পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামবিদ্বেষী কিছু ব্যক্তি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং বিব্রত করতেই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন। মাদরাসা শিক্ষকদের একক ও সর্ববৃহৎ সংগঠনটির সভাপতি বলেন, যেখানে বিশ্বব্যাংক শিক্ষাখাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে বলছে, সেখানে নতুন করে অর্থ কর্তনের বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। যারা এটা পরামর্শ দিয়েছেন তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা সরকারকে সমর্থন করি কিন্তু ভুল সিদ্ধান্তের বিরোধী। আমরা সরকার ও শিক্ষকদের পক্ষে। বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্রের পক্ষে নই। গত পহেলা মে বুধবার রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জমিয়াত সভাপতি বলেন, সরকারের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু বেতন কর্তনের বিষয়টিতে মনে হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক কোনো ভুল ভ্রান্তি। বা যে সমস্ত সংগঠন স্বাভাবিকভাবে এগোতে পারছে না তারাই হয়তো এরকম পরামর্শ দিয়েছে। তারা নিজেদেরকে জাহির করতে চায়। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছেÑ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শিক্ষাখাতে সবচেয়ে কম খরচ করে। তাদের কাছে সরকারকে বলতে হয়েছে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াবে। যেখানে বিশ্বব্যাংক শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলছে, সেখানে নতুন করে শিক্ষকদের বেতন কর্তন করা চলবে না। এটা সরকারকে বিভ্রান্তকর অবস্থায় ফেলার অপচেষ্টা।
স্কুল-কলেজের তুলনায় মাদরাসার উন্নয়ন কম হয়েছে জানিয়ে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ কাজ করেছে। তবে স্কুল-কলেজে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে সেই তুলনায় মাদরাসার উন্নয়ন ৫ শতাংশও হয়নি। এখনো অনেক কিছু বাকি রয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, অভিযোগ করে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ফেনীতে নুসরাত জাহান রাফির যে ঘটনা, সেখানে যে শিক্ষক জড়িত তিনি একজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী হিসেবে কাজটি করেছেন। এটা একটা রাজনৈতিক অপরাধ। ওনার সাথে যতগুলো লোক জড়িত সব আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। মাদরাসার কমিটি থেকে শুরু করে প্রতিটা ব্যক্তি রাজনীতির সাথে জড়িত। প্রিন্সিপাল নিজেও একটা দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত যেখানেই রাজনৈতিকভাবে মার খেয়েছে, সেখানেই সরকারের সাথে আঁতাত করে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো তারা রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। ফেনীতেও এমন ঘটনা হয়েছে। এটি পলিটিক্যাল ক্রাইম। তাদের রাজনৈতিক অপরাধের দায়-দায়িত্ব দেশের আলেম সমাজ-মাদরাসা শিক্ষকরা নেবে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
জমিয়াত সভাপতি বলেন, টেলিভিশন, টকশো, পত্র-পত্রিকায় ফেনীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেসব লেখালেখি হচ্ছে সেখানে ধর্ষণকে বড় করে দেখা হয়নি। মাদারাসা শিক্ষাকে বড় করে প্রচার করা হচ্ছে। তাদের কাছে ধর্ষণ কোনো বিষয় নয়। বড় বিষয় হলোÑ সেটা মাদরাসার ঘটনা। কিন্তু প্রতিদিন সারাদেশে এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। সেগুলোকে আলোচনায় তেমন আনা হয় না। মূলধারার গণমাধ্যম, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা কেউ এটা বলছে না যে, ফেনীর ঘটনাটি একটি ক্রাইম। এর সাথে মাদরাসা শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডে যখন মসজিদে গুলি করে মানুষ মারা হলোÑ সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী বললেনÑ হামলাকারী খ্রিস্টান কিংবা অন্য কিছু না তিনি একজন সন্ত্রাসী, একজন অপরাধী। ফেনীর ঘটনায় সেটি বলা হলো না। এখানে দোষ দেয়া হলো মাদরাসা শিক্ষা ও আলেম সমাজকে।
