পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা বসতি উচ্ছেদে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বর্ষার আগেই এসব বসতি সরিয়ে নিতে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে প্রশাসন। প্রতিবছর বর্ষার শুরুতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। গেল বর্ষায়ও ডাকঢোল পিটিয়ে অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন পাহাড়ে কিছু বসতি উচ্ছেদও হয়। অভিযান থেমে যেতেই ফের গড়ে ওঠে অবৈধ বসতি।
জেলা প্রশাসনের হিসেবে সরকারি-বেসরকারি ২৮ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের মধ্যে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড়েই’ বসবাস করছে ৮৩৫ পরিবার। পরিবারগুলোর বসবাস অবৈধ স্থাপনায় অথচ রয়েছে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ। পাহাড়খেকো ভ‚মিদস্যুরা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসব বসতি গড়ে তোলে। অবৈধ বসতিতে দেয়া হয় গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ। প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড় ধসে বেঘোরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বৃষ্টি শুরু হতেই উচ্ছেদ অভিযানে নামে প্রশাসন। কিছু বসতবাড়ি উচ্ছেদ হয়। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির। তবে যারা এসব অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত তাদের কিছুই হয় না।
পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হলেও তদন্ত বেশিদূর যায় না। ফলে বেপরোয়া পাহাড় দখল থামানো যাচ্ছে না। মহানগরীর প্রতিটি পাহাড়-টিলা বেদখল হয়ে গেছে অনেক আগে। পাহাড়ের যেসব অংশে বসতি নেই সেগুলো কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে দিনের আলোতে চলছে পাহাড় নিধন। মহানগরীর আশপাশে এমনকি বিভিন্ন উপজেলার পাহাড়ও এখন আর অক্ষত নেই। সেসব পাহাড়-টিলায়ও গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি। পাহাড়-টিলা ধ্বংস করে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে।
মাটি কেটে নিয়ে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর-ডোবা-জলাশয়। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে কিছু জরিমানা আর পরিবেশ আইনে মামলা করেই দায় শেষ করছে। ফলে বন্ধ করা যাচ্ছে না পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড় দখলের সাথে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত। তাদের এ শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে পারে না প্রশাসন।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বর্ষা সামনে রেখে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৯তম সভা বসে। বিভাগীয় কমিশনার ও কমিটির সভাপতি মো. আবদুল মান্নান এতে সভাপতিত্ব করেন। ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড় আগামী এক মাসের মধ্যে অবৈধ দখলমুক্ত করতে মালিকদের নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার। একই সঙ্গে ওইসব পাহাড়ে বসবাসকারীদের জন্য অবৈধ গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় সভায়। এসব পাহাড়ের মধ্যে ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং বাকি সাতটির মালিক সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, গণপূর্ত ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, আগামী ১৫ মের মধ্যে এসব পাহাড় অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের নিজ উদ্যোগেই পাহাড়কে অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়গুলোকে তাদের অবৈধ বসতি সরিয়ে নিতে চিঠি দেওয়া হবে। পাহাড় দখলমুক্ত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে জেলা প্রশাসন সহায়ত করবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় র্যাব, পুলিশসহ মোট ৫০টি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সভাকে সামনে রেখে পাহাড়ে অবৈধ বসতির হালনাগাদ তালিকা প্রণয়ন করে জেলা প্রশাসন। তালিকায় ঝুঁকিপূর্ণ ২৮টি পাহাড়ের মধ্যে ১৭টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ১৭টি পাহাড়ের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০ পাহাড়ে অবৈধভাবে বাস করছে ৫৩১ পরিবার। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন সাত পাহাড়ে বাস করছে ৩০৪ পরিবার। তালিকা থেকে জানা যায়, লেকসিটি পাহাড়ে আছে ২২ পরিবার, পূর্ব ফিরোজ শাহ পাহাড়ে ২৮টি এবং গৃহায়নের বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে ২৮টি পরিবার, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন পাহাড়ে ১০টি, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলে ১৬২টি, একে খান পাহাড়ে ২৬টি, হারুন খানের পাহাড়ে ৩৩টি, পলিটেকনিক সংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩টি, মধুশাহ পাহাড়ে ৩৪টি, ফয়’স লেকে ৯টি, বন গবেষণা পাহাড়ে ৩৩টি, লালখান বাজার মাদরাসা পাহাড়ে ১১টি, এম আর সিদ্দিকীর পাহাড়ে ৮টি, মিয়ার পাহাড়ে ৩২টি, ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে ১১টি, ট্যাংকির পাহাড়ে ১৬টি ও আকবরশাহ পাহাড়ে ২৮টি পরিবার রয়েছে। জেলা প্রশাসনের করা এর আগের তালিকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ছিল ৬৮৪টি পরিবার।
প্রসঙ্গত ২০০৭ সালের ১১ জুলাই একদিনের টানা ভারী বর্ষণে মহানগরী ও এর আশপাশের এলাকায় পাহাড় ধসে ১২৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই ঘটনার পর পাহাড় সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তৎকালীন উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিনের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি পাহাড় সুরক্ষায় বেশকিছু সুপারিশ পেশ করেন। তবে এসব সুপারিশের কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি। রোধ করা যায়নি বেপরোয়া পাহাড় নিধন। ফলে প্রতিবছরই বর্ষায় পাহাড় ধস আর গণমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। পাহাড় নিধনের ফলে পরিবশে ধ্বংস হচ্ছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা কাদা মাটিতে নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে পানিবদ্ধতা আরও প্রকট হচ্ছে। শুধুমাত্র পানিবদ্ধতাই নগরীতে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
মামলার হুমকি ডিসির
ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন না করলে কর্ণফুলী গ্যাস-পিডিবি ও ওয়াসার বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিলেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ইউটিলিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (কেজিডিসিএল-পিডিবি-ওয়াসা) যারা তারা যদি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ শুরু না করে, এসব পাহাড়ে যদি দুর্ঘটনায় কারও প্রাণহানি ঘটে- তাহলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আমি বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করবো। ডিসি বলেন, পাহাড়ে যারা অবৈধভাবে ঘরবাড়ি তুলেছে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তারাও দায়ী থাকবে। মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে আমরা খেলা করতে দেবো না। তিনি বলেন, বর্ষা আসলে উচ্ছেদ পরে আবার বসতি এটা চলতে পারে না। এর স্থায়ী সমাধান দরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।