পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরাবরই বিতর্ক, সমালোচনা ও রহস্যের ধূম্রজালে হরেক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে ‘ইসকন’ নামের সংগঠন। এবার ইসকনকে উগ্রবাদী, প্রকৃত অর্থেই ধর্মবিরোধী ও পেশীশক্তি প্রদর্শনকারী বলছেন চট্টগ্রামের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী এবং সনাতনী হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘের নেতৃবৃন্দ। গতকাল রোববার প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক ইসকনের কর্মকান্ডকে ‘সাধু বেশে সন্ত্রাসী’ কার্যক্রম বলে মন্তব্য করেন।
বন্দর নগরীর প্রাণকেন্দ্র পাঁচলাইশ প্রবর্তকের কিছু ভূমি ইসকনকে চুক্তির মাধ্যমে দিয়েই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রবর্তক নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সাথে করা চুক্তি বাতিলেরও ঘোষণা দিয়েছেন। ইসকনের বিরুদ্ধে তারা প্রবর্তকের কর্তব্যরত কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা অন্তত ১২ জনকে আহত করার অভিযোগ তুলে ধরেন।
হিন্দুদের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘের নেতাদের অসহায়ত্ব ও আকুতি নিয়ে গতকালও এখানে সেখানে নানামুখী আলোচনা সমালোচনা ও বিতর্ক চলছে। নানামুখে প্রশ্ন ও কৌত‚হল উচ্চারিত হচ্ছে, ইসকনের খুঁটির জোর কোথায়? যেখানে স্বয়ং হিন্দু নেতারা অসহায় অবস্থায় পড়লেন? প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তী ইনকিলাবকে বলেন, প্রবর্তক সংঘের ১৮ একর জমি মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য ইসকনকে দেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী তারা ওই জমিতে মন্দির পরিচালনা করবে। এর বাইরে তারা কোন জমির মালিকানা দাবি করতে পারবে না। কিন্তু তারা সে চুক্তি মানছে না। নির্ধারিত সীমার বাইরে গিয়ে স্থাপনা তৈরি করছে। তাদের বাড়াবাড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা ইসকন কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করি। কিন্তু তাতে তারা কোন সাড়া দেয়নি। সর্বশেষ গত ১৪ মার্চ প্রবর্তকের জমিতে সংস্কার কাজ করতে গেলে ইসকন কর্মীরা সেখানে সশস্ত্র হামলা চালায়। এ ঘটনাকে তিনি ইসকনের সাধু বেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সনাতন ধর্মের কলঙ্ক। এ ধরনের কর্মকান্ড অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেন, আমরা ইসকনের সাথে চুক্তি বাতিল করব। শুধু তাই নয়, তাদের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মঠ-মন্দিরে গণসংযোগ করব। কারণ প্রকৃত কোন সনাতন ধর্মাবলম্বী এ ধরনের উগ্রবাদী তৎপরতা সমর্থন করে না। তিনি ইসকনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন।
গতকাল প্রবর্তক সংঘে গিয়ে কথা হয় কর্মকর্তাদের সাথে। ওইদিনের ঘটনায় আহতদের কয়েকজন জানন, তাদের ওপর সন্ত্রাসী তান্ডব চালিয়েছে ইসকন কর্মীরা। তাদের হামলা থেকে রেহাই পাননি প্রবর্তকের শিক্ষক, সত্তরোর্ধ কর্মচারী এবং মহিলারাও। ইসকন কর্মীদের হামলায় আহত প্রবর্তকের আবাসিক শিক্ষক অমর চৌধুরী (৩২) বলেন, তার মাথায় অসংখ্য সেলাই দিতে হয়েছে। হাসপাতালে ছিলেন বেশ কয়েকদিন। তিনি বলেন, আমাদের কর্মীরা প্রবর্তকের জমিতে কাজ করছিল। এ সময় অতর্কিত হামলা করে তারা। তাদের রক্ষায় এগিয়ে গেলে তার মাথায় আঘাত করা হয়। প্রবর্তকের কর্মকর্তা সুমন (৪২) ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, হঠাৎ করে লাল কাপড় পরা ৫০ থেকে ৬০ জন ইসকন কর্মী প্রবর্তক কর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওইদিন তাদের হামলায় তিনিসহ সুনীল দে (৭০), মিথুন বড়–য়া (২৭), খোকন দাশ (৬৫), সুধীর (৫৫), মনোরঞ্জন (৫৫), মেলী দত্ত (৫৬), মৃদুল চৌধুরী (৭০) আহত হন। তাদের চমেক হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা নিতে হবে। এ ঘটনায় প্রবর্তকের পক্ষ থেকে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দেয়া হলেও তা নেয়নি পুলিশ। পরে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনকড়ি চক্রবর্তী। প্রবর্তক কর্মীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে ভারতীয় বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র ধামেদোর মোদীর ঢাকায় সফরের প্রাক্কালে ইসকন নামের এ সংগঠনটি দেশের এখানে-সেখানে প্রকাশ্যে এবং পর্দার আড়ালে নানা রকম রহস্যয় কর্মকান্ড শুরু করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসকন মন্দির নির্মাণ ও তাদের বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় জনগণের এবং সরকারি প্রশাসনের মধ্যে এমনকি সনাতনী হিন্দুদের মাঝেও ক্ষোভ-অসন্তোষ, উত্তেজনা বিরাজ করে। বাংলাদেশে ৯২ শতাংশ জনগণ মুসলমান। সেই সঙ্গে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সারা বিশে^ বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উজ্জ্বলতম উদাহরণ।
ইতিপূর্বে চট্টগ্রামে ইসকন নেতা-কর্মীরা সদলবলে স্কুলে স্কুলে ‘খাবার বিতরণের’ আড়ালে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ মন্ত্র পড়তে অপকৌশলে একরকম বাধ্য করে চরম সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পড়ে উগ্র সংগঠনটি। এরজন্য ইসকন নেতারা ক্ষমা চান প্রকাশ্যে। ওই সময়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার শুধুই একটি স্কুলে হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীরা ‘হরে কৃষ্ণ’ মন্ত্র বলেছে। তবুও এদের আচরণে পরিবর্তন আসেনি। একের পর এক চরম বিতর্কিত ও উগ্রবাদী ঘটনায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, বাংলাদেশে কী চায় এই ইসকন?