বহুদিন থেকেই মহল বিশেষ মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। অভিযোগ করে মাদরাসা শিক্ষক সংগঠনটির সভাপতি বলেন, মাদরাসা শিক্ষাকে সঙ্কুচিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বর্তমান সমাজে মাদরাসা শিক্ষা কি ভূমিকা রাখছে এবং রাখতে পারে সে বিষয়ে কেউ কথা বলছে না। এই সমাজের যে অধঃপতন, ধর্ষণ, হত্যা, খুন, লুটতরাজ, মাদকের কুফলে সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোন উন্নয়ন কোন কাজে আসবে না। সেখান থেকে মাদরাসা শিক্ষাই সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে সেই কথা সকলকে বলতে হবে। সমাজকে যারা ধ্বংস করতে চাইছে, নৈতিক শিক্ষা ধ্বংস করে দিতে চাইছে, মাদকে দেশ সয়লাব করতে চায়, তারাই মাদরাসা শিক্ষার বিরোধিতা করছেন।
মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগের সমালোচনা করে প্রখ্যাত সাংবাদিক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, মাদরাসা শিক্ষার তাহজিব-তামাদ্দুন, মাদরাসা শিক্ষার কিছু রীতিনীতি আছে তা অনুসরণ না করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। মহাখালী কামিল মাদরাসায় শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে নিয়োগ দেখাচ্ছে একজন নারী শিক্ষককে। কামিল পর্যায়ের ছাত্রদের নারী শিক্ষক কিভাবে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে পাঠদান করবেন? এটা শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য বিব্রতকর। এরকম অসঙ্গতি বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে। প্রশাসন শুধু কোটা পূরণের চিন্তা করছে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে যে, মাদরাসা শিক্ষার ডিসিপ্লিন ঠিক থাকছে না তা দেখছেন না।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, একটা শ্রেণি সব সময় মাদরাসার বিরুদ্ধে কথা বলার অপেক্ষায় থাকেন। তারা এমন ব্যক্তি যাদের মাদরাসা ও মাদরাসা শিক্ষার বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা বা জ্ঞান নেই। মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মাদরাসায় এমন বিষয়ে মহিলা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সকলকেই বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে। এমনও শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে যারা মাদরাসা শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট না।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়ার সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, প্রিন্সিপাল আ.খ.ম আবু বকর সিদ্দীক, প্রিন্সিপাল মো: নূরুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল ড. মো: নজরুল ইসলাম আল মারুফ, প্রিন্সিপাল ড. মো: ইদ্রীস খান, প্রিন্সিপাল মো: নোমান আহমদ, প্রিন্সিপাল মো: হাসান মাসুদ, প্রিন্সিপাল মো: এজহারুল হক, প্রিন্সিপাল আবু জাফর মো: সাদেক হাসান, প্রিন্সিপাল মো: আব্দুল হাকিম মিয়া, প্রিন্সিপাল মো: নোমান সিদ্দিকী, প্রিন্সিপাল আ ন ম বোরহান উদ্দীন, প্রিন্সিপাল মো: জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার, প্রিন্সিপাল মো: মোস্তাফিজুর রহমান, প্রিন্সিপাল মো: রেজাউল হক, প্রিন্সিপাল রহমত সালাম, প্রিন্সিপাল মো: শাহজাহান, প্রিন্সিপাল মো: আবুল হাসেম, প্রিন্সিপাল কে জেড এম হেলাল উদ্দীন, প্রিন্সিপাল মো: ওয়াহিদুজ্জামান, প্রিন্সিপাল কে এম সাইফুল্লাহ, প্রিন্সিপাল ড. মো: আবু ইউসূফ, প্রিন্সিপাল এ কে এম জাকারিয়া, মো: মামুনুর রশীদ, মো: সিদ্দিকুল্লাহ পাটোয়ারী, মঈন উদ্দীন, মো: ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।