মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এক দশকেরও বেশি সময় আগে শ্রীলঙ্কায় মসজিদ, মাজার ও সূফি সাধকদের অনুসারীদের উপর হামলা বৃদ্ধি পায়। তখনি আগাম হুঁশিয়ারি সংকেত পাওয়া গিয়েছিল যে দেশের মুসলিমদের একটি অংশের মধ্যে মৌলবাদ শিকড় ছড়াচ্ছে।
ইস্টারে গির্জা ও হোটেলগুলোতে গত ২১ এপ্রিল হামলায় নিহত হওয়ার ঘটনা থেকে দেখা যায় যে এসব হুঁশিয়ারিকে প্রায় গুরুত্বই দেয়া হয়নি। এ হামলা আরো দেখিয়েছে যে গৃহযুদ্ধের উত্তরাধিকার, প্রান্তিকীকরণ, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ঘাটতি কিভাবে শ্রীলঙ্কাকে জঙ্গিদের হামলা চালানোর উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
এক সময় ইরাক ও সিরিয়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখলের পর তা হারানো ইসলামিক স্টেট গ্রæপ এই হামলা চালানোর দাবি করেছে। শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এ হামলায় তাদের সম্পৃক্ততা বিষয়ে নিশ্চিত নয়। তারা দুটি অপরিচিত স্থানীয় মুসলিম উগ্রপন্থী গ্রæপের দলছুট সদস্যদের এ জন্য দায়ী করেছে।
কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনস-এ সন্ত্রাস দমন বিষয়ক সিনিয়র ফেলো ব্রæস হফম্যান বলেন, ২২ বছর আগে তিনি যখন প্রথম শ্রীলঙ্কা সফর করেন তখনি লোকজনের উগ্রপন্থী হয়ে ওঠার ব্যাপারে শঙ্কিত হওয়া মুসলমানদের দেখেছেন।
তিনি বলেন, ২১ এপ্রিলের হামলা হয়েছে একটি বিশদ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। যেমন লোক নিয়োগ, উগ্রপন্থায় দীক্ষিত করা এবং তারপর মিশনের জন্য আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রস্তুতি। যে কোনো পরিকল্পনার জন্য চাই বোমা নির্মাতাদের জন্য নিরাপদ স্থান, অপারেটিভস যারা লক্ষ্যবস্তু বিষয়ে নজরদারি করতে ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে সক্ষম এবং সহায়তাকারী লোকজন যারা বোমা হামলাকারীর পরিবহন নিরাপদ করবে।
হফম্যান বলেন, এ জন্য দরকার সম্পদ ও শক্তিশালী কর্মীভিত্তিক কর্মকান্ড। এসব কারণে স্থানীয় কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠির পক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হয়ে ওঠা ঐতিহাসিক ভাবেই অসম্ভব। এ বোমা হামলার একজন আত্মঘাতী হামলাকারীকে স্বল্প পরিচিত ন্যাশনাল তওহিদ জামাতের সাবেক নেতা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে ‘পিস লাভিং মডারেট মুসলিমস ইন শ্রীলঙ্কা’ নামের একটি গ্রæপ ন্যাশনাল তওহিদ জামাতের নিন্দা করে স্থানীয় ডেইলি মিরর পত্রিকায় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলা হয় যে এটি শ্রীলঙ্কার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্যান্সারের মত দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ গ্রæপের সদস্যরা মসজিদে উপস্থিতি অত্যাবশ্যক করছে। শ্রীলঙ্কার আইনের উপর ইসলামী আইনকে ও নারীদের ঐতিহ্যবাহী শাড়ির পরিবর্তে হিজাব পরা ও লম্বা ঝুলের পোশাক পরা বাধ্যতামূলক করছে। এটা দুঃখজনক যে শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের তাদের মধ্যকার অল্পসংখ্যক কিছু লোকের অপকর্মের মাশুল দিতে হবে।
ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, কর্তৃপক্ষ যদি এ ব্যাপারে তৎপর না হন তাহলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমাদের আশঙ্কা যে ইতোমধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের উগ্রপন্থীদের হুমকি ও হয়রানির শিকার মুসলমানরা অন্য ধর্মের লোকদেরও ক্রোধের শিকার হবে। দেশে হামাগুড়ি দিয়ে অগ্রসরমান মৌলবাদের পাশাপাশি অন্য সব লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার মুসলিম রাজনীতি বিষয়ে একটি বই লিখেছেন অ্যান্ড্রিয়াস জোহানসন। তিনি বলেন, ২০০৬ ও ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের সময় কলম্বোর মসজিদগুলোতে তিনি তামিল ভাষায় ওসামা বিন লাদেনের বক্তৃতার অনুবাদ দেখেছেন। দেশের পূর্ব উপক‚লেও একই ব্যাপার দেখা গেছে।