উইকিপিডিয়ায় জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ হল (ওঝকঈঙঘ) গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী একটি হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। যার জন্ম বা সৃষ্টি বিদেশে। এমনকি ভারতেও নয়। ১৩ জুলাই ১৯৬৬ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ইসকন নামের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইসকন গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের অনুগামী। এই মতটি খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে প্রবর্তন হয়। ১৯৩০-এর দশক থেকে পাশ্চাত্য সমাজে ধর্মান্তরের কাজ শুরু করে। ক’বছর আগের হিসাবে, বিশ্বে ইসকনের ৫০ হাজারেরও বেশি মন্দির এবং কেন্দ্র রয়েছে। আছে ৬০টি খামার সংগঠন ও স্বনির্ভর প্রকল্প, ৫৪টি বিদ্যালয়, ৯০টি ভোজনালয়।
ইসকন উগ্রবাদী, প্রকৃতপক্ষে ধর্মবিরোধী ও পেশীশক্তি সংগঠন : প্রবর্তক সংঘ চট্টগ্রাম
ইসকনকে উগ্রবাদী সংগঠন বলে মন্তব্য করে প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তী বলেন, ইসকন মন্দির থেকে দুষ্কৃতকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবর্তক সংঘের কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে আহত হয় অন্তত ১২ জন। সাধুর ছদ্মবেশে একদল সন্ত্রাসী প্রবর্তক শ্রী শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরে অবস্থান করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইসকনের পুরহিতদের কাজ পূজা, আর্চনা করা। কিন্তু ইসকনের সদস্যরা সংঘের ভ‚মি দখলসহ নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রবর্তক কর্মীদের উপর ইসকনের হামলার বর্ণনা দেন।
‘উগ্রপন্থী হিন্দু সংগঠন ইসকন বাংলাদেশে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি করছে’
স্বদেশ বার্তা পত্রিকায় উপরোক্ত শিরোনামে লেখক নয়ন চ্যাটার্জি তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, বাংলাদেশের হিন্দু নেতা ও সংগঠনগুলোর পরিস্থিতি সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত। তাদের অবস্থান পরিস্কার করে বলা উচিত, ‘ইসকন যে কাজ করেছে তার দায় বাংলাদেশের হিন্দুরা বহন করবে না এবং ইসকনের কাজ অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর পায়তারা’, প্রয়োজনে সা¤প্রদায়িক ষড়যন্ত্র করার জন্য হিন্দুনেতাদের উচিত ইসকনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া। ইসকন সংগঠনটি উগ্র ধরনের সংগঠন। বাংলাদেশে যে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিরাজ করে, সেটা ভাঙ্গার জন্য বার বার চেষ্টা করে এই সংগঠনটি। যেহেতু পার্শ্ববর্তী ভারতে উগ্র হিন্দুরা সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নির্যাতন করছে, সেহেতু বাংলাদেশে সেই সা¤প্রদায়িকতার উল্টা রেশ আনার জন্য প্রয়োজন এ অঞ্চলে মুসলিমবিরোধী বিভিন্ন কাজে ইন্ধন দেয়া, যেন মুসলমানরা সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ক্ষেপে যায়। এ কাজটি বিভিন্ন সময় রুটিনওয়ার্ক হিসেবে দিয়ে থাকে ইসকন। যেমন-
১) ২০১৪ সালে স্বামীবাগে তারাবীর নামাজে বাধা দেয় ইসকন। সে সময় হিন্দু-মুসিলম সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পুরো দেশে হিন্দু-মুসলিম সা¤প্রদায়িক পরিস্থিতি বিরাজ করে।
২) ২০১৬ সালে সিলেটে ইসকন মন্দির থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদের মুসল্লিদের উপর গুলি বর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ইসকনীদের হামলায় ডজনখানেক মুসল্লী গুরতর আহত হয়।
৩) ইসকনের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়ায় ২০১৬ সালে খুন হয় সিলেটের এক মসজিদের ইমাম।
বাংলাদেশ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির দেশ, এখানে হিন্দু-মুসলিম একত্রে শাস্তিতে বাস করে, কিন্তু ইসকন নামক উড়ে এসে জুড়ে বসা সংগঠনটি সেই স¤প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করে মুসলিম-হিন্দুর মধ্যে বড় ধরনের দাঙ্গা বাধাতে চায়, যার পরবর্তী সুবিধা নিবে ভারতের উগ্র বিজেপি ও রামভক্তরা। আর এটা মেনে নিতেই হবে, বাংলাদেশে দাঙ্গা হলে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে সখ্যালঘু সনাতন হিন্দুরা। তাই ভবিষ্যতে হিন্দুদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের স্বার্থেই বাংলাদেশে ইসকন নামক ভ‚ঁইফোঁড় সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।