মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ব্যাপক বোমাবাজি, সহিংসতা, ইভিএম নিয়ে নানা অভিযোগ আর মাওবাদীদের ভয়ে ভোটকেন্দ্র বর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম ভোটকাÐ শুরু হয়েছে। আগামী ছয় সপ্তাহের এ ভোটগ্রহণ শেষ হবে ১৯ মে এবং ফলাফল জানা যাবে ২৩ মে।
প্রথম দিনেই ভোটার তালিকা থেকে ব্যাপকহারে ভোটারদের নাম মুছে ফেলা, বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীন বিজেপির নামে খাবার, টাকা বিতরণ, সংঘর্ষ, বিক্ষোভ এবং ইভিএম আছড়ে ভেঙে ফেলাসহ নানামুখী অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ত্রিপুরায় বিজেপি ও কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে। এ সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আটজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের গড়চিরলি আসনের একটি ভোটকেন্দ্রের কাছে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
সাত পর্যায়ের নির্বাচনের প্রথম দিনে ভারতের ১৭টি রাজ্য এবং ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান নিকোবর ও লাক্ষাদ্বীপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়, যাকে অনেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির ভাগ্য নির্ধারণী হিসেবে দেখেন। বাংলাদেশের লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের আলীপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে ভোট হল গতকাল। এর মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ছিটমহল থেকে বিচ্ছিন্ন সেদেশের নাগরিকরা প্রথম ভোট দিলেন। এসব কেন্দ্রে সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরুর কথা থাকলেও
গতকাল ৭ পর্বের ভোটের প্রথম দিনে কমপক্ষে দুই জন নিহত হয়। এদের মধ্যে একজন ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের ক্ষমতাসীন তেলুগু দেশম পার্টির স্থানীয় নেতা, যিনি সিদ্ধ ভাস্কর রেড্ডি নামে পরিচিত। ভারতের ১শ’ ৩০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে নিবন্ধিত ভোটার ৯০ কোটি। প্রায় ১ লাখ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে ৫৪৩টি আসনের প্রতিনিধি বাছাই করা হবে।
এবার এনডিটিভির সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, বিজেপি এবার আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিজেপি পেতে পারে ২২৮টি আসন। ফলে ২০১৪ সালের চেয়ে বিজেপির আসন সংখ্যা ৫৪টি কমে যেতে পারে। ওই জনমত সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছে যে, এবার ২০১৪ সালের চেয়ে ভালো ফল করবে কংগ্রেস ও ইউপিএ। গতবার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের শোচনীয় ফল হয়েছিল। সব মিলিয়ে তারা পেয়েছিল মাত্র ৬০টি আসন। এবার তারা আগের বারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি আসন জিততে পারে। তাদের দখলে আসতে পারে ১৪০টি আসন। এনডিটিভি-র সমীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, কংগ্রেস এবার ৮৮টি আসন পেতে পারে। আর তা হলে আগেরবারের তুলনায় কংগ্রেসের এমপি সংখ্যা একেবারে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কারণ, কংগ্রেস ২০১৪ সালে মাত্র ৪৪টি আসনে জিতেছিল।
নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই কোমর বেঁধেছে বিরোধীরা। বাংলায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্ধ্রপ্রদেশে তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নায়ডু, জেডিএসের এইচডি দেবেগৌড়া, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতী এক হয়েছেন। ফলে আঞ্চলিক দলগুলি এবার কেমন ফল করে সেদিকে নজর রয়েছে সকলের। এনডিটিভি-র সমীক্ষা বলছে, আঞ্চলিক দলগুলি সব মিলিয়ে ১২৯টি আসন পেতে পারে।
স্নাইপারের টার্গেটে রাহুল গান্ধী, প্রাণহানির আশঙ্কা
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর মুখে অন্তত সাত বার লেজার রশ্মি ফেলা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই লেজার রশ্মি স্নাইপারের। তাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ভারতের উত্তরপ্রদেশে আমেথীতে গত বুধবার মনোনয়ন জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে কংগ্রেস। চিঠিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা ও রাজীব হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কংগ্রেস রাহুলের প্রাণহানির আশঙ্কা করেছে। দাবি জানানো হয়েছে নিরাপত্তা বাড়ানোর।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবারের ওই ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন এসপিজির কর্মকর্তা। প্রাথমিক তদন্তের পর তিনি জানিয়েছেন, সবুজ রঙের ওই লেজার রশ্মি মোবাইলে ছবি তোলার সময় হতে পারে। ওই ফোটোগ্রাফারও কংগ্রেসেরই। প্রাথমিক তদন্তে রাহুলের নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার মতো কোনও বিষয় নজরে আসেনি।
