পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশ হারালো আরও একজন বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন বুজুর্গকে। পীরে কামেল প্রবীণ আলেমেদ্বীন আল্লামা মুহাম্মদ আজিজুল হক আল কাদেরী গতকাল রোববার সকালে বন্দরনগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে ৭ মেয়ে, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত-মুরীদসহ হাজার হাজার শিক্ষার্থী রেখে যান।
তিনি আজিজিয়া কাজেমী কমপ্লেক্স (ট্রাস্ট) বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, আল্লামা আহমদ সাঈদ কাজেমীর (রহ.) বাংলাদেশের একমাত্র খলিফা, হাটহাজারী ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা, হাটহাজারী আনোয়ারুল উলুম নোমানীয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসাসহ অনেক সুন্নী মারকাজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হাজারো আলেমেদ্বীনের উস্তাদ, অগণিত কিতাবের লেখক, সুবক্তা ও গবেষক। সুন্নীয়াতের প্রচার-প্রসার ও খেদমতে তিনি ছিলেন নিবেদিত।
দেশবরেণ্য এই আলেমেদ্বীনের ইন্তেকালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সর্বস্তরের হাজারো মানুষ মুহাব্বত ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ছিপাতলী মাদরাসা ময়দানে সমবেত হন। অনেকেই মরহুমের পুত্র ছিপাতলী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এবং জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় কমিটি ও চট্টগ্রামের অন্যতম নেতা আল্লামা আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদউদ্দিন এবং পরিবারবর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গভীর শোক ও সমবেদনা ব্যক্ত করেন। আজ (সোমবার) বাদ আসর ছিপাতলী মাদরাসা ময়দানে নামাজে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের শোক
প্রবীণ ও বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরীর ইন্তেকালে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান ও মহাসচিব প্রিন্সিপাল আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী এক যুক্ত বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ এবং মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেছেন।
বিবৃতিতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নেতৃবৃন্দ ইসলামের বহুমুখী খেদমতে সারাজীবন নিবেদিতপ্রাণ পীরে কামেল আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরীর অবদান স্মরণ করে বলেন, তিনি জমিয়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে থেকে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন, অনেকগুলো মাদরাসা-মক্তব প্রতিষ্ঠা, আলেম-মাশায়েখগণের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধিতে বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাবেক সভাপতি, ধর্ম ও ত্রাণমন্ত্রী হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। দেশবরেণ্য এ আলেমের ইন্তেকালে এই শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। আমরা আল্লাহতায়ালার দরবারে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করার জন্য মোনাজাত করছি। সেই সঙ্গে মরহুম এই বিশিষ্ট আলেমেদ্বীনের শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের নিকট গভীর সমবেদনা জানাই, আল্লাহতায়ালা তাদেরকে এ শোক সইবার ধৈর্য্য ও শক্তি প্রদান করুন। আমীন।
তাছাড়া এ প্রবীণ আলেমেদ্বীনের ইন্তেকালে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহল শোক প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে রয়েছেন ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা কাযী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী, শেরে মিল্লাত আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী, চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়্যদ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান, উপাধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুহাম্মদ লিয়াকত আলী, আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারী, মুফতি আল্লামা কাজী মুহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, মুফাসসির মাওলানা কাজী মুহাম্মদ ছালেকুর রহমান আলকাদেরী, আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আলকাদেরী, আল্লামা দোস্ত মোহাম্মদ (রহ.) ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়দ নুরুল মোনাওয়ার, মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিন, সুন্নী জগৎ পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, ওয়াছিয়া আহমদীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মুহাম্মদ আবু ছালেহ, আনঞ্জুমানে কাদেরী চিশতীয়া আজিজিয়া চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি মুহাম্মদ ওয়াসিম আকরাম প্রমুখ। তারা মরহুমের রফায়ে দরজাত কামনা এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
বর্ণাঢ্য জীবনী
পেশোয়ায়ে আহলে সুন্নাত হিসেবে সুপরিচিত আল্লামা মুহাম্মদ আজিজুল হক আল কাদেরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ছিপাতলী গ্রামে ১৯৪৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মুহাম্মদ ইলিয়াছ শাহ, মা মরহুমা কাজী মোস্তফা খাতুন। তিনি ১৯৬৬ সালে ওয়াজেদীয়া আলীয়া মাদরাসা থেকে কামিল হাদিস, ১৯৬৮ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসায় ফিকাহ শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় থেকে হাদীস ও তাফসির বিষয়ে উচ্চতর (এম.ফিল) ডিগ্রী লাভ করেন। লেখাপড়া শেষ করে লাহোর সিরাজুল উলুম মাদরাসার মুহাদ্দিসের দায়িত্বে নিয়োজিত হন। অধ্যাপনার পর দেশে ফিরে দ্বীন ইসলামের খেদমতে প্রথমে হাটহাজারী নাঙ্গলমোড়া শামসুল উলুম ফাযিল মাদরাসা, হাটহাজারী অদুদিয়া ফাযিল মাদরাসা, গহিরা এফ কে জামেউল উলুম কামিল মাদরাসা ও নাজিরহাট আহমদিয়া মিল্লিয়া কামিল মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষতা ও সুনামের সাথে অধ্যক্ষ ও মুহাদ্দিসের দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে শিক্ষার আলো বিস্তারের লক্ষ্যে ছিপাতলী কামিল মাদরাসা, হাটহাজারী আনোয়ারুল উলুম নোমানিয়া ফাযিল মাদরাসা, বেতবুনিয়া মঈনুল উলুম রেজভীয়া সাঈদিয়া আলিম মাদরাসাসহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে অনেক মসজিদ-মাদরাসা, খানকা, এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে, বিভিন্ন ভাষায় ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি বিশ্বখ্যাত আলেমেদ্বীন ওলীয়ে কামেল আল্লামা শাহসুফী সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাজেমীর (রহ.) হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে খিলাফত লাভ করেন।
ত্বরিকতের প্রচার-প্রসার ও জনসাধারণকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনার দিতে প্রতিষ্ঠা করেন ত্বরিকত ভিত্তিক আধ্যাত্মিক সংগঠন আঞ্জুমানে কাদেরীয়া চিশতীয়া আজিজিয়া বাংলাদেশ। তিনি আজিজিয়া কাজেমী কমপ্লেক্স (ট্রাস্ট) বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত গবেষণায় মগ্ন ছিলেন। আল্লামা কাদেরীর ইন্তেকালে ছিপাতলী আলিয়া মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ গভীর শোক প্রকাশ করে শিক্ষকবৃন্দ বলেছেন, আল্লামা কাদেরীর ইন্তেকালে দেশ এক প্রখ্যাত আলেমেদ্বীনকে হারাল। তার শূন্যস্থান কখনও পূরণ হওয়ার নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।