বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক কর্মচারীর জামাতাকে তুলে নিয়ে মারধর, ছিনতাই ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৩ কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ ৪৪ ব্যাচের সঞ্জয় ঘোষ (আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ ৪৫ ব্যাচের মো. আল রাজী (মীর মশাররফ হোসেন হল) এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ ৪৫ ব্যাচের মো. রায়হান পাটোয়ারি (শহীদ রফিক-জব্বার হল)।
এদের মধ্যে রায়হান পাটোয়ারি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত ও অবাঞ্ছিত হলেও সে এখন ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় হলে থাকনে বলে হল সূত্রে জানা গেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় বহিষ্কৃত হওয়ার পর শাখা ছাত্রলীগ তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
অন্যদিকে আজ আটক সঞ্জয় ঘোষ ও আল রাজী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা রাজনীতি করে বলে দাবি করেছেন।
এদিকে আজকের এই ঘটনার সাথে জড়িত আরো দুই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তারা হলেন- ৪৫ ব্যাচের শিবলু (দর্শন বিভাগ) ও সৈকত (সিএসসি বিভাগ)।
শনিবার (৩০ মার্চ) ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছন থেকে তাদেরকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। পরে তাদেরকে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়। এরপর প্রক্টর অফিসে নিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ভূক্তভোগীর আত্মীয়-স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী (ড্রাইভার) মো. আলমগীর হোসেনের জামাতা মো. মনির সরদার বিশমাইলে তার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। আজ শনিবার ভোরে তিনি ঢাকায় চাকরির স্থলে যোগদানের জন্য বিশমাইল এলাকায় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় আটককৃতরা সহ ৫ জন তাকে ধরে সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ সহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন। এক পর্যায়ে আত্মরক্ষার জন্য তিনি দৌড় দেন। এরপর তারা ধাওয়া দিয়ে তাকে আটক করে একটি ইজিবাইক যোগে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে নিয়ে যান। সেখানে তারা তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করেন এবং বেধড়ক মারধর করেন। পরে তারা মনিরের স্ত্রীর কাছে মুঠোফোনে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। এরপর খবর পেয়ে মনিরের শ্বশুর বাড়ির লোকজন সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী ঘটনাস্থলে যান। এসময় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করলে তাদের তিনজনকে আটক করা গেলেও অন্য দুইজন পালিয়ে যান। এরপর তাদেরকে প্রথমে নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে আসেন কর্মচারীরা। আর ভূক্তভোগী মনির সরদারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাভারের একটি বেসরকারী হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ভূক্তভোগীর শ্যালক বলেন, ওই শিক্ষার্থীরা তার বোনের কাছে ফোন দিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করেন। পরে সেই ইজিবাইক চালকের মাধ্যমে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভূক্তভোগীকে উদ্ধার করেন।
মো. মনির হোসেন বলেন, আমি ফার্মগেটে প্রাইভেট কার চালাই। ভোরে ফার্মগেটে যাওয়ার জন্য শ্বশুর বাড়ি থেকে রওনা দেই। বিশমাইলে রাস্তার ঢাল বেয়ে নামার সময় আমাকে আটক করে। তারা আমাকে মাদক ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করে এবং এটা আমাকে স্বীকার করতে বলে। এরপর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে নিয়ে চেইন দিয়ে প্রায় ঘন্টাব্যাপী মারধর করে। তারা আমার কাছে থাকা টাকা, ফোন, মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে নেয়।
এ বিষয়ে সঞ্জয় ঘোষ বলেন, আমি জুনিয়রদের ফোন পেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে যাই। আমি বিষয়টি জানতাম না। গিয়ে দেখি, ওরা তাকে মারধর করেছে। তবে ছিনতাই ও মুক্তিপন দাবি করা হয়নি।
অপর দুই মো. আল রাজী ও মো. রায়হান পাটোয়ারি মারধরের কথা স্বীকার করলেও ছিনতাই ও মুক্তিপন দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, `আমরা অভিযুক্তদের লিখিত ভাষ্য নিয়েছি। অভিযোগকারীদের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তাদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ডিসিপ্লিনারী বোর্ডের বৈঠকের মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।’
এই বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানাকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।