কংগ্রেস বলছে, সবুজ রঙের একটি লেজার সরাসরি রাহুলের কপাল লক্ষ্য করে সাতবার ফেলা হয়। সম্ভবত কোনো স্নাইপারগান থেকে রাহুল গান্ধীকে নিশানা করা হয়েছিল।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পরিবারের দুই সদস্য নাশকতার বলি হয়েছেন। তাই রাহুলেরও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এই ‘গুরুতর’ বিষয়টি অতি দ্রæত খতিয়ে দেখার আর্জি জানানো হয়েছে চিঠিতে। এসপিজির পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতি বলে উল্লেখ করে কংগ্রেসের বক্তব্য, রাজনৈতিক মতামতের ঊর্ধ্বে উঠে রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তা দেওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
ভিভিআইপি রাহুল জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান। তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রæপ (এসপিজি)। এছাড়া স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও বিষয়টি তদারকি করে। দু’পক্ষের সমন্বয়ের মাধ্যমেই গোটা এলাকার উপর কড়া নজরদারির কাজ চলে।
‘নমো ফুডস’ লেখা খাবারের প্যাকেট বিলি পুলিশকর্মীদের
লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরও রেল-বিমানের টিকিটে দেখা গেছে নরেন্দ্র মোদীর ছবি। কমিশনের নির্দেশে পরে সেটা সরিয়ে দেয়ার পর সেই বিতর্ক থামলেও প্রথম দফায় ভোটের দিন নয়া বিতর্কে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগরের একটি বুথে পুলিশকর্মীদের ‘নমো ফুডস’ লেখা খাবারের প্যাকেট বিলি করা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগ বিজেপির পক্ষ থেকেই ওই খাবারের প্যাকেট বিলি করা হয়েছে পুলিশ কর্মীদের।
কমিশন রিপোর্ট তলব করলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের দাবি, এটা নেহাতই কাকতালীয়। যে দোকান থেকে খাবারের অর্ডার দেয়া হয়েছে, তার নাম ‘নমো ফুডস’। এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম বা বিজেপির কোনও যোগ নেই। ওই নামে একটি দোকান রয়েছে বটে, কিন্তু তার মালিক কর্তৃপক্ষ সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধে থেকে তাদের দোকান বন্ধ। ওই ‘অর্ডার’ সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।
বৃহস্পতিবার সারা দেশেই চলছে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। গৌতম বুদ্ধ নগরের ওই বুথে সকালে দেখা যায় গাড়ি ভর্তি করে পুলিশ কর্মীদের জন্য খাবার আনা হয়েছে। গেরুয়া রঙের প্যাকেটের গায়ে বড় হরফে লেখা ‘নমো ফুডস’। সেই খাবার কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং তারা খাওয়াও শুরু করেন। কিন্তু তার মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে, ওই খাবারের প্যাকেট বিজেপির পক্ষ থেকেই পুলিশ কর্মীদের দেয়া হয়েছে কি না!
খবর যায় নির্বাচন কমিশনেও। নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু গৌতম বুদ্ধ নগরের এসএসপি বৈভব কৃষ্ণ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে পুলিশকর্মীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে একটি ভুল খবর ছড়িয়েছে। এটা সম্প‚র্ণ মিথ্যে। নমো ফুড নামে স্থানীয় একটি দোকান থেকে অর্ডার দিয়ে আনা হয়েছে। কিছু লোক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই খবর ছড়াচ্ছে।’’
এর পর সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা গৌতম বুদ্ধ নগরের ওই দোকানে যান। দেখা যায়, দোকান বন্ধ। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ওই অর্ডার সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না। তা হলে ওই প্যাকেটগুলি এল কোথা থেকে? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই রিপোর্ট চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটকেন্দ্রে ইভিএম তুলে আছাড় মারলেন প্রার্থী!
ভোটকর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিতÐায় জড়িয়ে তুলকালাম কাÐ করলেন এক প্রার্থী। ইভিএমে লোকসভা না বিধানসভা নির্বাচন, তা বোঝা না যাওয়ায় বাগ্বিতÐার একপর্যায়ে ইভিএম তুলে আছাড় মারেন। সঙ্গে সঙ্গেই ওই প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এএনআই, ইন্ডিয়া টুডে ও জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টাকাল বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বুথের এ ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল সকালে অন্ধ্র প্রদেশের অনন্তপুর জেলার গুটি বুথে ভোট দিতে যান জনসেনা পার্টির বিধানসভার প্রার্থী মধুসূদন গুপ্তা। ভোট দিতে গিয়ে দেখেন ইভিএমে লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্রের নাম ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছে না। তা দেখে মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি মধুসূদন। বাগ্বিতন্ডা শুরু করে দেন পোলিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে। একপর্যায়ে ইভিএম তুলে আছাড় মারেন মাটিতে। তবে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, জি নিউজ, এবিপি আনন্দ, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।