Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশংসা কুড়িয়েছে নৌ মন্ত্রণালয়

সরকারের ১০০ দিন

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

৫৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ে অতীতে যারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সকলেই ছিলেন ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী। এবারো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের ইমেজ ফিরিয়ে এনে জনবান্ধব করার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছেন। নদী দখল রোধ, নদীতীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সকলের প্রশংসা কুড়িছেন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের প্রথম ১০০দিনের মধ্যে নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে প্রশংসা নিয়েছেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। নির্বাচনের ইশতেহারের বাইরে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। নদীতীর এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। এরপর স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ গড়তে ইশতেহারে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ়প্রত্যয় করে সরকার। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের মূল বিষয় ছিল তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন। ইশতেহারে ২১ দফা অঙ্গীকার করে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। নির্বাচনী ইশতেহারে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির সামনে তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন তুলে ধরা হয়। সম্প্রতি ১০০দিন পার করেছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। নতুন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরে মন্ত্রণালয়ে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। সরকারের চলতি মেয়াদে নৌ-মন্ত্রণালয়কে ইশতেহারে ঘোষিত ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী বর্ষা থেকেই এটা ছয় হাজার কিলোমিটার হয়ে যাবে। চার হাজার কিলোমিটার নৌপথ বাকি মেয়াদে বাস্তবায়ন সম্ভব। চলমান অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নদীতীরকে ঘিরে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার চলছে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। নদীতীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- কী ধরনের ওয়াল তৈরি করব, নদীর জায়গা যেন আর কেউ দখল করতে না পারে, ইকোপার্ক তৈরি ও ওয়াকওয়ে তৈরি করা। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, নদী দূষণমুক্ত করার জন্য কল-কারখানার বর্জ্য ও স্যুয়ারেজ লাইন ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা, দীর্ঘমেয়াদে নদীর নাব্যতা নিশ্চিত করা এবং দূষণের স্তর দূর করা। এই পরিকল্পনা আসলে দুই বছর, তিন বছর, পাঁচ বছর ও দশ বছরমেয়াদি।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুবাই সরকারে সঙ্গে বন্দর ও নৌ-পর্যটনের ক্ষেত্রে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষর করেছেন। কোরিয়া, চীন, ভারত, তুরস্ক ও আমেরিকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও অনেক দেশই রয়েছে যারা এই খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। নদী শাসন নিয়ে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে আগের সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
ঈদ সামনে রেখে, যাত্রীবাহী লঞ্চের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নতুন নতুন প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন, লাইট হাউস (বাতিঘর) আছে, বয়া (পানিতে ভাসার বক্স) আছে এগুলো সচল রাখার পদক্ষেপ নেওয়া, আবহাওয়া নির্দেশক রয়েছে, সেসব নির্দেশনা যেন নৌযানগুলো মেনে চলে, সেই নির্দেশনা, কালবৈশাখী ঝড় সেই নির্দেশনাও এই ঝড়-তুফানে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে পদক্ষেপ নেয়া।
ঈদে বাড়তি যাত্রী ও যানবাহনের চাপ থাকে সে ক্ষেত্রে বিআইডবিøউটিসি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পাশাপাশি বেসরকারি যেসব নৌযান রয়েছে এসব মালিকের সঙ্গেও কাউন্সিলিং করা। আগামী ৩০ এপ্রিল এবিষয়ে সমন্বয় সভা হচ্ছে। এছাড়া ফেরি ঘাট গুলো আধুনিকায় করা। পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ, মাওয়া-কাঠালবাড়ী এই দুটো ভালো সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নদীবন্দর সবগুলোই ব্যবহার উপযোগী করা। বন্দর গুলো এখন অনেক বেশি যাত্রীবান্ধব করা। ছোট ছোট বন্দর রয়েছে সেগুলোর অবকাঠামোগত পল্টুন তৈরি করার পরিকল্পনা
