Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নতুন করে জঙ্গি ও উগ্রবাদের তত্ত্ব উপস্থাপন কেন?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০১ এএম

বিগত প্রায় দুই যুগের অধিক সময় বিশ্বে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ একটি আলোচিত বিষয় ছিল। মূলত নাইন-ইলেভেনে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংস হওয়ার পর থেকে বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে চলে আসে। বলা যায়, বিশ্বে নতুন একটি ইস্যু নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ কাজটির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ও মোড়লগিরিকে অধিক শক্তিশালী করার উদ্দেশ্য যে ছিল, তা এখন সকলেই বুঝতে পেরেছে। তৎকালীন বুশ প্রশাসন, সুপরিকল্পিতভাবে এ কাজ করে ওসামা বিন লাদেন ও আল-কায়দার ওপর দোষ চাপিয়েছিল। এটা যুক্তরাষ্ট্রেরই বিশিষ্টজনদের বই-পুস্তক, নিবন্ধ, তথ্যচিত্র ও গবেষণায় বলা হয়েছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো আপত্তি না করে লাদেন ও আল-কায়দাকে ধ্বংস করার মিশন নিয়ে নামে। তার এ মিশনের নেপথ্যে যে, মুসলমান ও মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোকে বদনাম ও নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার অভিপ্রায় ছিল, তা এখন সকলেই বোঝে। ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এক ধরনের ‘ইঁদুর-বেড়াল’ বা কার্টুনের ‘টম অ্যান্ড জেরি’র মতো খেলায় মেতে উঠেছিল। এই খেলা খেলতে গিয়ে আফগানিস্তানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে প্রায় ধ্বংস করে দেয়। খেলা জমিয়ে রাখতে এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে লাদেন ও আল-কায়দার শীর্ষ নেতৃত্বের হুমকিমূলক বিভিন্ন ভিডিও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। এসব ভিডিও যে, সিনেমার মতো শুটিং করে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করেছিল, তা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। লাদেনকে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে চলা এ খেলার সমাপ্তি যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ঘটায়। লাদেনকে গ্রেফতার করে প্রকৃত ঘটনা সামনে আসার সুযোগ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র তা করেনি। হত্যা করে তার লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেয়। লাদেন এপিসোড শেষে নতুন আরেকটি এপিসোডের সৃষ্টি করে যুক্তরাষ্ট্র। এই এপিসোডের নাম আইএস। কিছু বিপদগামী মুসলমানকে দিয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার নামে আইএস সৃষ্টি করে এবং এই এপিসোড জমিয়ে তোলার জন্য শুরুতে সিরিয়া-ইয়ামেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চল তাকে অবাধে দখলের সুযোগ করে দেয়। আইএস-এর এক ধরনের জয়জয়কার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আইএস দমনে তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে সাথে নিয়ে পুনরায় ‘টম অ্যান্ড জেরি’ খেলা শুরু করে। আইএস ধ্বংসের নামে সমৃদ্ধ সিরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। এভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের নামে ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে হামলা চালিয়ে তছনছ করে দেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদের ধোঁয়া ছড়িয়ে দেয়া হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তার এই জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের এপিসোডগুলো কেবল মুসলমান দেশগুলোকেই কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব এ ধরনের নৃশংস ও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটায় শুধুমাত্র মুসলমানদের ধ্বংস ও সারাবিশ্বে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। পাশাপাশি জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে তার সাফল্য প্রদর্শন, মুসলমান দেশগুলোর তেল ও সম্পদ লুট এবং বিশ্বে তার একক আধিপত্য জাহির করার কাজটি সম্পন্ন করে। এসবের পেছনে যে তার ক্ষমতা প্রদর্শন ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার দুরভিসন্ধি ছিল, তা বুঝতে বাকি থাকে না।

দুই.
