাবতে পারে। বিকল্প যিনিই হোন না কেন, এটা সত্যি যে ব্যাটসম্যানদের ওপর দায়িত্বটা তাই অনেক বেশি। খোলাসা করে বললে, ভারতের বিপক্ষে বড় রান তোলার দায়িত্ব নিতে হবে নিখাদ ব্যাটসম্যানদেরই।

একদিকে যখন এই দুঃস্বপ্ন তাড়া করে ফিরছে দলকে ঠিক তার বীপরিত আরকে দুশ্চিন্তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। যেখানেই দুর্বলতা সেই ডেখ ওভারেই নির্বিষ বোলিং করে প্রতিপক্ষকেও বাড়তি রান করার সুযোগ করে দিচ্ছেন মাশরাফিরা!

অধিনায়কের হাতে অস্ত্রের অভাব নেই। সাইফউদ্দিন দুর্দান্ত বোলিং করছেন। মুস্তাফিজুর রহমানও আপ টু মার্ক। স্পিনে সাকিব অনবদ্য। মিরাজ বরাবরের মতোই ইকোনমি। মোসাদ্দেক তৃপ্তি দিচ্ছেন পুরো দলকে। তবে ছয় ম্যাচে মাত্র এক উইকেট মাশরাফির নামের পাশে যেন একেবারেই বেমানান। ডেথ ওভারের এই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠে যদি নিজের সেরা ফর্মটা ফিরে পান অধিনায়ক তবে যে সোনায় সোহাগা। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে শুরুর ধাক্কাটা যে তাকেই দিতে হবে!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