প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
গত ৯ জুন ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে রেকর্ড করা ব্যবসা সফল সিনেমা তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত বেদের মেয়ে জোসনা সিনেমার মুক্তির ৩০ বছর। ১৯৮৯ সালের ৯ জুন সিনেমাটি মুক্তি পায়। কথিত আছে মাত্র ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিনেমাটি ব্যবসা করে ২৫ কোটি টাকারও বেশি। এমন রেকর্ড অতীতেও দেশের চলচ্চিত্রে অন্য কোনো সিনেমা করতে পারেনি। আগামি এক দশকে বা তারও বেশি সময়ে করতে পারবে কিনা সন্দেহ। সিনেমাটির নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন এবং নায়িকা অঞ্জু ঘোষ। এ সিনেমায় অভিনয় করা এবং মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতাসহ খুটিনাটি বিষয় নিয়ে অজানা অনেক কথা সম্প্রতি গণমাধ্যমে কথা বলেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো। ইলিয়াস কাঞ্চন শুরু করেন এভাবে, এ সিনেমায় আমার কাজ করার কথাই ছিল না। সিডিউল ছিল না। সে সময় ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর নায়ক আমি। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে। ৩ বছরের অগ্রিম সিডিউল বুকড। এ সময় আমার কাছের এমন কিছু মানুষ সিনেমাটি করার প্রস্তাব নিয়ে আসেন যে, না করতে পারিনি। আর সিনেমাটির পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুলেরও এক কথা, আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে কাজটি করবেন না। বকুলের এটাই ছিল প্রথম সিনেমা। আমার অনেক সিনেমায় প্রধান সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। মতিউর রহমান পানু ও দারাশিকোর প্রধান সহকারী ছিলেন। দারাশিকোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল বাব-ছেলের মতো। তিনি আমাকে অনেক পরামর্শও দিতেন। তারা আমাকে সিনেমাটি করার জন্য খুব করে ধরলেন। বিশেষ করে দারাশিকো। তার কারণেই সিনেমাটি করতে সম্মত হই। তবে সিডিউল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হলো। কিছুতেই মিলাতে পারছিলাম না। সে সময় আমি ও দারাশিকো বোনের মতো বোন নামে একটি সিনেমা প্রযোজনা করছিলাম। তিনি এসে বললেন, বকুল তোমাকে ছাড়া সিনেমাটি করবে না। ওর প্রথম চলচ্চিত্র। হিরো, আপনি পরের মাসে বোনের মতো বোন-এর সাত দিনের যে সময় আছে সেটা তাকে দিয়ে দেন। আমি বললাম, এটা হলে তো আমাদের সিনেমা মুক্তি দিতে পারব না। তিনি আমাকে যুক্তি দিয়ে বললেন, অনেক প্রযোজক সিনেমার সিডিউল মিস করে। আমাদেরটা না হয় মিস হলো। পরে আমরা কাজ করে নিতে পারবো। এভাবেই বেদের মেয়ে জোসনার কাজ শুরু করি। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, অথচ শুরুতেই প্রযোজক আব্বাস উল্লাহ হিরো হিসেবে সাত্তারকে চুক্তিও করেছিলেন। পাঁচ হাজার টাকা বুকিং মানিও তাকে দেয়া হয়। কিন্তু পরিচালক বকুলের এককথা, আমাকে ছাড়া সে সিনেমা করবে না। সিনেমাটির শুরুতে টানা ৭ দিন কাজ করি। এফডিসিতে রাজদরবারের সেট তৈরি করা হয়। এখানেই রাজদরবারের শূটিং হয়। পাশাপাশি সাপে আমাকে দংশন করা, ওঝা ও বিষ নামানোর দৃশ্যগুলোও সেখানে হয়। সিনেমাটির শূটিংয়ের মধ্যেই বুঝতে পারি, এটি হিট হতে যাচ্ছে। তবে এভাবে সুপারহিট হবে, ভাবিনি। সিনেমার কিছু দৃশ্য মনে দোলা দেয়, যা পরবর্তীতে দর্শকদেরও আলোড়িত করে। আমাকে সাপে কাটলো। বাবা ঘোষণা দিলেন, যে আমাকে সারিয়ে তুলতে পারবে, সে যা চাইবে তাকে তা দেয়া হবে। এ সময় মরণ বীণ বাজাতে এগিয়ে আসে অঞ্জু। এ বীণ বাজালে সাপ এসে বিষ চুষে নেবে। রক্তবমি হয়ে অঞ্জুর মৃত্যু হবে। পরিবারের বাধা সত্তে¡ও অঞ্জু বীণ হাতে নেয়। এত জীবনঘনিষ্ঠভাবে দৃশ্যগুলো পরিচালক ফুটিয়ে তোলেন, যার প্রভাব আমরা হলেও দেখি। এ দৃশ্য আসার সঙ্গে সঙ্গে হলের দর্শকরাও মনের অজান্তে নিজেদের চুলের বাঁধন খুলে ফেলেন। যেন সাপ আসে, রাজকুমার বেঁচে ওঠে। সিনেমায় অঞ্জুর যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে কাঞ্চন বলেন, সে সময় অন্য বেশ কয়েকজন নায়িকা ব্যস্ত। অঞ্জু ঘোষের টানা ১৯টি চলচ্চিত্র ফ্লপ। তাকে নিয়ে অনেকেরই আপত্তি। অন্যদিকে আমি বছরের ১৯-২০টি করে চলচ্চিত্র করছি। প্রায় সবই সুপারহিট। বাজারে কানাঘুষা ছিল বেদের মেয়ে জোসনা অঞ্জুর ২০তম ফ্লপ সিনেমা হবে এটি। সঙ্গে আমিও ডুবতে যাচ্ছি! তবে অঞ্জু মনপ্রাণ দিয়ে এটির কাজ করে যান। যার ফল সবাই জানেন। বাস্তবতা হচ্ছে, নির্মাণ হওয়ার পর সিনেমাটি চালাতে কষ্ট হয়েছিল। ঢাকার বাইরে অল্প কয়েকটি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। চট্টগ্রামে মুক্তি পায়নি। পরিচালক আবুল কাশেমের চট্টগ্রামের সিনেমা হলগুলোতে সিনেমাটি চালানোর কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি বেঁকে বসলেন। টানা ১৯ ছবির ফ্লপ নায়িকা, সঙ্গে নতুন পরিচালক, সব মিলিয়ে তিনি সিনেমাটি চালাতে রাজি হননি। প্রযোজক আব্বাস উল্লাহ রাগে হাত দিয়ে টেবিলের গ্লাস ভেঙে ফেলেছিলেন। তবে মুক্তির পর প্রথম দুই দিন যারা সিনেমাটি দেখেছিলেন, তারা মুখেই এর প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। সিনেমাটির মুক্তির দিন আমি খুলনা ও রাজশাহীতে গিয়েছিলাম। সিনেমাটির ২৫ কোটি টাকার ব্যবসা প্রসঙ্গে বলেন, এটার সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই। বলাটাও মুশকিল। তবে কেমন ব্যবসা করেছে তার একটা উদাহরণ দিলেও বোঝা যাবে। সিনেমাটির মুক্তির আগেই আমরা এর গান বিক্রি করে দিতাম। অঞ্জু ঘোষের অবস্থা তখন খুব একটা ভালো নয়। টানা ১৯টি চলচ্চিত্র ফ্লপ। সিনেমা হিট হবে না ভেবে এক অডিও ব্যবসায়ী সিনেমাটির অডিও কিনেও পরে তা ফিরিয়ে দেন। পরে যিনি কিনেছিলেন তার নামটা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তিনি এই অডিওর লাভেই এক কোটি টাকার একটি বাড়ি কিনেছিলেন। আর আগের ভদ্রলোক (যিনি বুকিং দিয়েও টাকা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন) তিনি তো প্রায় পাগল প্রায় অবস্থা। টানা ৬ মাস তিনি অসুস্থ ছিলেন। শরীর একটু ভালো হলেই শুধু বলতেন, এটা আমি কী করেছি!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।