২০০৬ সালে কাত্তাকুন্ডিতে সূফি প্রতিষ্ঠান ও তাদের মসজিদগুলোতে মৌলবাদীরা হামলা চালায়। সে সময় শ্রীলঙ্কায় শিরকের বিস্তার ঘটছে বলে চালানো হামলায় সংকীর্ণ মানসিকতা। ইসলামের আক্ষরিক ব্যাখ্যার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে। ২০০৭ সালে একটি শিক্ষাবিষয়ক নীতি পত্রে হুঁশিয়ারি দেয়া হয় যে শ্রীলঙ্কায় সূফিবিরোধী মৌলবাদীদের সহিংসতা একদিন দেশের বিভিন্ন অংশে সশস্ত্র ইসলামী আন্দোলনের সৃষ্টি করতে পারে।
ওই নীতি গবেষণা পত্রের লেখক ওয়াশিংটনের ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের ডেনিস ম্যাকগিভালরি ও মিরাক রহিম বলেন, সূফি মসজিদগুলোতে হামলা থেকে বোঝা যায় যে গোপন চ্যানেলে অর্থ ও ধর্ম প্রচারের মধ্য দিয়ে সউদী আরব থেকে নানা ভাবে এদেশে ওয়াহাবি প্রভাব প্রবেশ করছে। তবে এ সব হুঁশিয়ারির প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করা হয়ে থাকতে পারে। তার একটি কারণ হচ্ছে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদের পুনর্জাগরণের প্রতি সরকারের সকল দৃষ্টি কেন্দ্রীভ‚ত করা।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী বৌদ্ধ ও প্রধানত হিন্দু তামিল জঙ্গিদের মধ্যকার ২৬ বছরের লড়াই ২০০৯ সালে শেষ হওয়ার পর অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মত মুসলমানরাও প্রান্তিকীকৃত হয়ে পড়ে। মুসলিমরা এ যুদ্ধে নিরপেক্ষ ছিল। কিন্তু মুসলিম হওয়ার কারণে তামিল গেরিলারা শত শত মুসলিম তরুণকে অপহরণ ও হত্যা করে। ১৯৯০ সালে কাত্তাকুন্ডি ও এরাভুরের মসজিদে গণহত্যা চালিয়ে ২৬০ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়। উত্তরাঞ্চলের শহরগুলো থেকে মুসলমানদের বিতাড়ন করা হয়। এর ফলে হাজার হাজার মুসলমান আজো গৃহহীন অবস্থায় রয়েছে।
ম্যাকগিলভারি ও রহিম বলেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও তার ফলে এ সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা থেকে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ লালনের মত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে হফম্যান বলেন, তা সত্তে¡ও ন্যাশনাল তওহিদ জামাতের মত স্থানীয় গ্রæপের পক্ষে বৌদ্ধ মূর্তিতে হামলা থেকে ইস্টার সানডে অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা এক ‘বিরাট উল্লম্ফন।’
নীল ডিভোটা নর্থ ক্যারোলাইনার ওয়েক ফরেস্ট বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শ্রীলঙ্কার মুসলমানদের বিষয়ে ব্যাপক লেখালেখি করেন। তিনি বলেন, যদি এ হামলা সম্পূর্ণ রূপেই একটি স্থানীয় গ্রæপ কর্তৃক করা হয়ে থাকে তাহলে হামলকারীরা বহু বছর ধরে মুসলমানদের উপর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের চরম উগ্রপন্থী দাঙ্গাকারী জনতার হামলার প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ন্যাশনাল তওহিদ জামাতের মত উগ্রপন্থী গ্রæপগুলো শ্রীলঙ্কার প্রায় ১০ শতাংশ মুসলমানের ১ শতাংশেরও প্রতিনিধিত্ব করে না।
ডিভোটা বলেন, শ্রীলংকার মধ্যপন্থী মুসলমানদের আশঙ্কা যে এ ধরনের গ্রæপগুলো শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধদের মধ্যে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করছে যারা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের। বিশেষ করে মুসলমানদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। তিনি বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এটা ভালো নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।