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রদর্শন ও টিকিয়ে রাখার এই অপকৌশল আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনরাও লুফে নেয়। জঙ্গী তত্ত্ব হাজির করে এবং তা দমনের সাফল্যে মেতে ওঠে। গত এক যুগে আমাদের দেশে বেশ ঘনঘন জঙ্গী উত্থানের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গী দমনে বেশ বড় বড় অভিযান চালায়। এর মধ্যে হলি আর্টিজান ও কল্যাণপুরের ঘটনা দুটি উল্লেখযোগ্য। এই দুই ঘটনায় জঙ্গী দমনে সরকারের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। এছাড়া প্রায়ই দেশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি দুর্গম পাহাড় ও চরে জঙ্গীদমন অভিযানের ঘটনা ঘটে, যদিও এসব ঘটনা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন তুলতে ও বিতর্ক করতে দেখা গেছে। তবে এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোনো প্রভাব ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়নি। দেশে জঙ্গী আছে, এমন ধারণা তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যায়নি। কেবল ক্ষমতাসীন দল ও একশ্রেণীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ‘জঙ্গীদমনে’র সাফল্যের গুণগান গেয়েছে। ফলে বিষয়টি একেবারেই তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। এর ফায়দা তারাই লুটেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ও পশ্চিমা বিশ্বকে দেখিয়েছে, আমাদের সরকার জঙ্গী দমনে সফল হয়েছে। এতে তারা যেমন খুশি হয়েছে, তেমনি ক্ষমতায় টিকে থাকার অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে এটি যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি এবং দমনের বিষয়টি শুধুমাত্র ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এবং ক্ষমতা জাহির করার উৎসে পরিণত করা হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এতে কেবল মুসলমানদেরকেই টার্গেট করা হয়েছে। আমাদের দেশের কিছু ইসলামবিদ্বেষী এবং কিছু মিডিয়া দিনরাত কেবল জঙ্গী জঙ্গী করে জিকির করে যাচ্ছে। তারা মাদরাসাগুলোকে জঙ্গীবাদের আস্তানা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সেখানে নাকি জঙ্গী তৈরি করা হয় এবং মাদরাসা শিক্ষার্থী মানেই জঙ্গী, এমন এক ধারণা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালায়। তারা মাদরাসা শিক্ষা বন্ধ করে দেয়ার দাবি করে। এমনকি দাড়ি-টুপিওয়ালা মানেই জঙ্গী এমন ভয়াবহ প্রচারণা চালায়। সরকারের কেউ কেউ তাদের সাথে তালও মিলিয়েছে। অথচ আমাদের দেশে মাদরাসা শিক্ষা শত বছর ধরে চলে আসছে। এই এক যুগ আগেও এ নিয়ে কোনো কথা উঠেনি, কিংবা জঙ্গী সৃষ্টি করা হয়Ñএমন অভিযোগ শোনা যায়নি। যদি ঐ ইসলামবিদ্বেষীদের কথা সত্য হতো, তাহলে তো বহু আগেই তাদের কথা মতো মাদরাসা থেকে শিক্ষা লাভ করা লাখ লাখ জঙ্গীতে দেশ ভরে যেত এবং তাদেরও কোনো অস্তিত্ব থাকত না। আসলে তারা যে, ইসলামবিদ্বেষ ও পশ্চিমা বিশ্বের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দেশে জঙ্গীবাদের তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে, তা এদেশের মানুষ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশের ৯২ ভাগ মুসলমান এতই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ যে, এখানে কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ বা খ্রিস্টানÑএ চিন্তা করে না। ভারতের মতো এখানে আলাদাভাবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের পাড়া-মহল্লা নেই। হিন্দু-মুসলমান ও অন্য ধর্মাবলম্বীরা একই ভবনে বা পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করে। একই সাথে চলাফেরা করে। একের বিপদে অন্যে এগিয়ে যায়। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ভারত যেভাবে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে, এখানে হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের তা করা হয় না। প্রশাসনের দিকে তাকালেই তার দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে অনেক হিন্দু ও অন্য ধর্মের কর্মকর্তা নিয়োজিত। ধর্মের ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়নি। এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। তারপরও ধর্মনিরপেক্ষবাদী ও কিছু নাস্তিক শুধু নিজ স্বার্থে দেশে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেনে নিতে না পেরে পশ্চিমাদের মতো মুসলমানদের টার্গেট করে জঙ্গীবাদের উত্থান ও তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিন.
