ইবি ভিসির অফিসে তালা, অডিও ক্লিপ বাজিয়ে আন্দোলন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের অডিও ফাঁসের ঘটনায় তৃতীয় দিনেও ভিসি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক পিটার জেভিয়ার রোজারিওর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন সংগঠনটির সাবেক এক সদস্য। আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ আনেন। এসময় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগপত্র দায়ের করবেন বলেও জানানো হয়।
অভিযোগকারী ওই সাবেক সদস্যের নাম শাহনাজ পারভীন জোনাকী। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতোকোত্তর শিক্ষার্থী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, গত ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি ক্যাম্পাস থেকে রিক্সায় করে বাসার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সচিবালয়ের সামনে তার সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পিটার তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন।
এ ঘটনায় তিনি চলচ্চিত্র সংসদ বরাবর একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি আর আশা একসাথে বাসায় ফিরতাম। আমার বাসা ছিল ডেমরা আর আশার পুরান ঢাকা একসাথে আমরা গুলিস্তান পর্যন্ত যেতাম প্রায়ই। একদিন আশা আর আমার সাথে পিটার যাবে বলে। ওর বাসাও পুরান ঢাকাতে। আমরা তিনজন রিকশা নেই। পিটারের নিচে বসি আমি। মাঝপথে হঠাৎ আমি খেয়াল করি পিটার আমার পেটে হাত দিচ্ছে। আমি ভেবেছি ও পেছনে পড়ে যাচ্ছে হয়তো তাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু যখন ও সিক্যুইজ করে আমার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। এবং ওর হাত আরো উপরে উঠার আগেই আমি হাত সরায় দিয়ে বলি আমি নামবো এখনি। পিটার তখন আমাকে জড়ায় বলে দোস্ত নামবি কেন? কী হইছে। ওর এহেন অসভ্য আচরণে আমি জলদি নামি। আশা আমাকে বলে তোর স্ট্যান্ড তো সামনে তুই এখানে কেন নামবি। আমি বলি নাহ আমি নামবো। পিটার আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলো। ওকে আমি এত বিশ্বাস করতাম। আমি মেন্টালি প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘বাসে উঠে শিশিরি তৌসিফ আর বর্ষন ভাইকে (সংগঠনটির সিনিয়র) জানাই। পরদিন সৈকত রায়ান ভাইকে জানাই। তিনি তখন জিএস। উনি জেনারেল মিটিং কল করেন। পিটার আমার কাছে ক্ষমা চায়। আমি বলি আমি কালকে এবিউজড হয়ে আজকে তাকে ক্ষমা করে দেই ক্যামনে। আমি বলি ওকে ব্যান করা হোক। সৈকত ভাই আমার কথা রাখেন। সবার সামনে ওকে বলা হয় ও যাতে আর না আসে। পরদিন সকালে রুমে গিয়ে দেখি পিটার বেহাল তবিয়তে বসে আছে। আমি রেগে বেড়িয়ে যাই। সকালে শুনি রাতে একটা মিটিং সিফাত ভাই ডাকসে। ভাবলাম আমি ভিক্টিম আমাকে তো ডাকাই হবে। সেই মিটিং শুরু হতে হতে রাত ১১ টা। আমি বাড়ি চলে যাই।’
অভিযোগপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘পরদিন শুনি তৌসিফকে বের করে দেওয়া হইছে। পিটারকে ব্যান করা হয় নাই। আর বলা হইছে আমাকে নাকি শিখানো হইছে এসব মিথ্যা অভিযোগ দিতে। আমি নাকি আই ই আরেও এমন অনেক ছেলেদের সাথে করছি। আমার বন্ধুরা তাদের বড় ভাইদের এসব কথায় কোন উচ্চবাচ্য করে নাই। আমি দস্যি-নস্যির পুরো ব্যাচের উপর আস্থা হারায় ফেললাম। আমার মেয়ে বন্ধুগুলোও আমার পাশে দাঁড়ায়নি। আমি সব ভুলে গেছি। সবাইকে বলি ডিইউএফএস ছাড়া আমার বেস্ট সিদ্ধান্ত। কিন্তু এরপর দেখি জুনিয়ররা পিটারের কত বড় ফ্যান। তারপর শুনি ও নাকি সেক্রেটারি। আমি ভেংগে পড়ি আবার।’
ঘটনার ৪ বছর পর কেন অভিযোগ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাবি চলচ্চিত্র সংসদেও যৌন হয়রানী যারা করে তাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়। আমি দ্বিতীয় বর্ষে যখন পিটারের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলাম তখন বিচার পাইনি। উল্টো আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন আগেই জানলাম সেই যৌন হয়রানকারী পিটার এখন চলচ্চিত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক।
জোনাকী আরও বলেন, আমার অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকদিন আগে এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার রিপোর্টে তদন্তকারীরা মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন। আমি এই রিপোর্ট প্রত্যাক্ষাণ করছি।
এ বিষয়ে চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি কাইয়ুম জয় বলেন, ঘটনার শুরুতে পিটারকে বহিষ্কার করা হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে সে ভোটাভুটির মাধ্যমে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়। কিন্তু এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে পিটার দোষী কি নির্দোষ সেটা প্রমাণ করা যায়নি। আমরা একটি সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট সেল গঠন করেছি। কয়েকদিন পর তারা একটি প্রতিবেদন দিবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।