মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্যারিসের সৌন্দর্য ও ইতিহাসের প্রতীক নটরডেম গির্জা সোমবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ আগুনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অগ্নিকান্ডে গির্জার উঁচু মিনার এবং ছাদ ধসে পড়েছে। অগ্নিকান্ডের ধোঁয়া প্যারিসের আকাশ আচ্ছন্ন করে ফেলে। কয়েক সপ্তাহ ধরে সহিংসতার ক্ষত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার মধ্যে এ ভয়াবহ ঘটনা প্যারিসবাসীকে ম্রিয়মান করেছে।
ক্যাথেড্রালের কাঠের ছাদ থেকে আগুনের শিখা আকাশের দিকে ধেয়ে উঠতে দেখা যায়। গির্জার স্পায়ার আগুনে লাল টকটকে হয়ে ওঠার পর তা পরিণত হয় অঙ্গারে। সিন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ও নিকটবর্তী হোটেল দ্য ভিলি প্রাঙ্গনে সমবেত হাজার হাজার মানুষ বিস্ময়াভিভ‚ত হয়ে এ অগ্নিকান্ড দেখেন। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
৪৫ বছর বয়স্ক বিপণন পরিচালক পিয়েরে গুইলাম বনেট বলেন, এটা কারো পরিবারের একজনকে হারানোর মত বেদনাদায়ক। প্রায় ৫শ’ দমকল কর্মী আগুন নেভানোর জন্য ৫ ঘণ্টা ধরে লড়াই করেন। প্যারিস সময় রাত ১১টায় দমকল বাহিনী প্রধান জাঁ ক্লদ গ্যালেট বলেন, গির্জার প্রধান কাঠামোটি পুরোপুরি ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করা গেছে এবং এর গোটাটাই সংরক্ষিত আছে। তিনি বলেন, গির্জার সুউচ্চ দুটি টাওয়ার রক্ষা পেয়েছে, কিন্তু ছাদের দু তৃতীয়াংশ ভেঙে পড়েছে।
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সোমবার রাতে বলেন, অগ্নিকান্ডের সাথে লড়াইয়ে পুরো বিজয় অর্জিত না হলেও সার্বিক ধ্বংস এড়ানো গেছে। তিনি নটরডেম গির্জা পুনর্নির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এ সেই স্থান যার সাথে আমাদের সকল প্রধান মুহূর্তগুলোতে থেকেছি, এটা আমাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। এটা সকল ফরাসির গির্জা।
আগুনের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি বলে কর্মকর্তারা জানান। ক্যাথেড্রালের রেক্টর প্যাট্রিক শভেট বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরের কাঠের বিমের নেটওয়ার্ক থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। অগ্নিকান্ডে কেউ নিহত হননি, তবে এক দমকল কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। প্যারিসের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ আগুন লাগে। বহু মাস ধরে চলা ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সোমবার টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর একটি গুরুত্বপ‚র্ণ বক্তৃতা দেয়ার কথা থাকলেও অগ্নিকান্ডের কারণে তা তিনি বাতিল করেন।
মধ্যযুগে ১২ ও ১৩ শতকে দুশ’ বছর ধরে গথিক স্থাপত্যশৈলিতে নির্মিত নটরডেম গির্জাটি প্যারিসের শুধু প্যারিস নয়, সারা বিশে^র এক অনন্য নিদর্শন। ৮৫০ বছরের প্রাচীন গির্জাটি প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক ও বছরে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ পরিদর্শন করেন। এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
শত শত বছর ধরে ফ্রান্সের রাজা ও রানীদের এখানে বিবাহ অনুষ্ঠান হয়েছে। তাদের সমাহিতও করা হয়েছে এখানেই। ১৮০৪ সালে এখানে নেপোলিয়ানকে সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত করে তার মাথায় রাজমুকুট পরানো হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ১৯৪৪ সালে জার্মান দখল থেকে প্যারিসের মুক্তির পর প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গলের নেতৃত্বে এখানে থ্যাংকসগিভিং উৎসব উদযাপন করা হয়। ১৯৭০-এ এখানে দ্য গল ও ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট মিতেরাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় শেষ ট্যুরিস্ট দল যখন ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন তখন কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই গির্জার সবচেয়ে উঁচু স্থান স্পায়ার থেকে অল্প ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। প্রথমে ধূসর, তারপর কালো হতে থাকে ধোঁয়া, তখন পরিষ্কার হয়ে যায় যে ক্যাথেড্রালের অভ্যন্তরে আগুন লেগেছে। খুব দ্রুতই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তার কমলা রঙের লেলিহান শিখা স্পায়ারকে গ্রাস করে। আকাশের দিকে উঠতে থাকে আগুন ও ধোঁয়ার কুন্ডলি। স্পায়ার ভেঙ্ েপড়লে জনতার মধ্যে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। পিয়েরে এরিক ট্রিমোভিলাস বলেন, প্যারিসের শিরশ্চেদ হল। একটি জাতির অটলতার প্রতিম‚র্তি এভাবে পুড়ে যাওয়া এবং মিনার চোখের সামনে গুঁড়িয়ে যেতে দেখা যেকোনো ফরাসি নাগরিকের জন্য বিরাট এক ধাক্কা।
বলা হয়েছে যে, ক্যাথেড্রালে ব্যাপক পুনঃসজ্জার কাজ চলছিল। গত সপ্তাহে স্পায়ার পুনঃসজ্জার সময় ১৬টি তামার মূুর্তি সরিয়ে নেয়া হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্রেন্ডস অব নটরডেম ফাউন্ডেশন বলে যে গির্জার কাঠামো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজন। এ জন্য ৪০ মিলিয়ন ডলার লাগবে। বর্তমানে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র নটরডেম ক্যাথেড্রালের পাথরে ফাটল দেখা দেয়ার পর ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্যারিসের প্রসিকিউটর অফিস তদন্ত শুরু করেছে।
হলি উইকের সময় ইস্টার সানডের ৬ দিন আগে এ অগ্নিকান্ড ঘটল। রোমান ক্যাথলিকদের জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এটি ধর্মীয় তীর্থস্থান। ফ্রান্সের ক্যাথলিক ইতিহাস বহু পুরনো। দেশের দু’তৃতীয়াংশ মানুষ ক্যথলিক।
নটরডেম ক্যাথেড্রালের বৃহত্তম ঘন্টাটি ১৬৮১ সালে তৈরি। ফরাসি বিপ্লব এবং দুটি বিশ্বযুদ্ধসহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময় এ ঘন্টা বাজানো হয়। বার্নার্ড ফনকুয়েরনি ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে গির্জার পুনঃসংস্কার কাজের স্থপতি ছিলেন। তিনি বলেন, গির্জা ভবনের অধিকাংশ এবং সাজসজ্জা ও এর কাচ রক্ষা করা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।