দেশে যখনই কোনো রাজনৈতিক সংকট বা জন অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, তখনই দেখা যায়, জনদৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য ‘জঙ্গী’ তত্ত্বটি হাজির করা হয়। এটাকে একটি ‘মোক্ষম অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংকট এবং সরকার বেকায়দায় পড়লে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হয়। জঙ্গী দমন ও গ্রেফতার দেখিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার এক ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা যায়। বিগত এক দশকে সরকার তার সাফল্য দেখানোর জন্য একের পর এক জঙ্গী আস্তানার সন্ধান, গ্রেফতার ও দমন করার প্রক্রিয়া চালিয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে সগৌরবে ঘোষণা করেছে, আমরা জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সফল হয়েছি। বাংলাদেশ জঙ্গীমুক্ত। বিশেষ বিশেষ উৎসবের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জঙ্গী হামলার আশঙ্কা নেই বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এমনও বলা হয়েছে, যেসব জঙ্গী সংগঠন রয়েছে, তাদের অস্তিত্ব বিলোপ করে দেয়া হয়েছে। নতুন করে সংগঠিত হওয়ার মতো তাদের শক্তি-সামর্থ্য নেই। ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে জঙ্গী তত্ত্বটি অনেকটা আড়ালে চলে যায়। তবে এ মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই র‌্যাব এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন জঙ্গী সংগঠন ও এতে জড়িয়ে পড়া ৩৮ তরুণের পূর্ণাঙ্গ নাম ও ঠিকানা প্রকাশ করে। এদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায়। এসব তরুণ পার্বত্য এলাকার দুর্গম অঞ্চলে পাহাড়ি বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে জানানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা নতুন জঙ্গী সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারকীয়া’র সদস্য। নতুন করে জঙ্গী সংগঠন ও তরুণদের জড়িয়ে পড়ার এ ঘটনাকে পর্যবেক্ষকদের কাছে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ঘটা করে জঙ্গী নির্মূলের সাফল্য প্রচার এবং জঙ্গীমুক্ত বাংলাদেশ বলা ও জঙ্গীদের আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠার ক্ষমতা নেই ঘোষণার পর নতুন এই জঙ্গী সংগঠন কোথা থেকে এলো? তারা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণ উত্তপ্ত হয়ে উঠা, বিরোধীদলের রাজনৈতিক আন্দোলন ও সভা-সমাবেশ জোরালো হয়ে উঠা নিয়ে সরকার বেশ বেকায়দায় রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা চরমে উঠা ও দেশের সার্বিক অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং তা সমাল দেয়া সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ায় জনদৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য নতুন করে জঙ্গী তত্ত্ব হাজির করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, নতুন করে জঙ্গী তত্ত্ব হাজির করা একটি দুর্বল চিত্রনাট্য বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তারা মনে করছেন, পুরনো কাহিনী মানুষ বারবার দেখতে চায় না। ফলে বিষয়টি হালে পানি পায়নি। কারণ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একমাত্র ভারত ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দেশে জঙ্গীবাদের বিষয়টি নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও তার সৃষ্ট এ তত্ত্ব থেকে অনেক আগে সরে গেছে। আক্ষরিক অর্থে, বর্তমানে ভারতে ভয়াবহভাবে জঙ্গী ও উগ্রবাদের উত্থান ঘটেছে এবং এর পেছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। মোদীর বিজেপি সরকারই এই উগ্র হিন্দু মৌলবাদীদের মদদ দিচ্ছে। বিজেপি’র লক্ষ্য, ভারতকে পুরোপুরি একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা, যেখানে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান থাকবে না। অন্য ধর্মাবলম্বীরা নামকাওয়াস্তে থাকবে। ফলে মোদীর এখন পুরো মিশন হচ্ছে, ভারত থেকে মুসলমান বিতাড়ন ও নির্মূল করা। এজন্য লেলিয়ে দেয়া হয়েছে উগ্র হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ অন্য সংগঠনগুলোকে। তৈরি হয়েছে, মুসলমান বিতাড়ন ও তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার এনআরসি, সিএএ, এনপিআর-এর মতো আইন। একদিকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, অন্যদিকে উগ্র হিন্দুদের দিয়ে মুসলমান নিশ্চিহ্ন করার এক ভয়াবহ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে মোদী সরকার। বলা বাহুল্য, এই মোদী যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন তার মদদে মুসলমান নিধনে ভয়াবহ দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ ছিল। তদন্তে তার নামও ছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। যার মন ও মননে উগ্র মৌলবাদ, তিনি যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তার কবল থেকে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের রেহাই পাওয়ার কোনো কারণ নেই। হচ্ছেও তাই। ফলে ইতোমধ্যে অনেকে মোদীকে জঙ্গীবাদের হোতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোও ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের উত্থান ও মুসলমান হত্যা, নিপীড়ন-নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে।

চার.