আরিচা এবং নগরবাড়ী খুব জনপ্রিয় ফেরিঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। সেই ঘাটকে চালু করার জন্য নতুন পরিকল্পনা।
জামালপুর বালাসী এবং বাহাদুরাবাদ ঘাটে ড্রেজিং কাজ শুর করা হয়েছে। জামালপুর থেকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি সেই রুট চালু করব। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করতে দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাবল কার নির্মাণের পরিকল্পনা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা, আরিচা থেকে নগরবাড়ী, জামালপুর থেকে সারিয়াকান্দিতে এই ক্যাবল কার স্থাপন হচ্ছে। বিদেশি একটি কোম্পানি এ বিষয়ে সার্ভে করেছে। আশুগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জ পর্যন্ত যে রুট রয়েছে। সেখানে ভারতীয় অর্থায়নে ড্রেজিং করা হবে। ৮০ ভাগ খরচ বহন করবে ভারত। ২০ ভাগ খরচ বহন করব বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারত চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে বিনিয়োগ করেছে। পায়রা প্রথম টার্মিনালটাই ভারত করবে। কাজ এখনও শুরু হয়নি।
রাজধানীর মোহম্মদপুরের বসিলা (বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের অংশ) এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২০টি পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চারতলা ভবন একটি, তিনতলা ভবন ৮টি, দোতলা ভবন ১১টি, একতলা ভবন ৪২টি, আধাপাকা ভবন ৩৩টি, টিনের ও টংঘর ২৫টি। বিআইডব্লিউটিএ প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ১,১৯৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং প্রায় ১০ একর তীরভূমি উদ্ধার করেছে। মিরপুর বেড়িবাঁধের সিন্নিরটেক থেকে গড়ান চটবাড়ি পর্যন্ত তুরাগ নদীর উভয় তীরে সাতটি একতলা ভবন, তিনটি আধাপাকা ভবন, পাঁচটি বাউন্ডারি ওয়াল ও ৩৫টি টিনের ঘরসহ মোট ৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। বুড়িগঙ্গা নদীর কামরাঙ্গীরচর/খোলামোড়া হতে ধারাবাহিকভাবে তুরাগ নদীর গড়ান চটবাড়ি পর্যন্ত নদীর উভয় তীরে এবং বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেলের অংশবিশেষসহ মোট ২২ কিলোমিটার এলাকায় ২,৮৪৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩৯০টি পাকা ভবন, ৪২১টি আধাপাকা ভবন, ১৭১টি পাকা বাউন্ডারি ওয়াল ও অন্যান্য ১৮৬৪ টি। উক্ত সময়ে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা, ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার নিলাম এবং ৬১ একর জায়গা অবমুক্ত করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • MD Bottu Bk ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
    হোক প্রতিবাদ। আমি মনে করি এই অবৈধ উচ্ছেদে যারা অবদান রাখবে তারা আগামীতে নির্বাচিত হতে কোন বাধা থাকবে না। আমরা সমবায়ী জনতা এমনি নেতৃত্ব চায়।
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ মাহাদী ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
    অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। বন্ধ করলে হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • জয়নাল হাজারি ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
    অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু কদিন দখলমুক্ত থাকে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
    Total Reply(0) Reply
  • স্বদেশ আমার ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:১৯ এএম says : 0
    নৌ মন্ত্রণালয়ের সফলতা কামনা করছি। সামনে যেন আরও দু:সাহসিক অভিযান চালাতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • taher ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:০৯ এএম says : 0
    মাননিয় মন্ত্রী, আপনি বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়া উচ্ছেদ করুন, ১৭ কোটি মানুস আপনার সাথে আছে
    Total Reply(0) Reply
  • শ্যামল চন্দ্র রায় ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:০৭ এএম says : 0
    প্রত্যকটি মন্রনালয়ে এই রকম শক্তিশালী ভুমিকা পালন করলে সত্যিই সোনার বাংলা বিনিমান আর বেশিদূর নয়।।জয় বাংলা... জয় বঙ্গবন্ধু,জয় হোক খালিদ ভাইয়ের....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উচ্ছেদ

১৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