পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
‘যুক্তরাষ্ট্রের হুকুম তামিল করা হবে না’, শুধু জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা মান হবে- ইরানের ব্যাপারে এমন নীতি থেকে সরে এসে ভারত এখন ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে এবং ইরানের অর্থনীতিকে পঙ্গু ও দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করার মার্কিন নীতি অনুসরণ শুরু করেছে। সেই সাথে ভারত তার আফগান নীতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এতদিন তারা আফগানিস্তানের যুদ্ধ অবসানে লক্ষ্যে যেকোন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ‘তালেবানদের সঙ্গে কোন আলোচনা নয়’ নীতি অনুসরণ করলেও এখন সেখান থেকে সরে এসেছে। ভারত এখন বিশ্বের এই অংশ তথা ইরান ও আফগানিস্তানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পুরোপুরি অনুসরণ করছে। এটা একটি তাৎপর্যপূর্ন অগ্রগতি। শুধু ভারতের ভৌগলিক সীমাবদ্ধতা এবং আফগানিস্তানে গুরত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপস্থিতির কারণেই নয়, তালেবানদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক নিস্পত্তিতে আসা এবং তালেবানদের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি নতুন করে গতি লাভ করেছে। এমনকি এই ইস্যুটি এখন আগের মতো ততটা বিতর্কিতও নয়।
এই বড় ধরনের অবস্থান পরিবর্তন এবং তালেবানের সঙ্গে যে কোন সম্ভাব্য নিস্পত্তির আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের দাবি থেকে সরে এসে ভারতের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী স¤প্রতি এসসিও’র বৈঠকে বলেছেন যে, ‘নারী-পুরুষ সমতা ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তার পাশাপাশি একটি ঐক্যবদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তমূলক ও অর্থনৈতিকভাবে অনুরণনশীল জাতি হিসেবে আফগানিস্তানের উত্থানে সহায়ক হয় এমন যেকোন ব্যবস্থার পক্ষে রয়েছে ভারত।’ এর মানে হলো, ভারত এতদিন আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য ‘আফগান নিয়ন্ত্রিত’ শান্তি প্রক্রিয়ার যে দাবি জানিয়ে আসছিল তার উপর জোর দেয়া তেমন সুবিধার নয় বলে এখন মনে করছে। ফলে যে প্রশ্নগুলো দাঁড়ায়: ভারত যা বলছে সেগুলোর গুরুত্ব যাই থাক না কেন, দেশটির এই নীতি পরিবর্তনের পেছনে সত্যিকারের কারণটি কি? কী তাকে অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করেছে? স্পষ্টত, এর একটি উত্তর হলো, ভারত বুঝতে পেরেছে যে রাজনৈতিক ক্ষমতায় তালেবানদের প্রত্যাবর্তন অনিবার্য। তারা বুঝতে পেরেছে এখনই তাদের অবস্থান বদল করে তালেবানের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলার উপযুক্ত সময়। নিস্পত্তি-পরবর্তী আফগানিস্তানে অবধারিতরূপে তালেবানরাই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হতে যাচ্ছে বলেও ভারত বুঝতে পেরেছে।
আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গ্রুপসহ সকল বড় রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণে একটি সম্ভাব্য চূড়ান্ত চুক্তির পথে দেশটি দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে বলে খবর প্রকাশের পর ভারত যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ‘আফগান নিয়ন্ত্রিত’ শান্তি প্রক্রিয়ার দাবি অব্যাহত রাখে তাহলে সে নিজের পায়েই গুলি করবে।
আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলীও ভারতকে তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য করেছে। স¤প্রতি আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেছে যে সেপ্টেম্বরে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত, এমনকি নির্বাচনের নতুন কোন তারিখ ঘোষণা করা হলে ততদিন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। এতে ভারত এই ভেবে কিছুটা সান্তনা পেতে পারে যে সংলাপ প্রক্রিয়ায় অন্তত ঘানির নেতৃত্বাধীন ভারতপন্থী রাজনৈতিক এলিটদের উপস্থিতি রয়েছে। তারা চূড়ান্ত ফলাফলের উপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন যাতে পাকিস্তানপন্থী তালেবানদের সম্ভাব্য আধিপত্য বিস্তারের ফলে কৌশলগতভাবে অসুবিধাজনক ভূখন্ডটির রাজনৈতিক দৃশ্যপটে কিছুটা হলেও সুবিধা পাওয়া যাবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো চুক্তিটি ইতোমধ্যে পাইপলাইনে ঢুকে গেছে এবং মাইক পম্পেওসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা কাবুলের ক্ষমতাসীনদের জানিয়ে দিয়েছেন যে দোহায় ‘আন্ত:আফগান’ সংলাপের পরবর্তী রাউন্ডেই সফলতা আসছে। এ অবস্থায় ভারতের সামনে তার অবস্থান পরিবর্তন করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।
তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হওয়ার পর ভারত যেভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তা ঘোচানোর জন্যও এর প্রয়োজন ছিলো। সত্যিকারের বিষয় হলো, ভারত ছাড়া আর সব বড় বড় শক্তি – যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া – অতীতে তালেবানের সঙ্গে সফল ও প্রত্যক্ষভাবে আলোচনায় জড়িত হয়েছে। তারা আফগানিস্তানসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে পারে এমন একটি নিস্পত্তিতে পৌছার জন্য আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। ভারত এখন পর্যন্ত সেখানে বাদ পড়াদের দলে এবং সে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের মতো বাইরের শক্তিগুলোই নয়, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ খেলোয়াড়দের মধ্যেও গড়ে ওঠা শান্তির ব্যাপারে ঐক্যমতের অংশ নয়।
এখন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে নিশ্চিত যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাহলো: শান্তি এক নাম্বার অগ্রাধিকার। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরেও হতে পারে। স¤প্রতি মস্কোতে গিয়ে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এক সাক্ষাতকারে তুর্কি মিডিয়াকে বলেন, ‘প্রথমে শান্তি। এখন আমাদের অগ্রাধিকার হলো আফগানিস্তানে শান্তি। শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হলে আমরা আরো ভালোভাবে নির্বাচন করতে পারবো”।
আমরা এর আগে সাউথ এশিয়ান মনিটর-এ প্রকাশিত অনেক নিবন্ধে বলেছি যে, কারজাই ও আরো অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তির বক্তব্যের ঠিক বিপরীতে ভারতের অবস্থান। তাই নয়া দিল্লির কিছুটা বাস্তব উপলব্ধি থেকে ভারতের অবস্থানের এই পরিবর্তন নয়; বরং আলোচনার মাধ্যমে আফগানিস্তানে যে নিস্পত্তি হতে যাচ্ছে তা থেকে বিচ্ছিন্ন ও বাদ পড়ে যাওয়ার আশংকা এড়াতে চাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশটি। সূত্র : এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।