আমাদের দেশে স্বার্থান্বেষী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছাড়া জঙ্গী উত্থানের কোনো সুযোগ নেই। যে বড় ধরনের দুয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর পেছনে এক ধরনের সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র ছিল বলে জনমনে ধারণা রয়েছে। এসব ঘটনার সাথে যেসব তরুণদের দেখা গিয়েছিল, তারা আদতে প্রকৃত ইসলামের ধ্যান-ধারণা ও জ্ঞানের মধ্যে ছিল না। এমনকি, যারা মাদরাসা ও এর শিক্ষার্থীদের জঙ্গী তৈরির আস্তানা ও জঙ্গী হিসেবে আখ্যায়িত করে, সেখানেও ঐসব তরুণ পড়াশোনা করেনি। তাদের অনেকেই আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। এমনকি কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলের নেতার সন্তান ছিল। এই তাদের দ্বারা বাংলাদেশে জঙ্গী উত্থান কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের সমাজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক ইস্পাত কঠিন বন্ধন এবং মানসিকতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। এখানে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের বদনাম করার জন্য জঙ্গী প্লট সৃষ্টি করা যেতে পারে, জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটানো সম্ভব নয়। আর বিচ্ছিন্নভাবে যেসব তরুণের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’, ‘হিজরতে’র নামে জঙ্গীবাদে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে, তাদের দ্বারা বাংলাদেশে জঙ্গী কার্যক্রম চালানো এক অসম্ভব বিষয়। যেখানে অন্যান্য অপরাধের মতো জঙ্গী কার্যক্রমের দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষè নজর রয়েছে, সেখানে এ ধরনের শঙ্কা থাকার কোনো কারণ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিৎ হবে, কারো ষড়যন্ত্র কিংবা অসৎ উদ্দেশ্যে প্রভাবিত ও অতি উৎসাহী হয়ে জঙ্গী তৎপরতার অভিযোগে অভিযুক্তদের ফলাও করে মিডিয়ার সামনে হাজির না করা। বরং তাদের কারাগারে রেখে মোটিভেশনাল কোর্স কিংবা ডি-র‌্যাডিক্যালাইজেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। ইন্দোনেশিয়ার কারাগারে আটক জঙ্গী তৎপরতার সাথে জড়িতদের জন্য চরমপন্থা মুক্তকরণের মতো এ ধরনের কোর্স চালু করে ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে। জঙ্গীদের কেউ কেউ সংশোধিত হয়ে কারাগার থেকে মুক্তিও পেয়েছে।

[email protected]



 

Show all comments
  • hassan ২২ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৩০ পিএম says : 1
    সবথেকে বড় জঙ্গি তো আমাদের দেশদ্রোহী সরকার কথায় কথায় মানুষকে গুম করে ফেলে জঙ্গী বানিয়ে ঠান্ডা মাথায় বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে গুলি করে মেরে ফেলে না হলে তাদের সামনে কিছু অস্ত্র দিয়ে ফটো তুলে তাদেরকে চিরজীবনের মতো জেলের মধ্যে আটকে রাখে> প্রায় দেড় হাজার মত যুবকরা আজ ধুকে ধুকে মরছে জেলের মধ্যে কারণ জঙ্গী তকমা লাগিয়েছে তাদের উপর>>>>আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এইসব নাটক সাজায় তারা কি জানে না যে আল্লাহ সবকিছু দেখছেন যখন মৃত্যু সামনে আসবে তখন বুঝবেন এখনো সময় আছে আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ শাসন করেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নতুন করে জঙ্গি ও উগ্রবাদের তত্ত্ব উপস্থাপন কেন?
আরও পড়ুন