পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গতকাল ১৭ মে ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরেন। তিনি ফিরেন একা। একদিকে পুরো পরিবার হারানোর অসীম বেদনা, অন্যদিকে দেশের মানুষের প্রতি পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত দায়বদ্ধতা পূরণের দায়িত্ব নেয়ার বিশাল ভার নিয়ে তিনি দেশে ফিরেছিলেন। তার দেশে ফেরা সহজ ছিল না। জীবনের ঝুঁকি ছিল। তারপরও শুধু দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে নিজের জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে তিনি দেশে ফিরেছিলেন। দেশে ফিরেই সংগ্রামী মানুষের সাথে তার রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু হয়। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পথচলার দিকে তাকালে দেখা যায়, বিশাল রাজনৈতিক পরিবার এবং বলয়ের মধ্যে বেড়ে উঠলেও এই পথটি কোনোভাবেই তার জন্য কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। প্রতি পদে পদে জীবনের হুমকি এবং বাধা মোকাবেলা করে চলতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীণ এবং বিশাল দলের দায়িত্ব তার হাতে ন্যাস্ত হয়। চরম সংকটকালে তাঁর নেতৃত্বে দিয়ে দলটি প্রাণ ফিরে পায়। দলের নেতা-কর্মীদের অসীম ভালবাসা এবং সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনা তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পথ চলে এসেছেন এবং এগিয়ে চলছেন। বলা বাহুল্য, শেখ হাসিনা যদি দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, তবে দলটির আজকের অবস্থান এবং যে চার চারবার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে, তা হয়তো সম্ভব হতো না।
দলের প্রধান কিংবা প্রধানমন্ত্রী-যে পদেই থাকুন না কেন, শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়তাসম্পন্ন এমন নেতৃত্ব বাংলাদেশে খুব কম রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যেই দেখা যায়। তাঁর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে, তবে তা পরিবর্তন, পরিমার্জন করার মতো দৃঢ়তা দেখানো সম্ভব নয়। কারণ তিনি জেনেবুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এসব সিদ্ধান্ত দল ও দেশের কল্যাণকে সামনে রেখেই তিনি নিয়ে থাকেন। বর্তমানে দেশে যে ধারার রাজনীতি চলছে, তাকে বিরোধীরা নানাভাবে আখ্যায়িত করলেও তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচলিত নন। সমালোচকরা সমালোচনা করবে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা করবে-এটা মাথায় রেখে এবং তা খুব একটা আমলে না নিয়েই তিনি তাঁর লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছেন। কারণ বিভ্রান্তকারী এবং বিরোধী দলের বিরোধিতাকে বেশি প্রাধান্য দিলে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিষয়টি থমকে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্তে অটল থেকেই এখন দেশ পরিচালনা করে চলেছেন। দেশকে তিনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দ্বাড় করাবেন, এ লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে তাঁর কথার বাইরে কোনো কিছুই হয় না। এখন এমন একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে যে, কেউ কারো কথা শুনতে চায় না। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি সর্বত্র এ প্রবণতা রয়েছে। দেখা যায়, এসব বিষয়েও সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হতে হয়। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তাঁর পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের এমন দূরদর্শীতার কারণে সারাবিশ্বে তাঁর নেতৃত্ব প্রশংসিত হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম সেরা নেতা হিসেবে তিনি পরিগণিত হচ্ছেন। তাঁর অর্থনীতি ভিত্তিক উন্নয়নের রাজনীতি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে ৮ শতাংশে পৌঁছা, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়া, বিভিন্ন মেগা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া এবং তা বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসা, অর্থনৈতিক শিল্প এলাকা গড়ে তোলার মতো অর্থনৈতিক অগ্রগতির যাত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এগিয়ে চলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক যুদ্ধে লিপ্ত। অর্থনীতির দিক থেকে কে কার চেয়ে বেশি এগিয়ে যাবে, এটাই এ সময়ের বিশ্ব রাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এখন অর্থনৈতিক যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে যে এগিয়ে যাবে, সেই বিশ্ব নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমরাও এই যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি যথার্থ উপলব্ধি করেই উন্নয়নের রাজনীতিকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ প্রথাগত রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। তারা অর্থনৈতিক মুক্তি ও উন্নতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তবে তারা রাজনীতির এ পরিবর্তন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই চায়। গণতন্ত্র এবং অর্থনীতি-দুটোকেই সমান্তরালে দেখতে চায়। আমাদের দেশের রাজনীতিও বদলে গেছে। প্রথাগত রাজনীতি বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অর্থনৈতিক উন্নতি ও মুক্তি পেতে হলে আমাদের ট্র্যাডিশনাল যে রাজনীতি তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবে তা করতে গিয়ে গণতান্ত্রিক ধারাটি যাতে ব্যাহত না হয়, এ দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। তা নাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বিচ্যুতি থেকে যাবে। টেকসই উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। অর্থনীতির পরিধি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বৈষম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে তাল মেলাতে না পেরে অনেকে পিছিয়েও গেছে। বাংলাদেশ অর্থনীতির দিক থেকে এখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে। বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে ভারতকে বাংলাদেশ পেছনে ফেলে দেবে। বলা বাহুল্য, দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগার’, ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ এসব খ্যাতি এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তাতে স্থির থাকা এবং তার বাস্তবায়ন যে কঠিন থেকে কঠিনতর কাজ, এ কাজটি তিনি সহজেই করতে পারছেন। বলা যায়, বিগত এক দশকে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্ব রাজনীতি এবং এর গতিপ্রকৃতি বুঝে বাংলাদেশকে কীভাবে পরিচালনা করতে হবে, সেভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন। এখন কারো পক্ষেই পুরনো রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা নিয়ে রাজনীতি করা সম্ভব না। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশের আজকের যে উন্নয়ন এবং পরিবর্তন তা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো এমন সাহসী নেতা বিশ্বে বিরল। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থ্যতা ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।