পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া জীবন অচল। ঢাকা শহরের প্রায় ২ কোটি মানুষের জন্য পানি সরবরাহের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। সেই দায়িত্ব পালনে সংস্থাটি বড় ধরনের ব্যর্থতার শিকার। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের(টিআইবি) এক রিপোর্টে ঢাকা ওয়াসার ব্যাপক দুর্নীতি এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ব্যর্থতার বিশদ চিত্র উঠে এসেছে। ‘ঢাকা ওয়াসা:সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়,’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রমে অস্বচ্ছতা, সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি এবং প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে তার ব্যর্থতা ইত্যাদি প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। সেখানে ওয়াসার সেবাগ্রহীতাদের সেক্টর ও অঞ্চলভিত্তিক অবস্থা তুলে ধরে দেখানো হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার ৬২ ভাগ গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতির শিকার। সংযোগ গ্রহণ, মিটার স্থাপন, বিল পরিশোধ, অবৈধ সংযোগসহ সেবার ক্ষেত্রে নানাভাবে দুর্নীতির সম্মুখীন হচ্ছে গ্রাহকরা। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির শিকার হলেও প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ এবং নিরাপদ পানি নিশ্চয়তা কোনোটাই পাচ্ছে না নগরবাসি। টিআইবির প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসাকে ‘ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া’ বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা এশিয়ার একমাত্র শহর যেখানে শতকরা ৯১ ভাগ মানুষকে পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়। আর পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করতে বছরে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস পোড়াতে হয়। বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা দূরের কথা, বস্তি ও কোনো কোনো আবাসিক এলাকায় পানির চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করতে পারেনা ঢাকা ওয়াসা। অন্যদিকে নগরীর সুয়্যারেজ লাইনের দায়িত্ব পালনেও ঢাকা ওয়াসা চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।
পানি,গ্যাস, বিদ্যুত, জনস্বাস্থ্য, গণপরিবহণসহ রাজধানীর সরকারী-বেসরকারী সেবাখাতসমুহের সব সেক্টরই চলছে লাগামহীন দুর্নীতির মধ্য দিয়ে। ঢাকা ওয়াসার দুর্নীতি সংক্রান্ত টিআইবি’র প্রতিবেদনের পাশাপাশি তিতাস গ্যাসের দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও গতকাল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) পক্ষ থেকে দুদকের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বুধবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কাছে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাতে তিতাস গ্যাসের কর্মচারী-কর্মকর্তারা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ২২ ধরনের দুর্নীতি করছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘুষ লেনদেনের বিনিময়ে বাণিজ্যিক শ্রেণীর গ্রাহককে শিল্প শ্রেণীর গ্রাহক হিসেবে সংযোগ প্রদান, অবৈধ সংযোগ প্রদান, নতুন বৈধ সংযোগে অনীহা, অবৈধ সংযোগকে বৈধ করার ব্যবস্থা না করে ব্যক্তিগত স্বার্থে অবৈধ সংযোগ অব্যাহত রাখা, অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নেয়াসহ ২২ ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী-কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বছরের পর বছর ধরে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও প্রতিরোধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। টিআইবি তিতাসের দুর্নীতির খাতওয়ারি চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি তা প্রতিরোধে ১২ দফা সুপারিশ পেশ করেছে। এসব দুর্নীতি বন্ধে সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা’ই এখন দেখার বিষয়।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য বা নিকৃষ্ট শহরগুলোর অন্যতম হিসেবে তালিকাভুক্ত হচ্ছে ঢাকা শহর। আমরা যখন একবিংশ শতকের ডিজিটাল, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, তখন আমাদের রাজধানী শহরটি বসবাসের অযোগ্য, নোংরা ও অনিরাপদ শহর হিসেবে সারাবিশ্বে চিহ্নিত হচ্ছে। একদিকে শহরের অবকাঠামো উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, অন্যদিকে অবকাঠামোর পাশে গড়ে উঠছে বিশাল সব আবর্জনার ভাগাড়। শহরের চারপাশের সবগুলো নদী দখলে ও দূষণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। এসব নিয়ে পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের মধ্যে যেমন ব্যাপক উদ্বেগ ও দাবী-দাওয়া রয়েছে, পাশাপাশি সরকারও অবস্থার উন্নয়নে নানা উদ্যোগ ও প্রকল্প গ্রহণ করে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে শরিষার ভেতরের ভূত না তাড়িয়ে ভূতের আছর থেকে মুক্তির কোনো কার্যকর পন্থা খোলা নেই তা সরকারের সংশ্লিষ্টদের বুঝতে হবে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও সুয়্যারেজ ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসার ব্যর্থতা ও দুর্নীতির এই চিত্র হঠাৎ করেই দেখা দেয়নি। পানির জন্য মানুষের হাহাকার, পানিতে দুর্গন্ধ-ময়লা ও রোগজীবাণুর সংক্রমণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে রিপোর্ট হয়েছে। শহরের ৯১ ভাগ মানুষকে পানি ফুটিয়ে পান করার বাস্তবতা নগরবাসি বাধ্য হয়ে মেনে নিলেও এর বিপরীতে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে ঢাকা ওয়াসা বা সরকারের সংশ্লিষ্টদের যেন তেমন কোনো গরজ নেই। গ্রাহক পর্যায়ে অব্যাহতভাবে মূল্য বাড়ানো হলেও সেবার মান বৃদ্ধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো বাস্তব ফল দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডেসাসহ সবগুলো সেবাখাতের অবস্থা প্রায় অভিন্ন। এ সব দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার মত দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। সরকারের প্রশাসনিক ও সেবা খাতের দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে উন্নয়নের উদ্যোগ জনগণের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।