Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগবান্ধব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও আগামী দশক নাগাদ দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের যে সব উচ্চাভিলাসি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। গত প্রায় এক দশক ধরে দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে এর তেমন কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি। রেমিটেন্স আয়, ফরেক্স রিজার্ভ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মূলত বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং গার্মেন্টস রফতানী খাতের উপর বহুলভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রফতানী আয়ের বহুমুখীকরণ এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বিগত সময়ে সরকারের উদ্যোগগুলো কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। সে ব্যর্থতার অভিজ্ঞতার আলোকে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী, নতুন মন্ত্রীসভায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থনীতি ও বিনিয়োগের বন্ধ্যাত্ব কাটাতে শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বিশেষত অর্থপাচার রোধ এবং খেলাপি ঋণের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারলে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রফতানী বাণিজ্যে এর সুফল নিশ্চিত হতে পারে। এর একটি অপরটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
গতমাসে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, দেশের তফশিলি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋনের পরিমান প্রায় লক্ষকোটি টাকা। এ ছাড়া গত এক দশকে নানাভাবে দেশ থেকে টাকা পাচারের পরিমান প্রায় ৭ লক্ষকোটি টাকা। এই বিশাল খেলাপি ঋণ এবং টাকা পাচারের রুট বন্ধ করতে না পারলে অর্থনীতিতে কাঙ্খিত গতি সঞ্চার করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী প্রথমেই খেলাপী ঋণের জালে পড়া বিনিয়োগকারি ও ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগকে ইতিবাচক খাতে প্রবাহিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আগামী ১ মে থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে চক্রবৃদ্ধি সুদের হার রহিত করে সরলাঙ্কিক ৭ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করণের সুযোগ, ২শতাংশ ডাউন পেমেন্ট করে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পরিশোধ করে ভালো ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের এই সুযোগ না দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চে অর্থনীতিবিদ ড.জায়েদ বখতকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছিল সরকার। সেই কমিটির রিপোর্ট ও সুপারিশ অনুসারে ব্যাংকিং সেক্টরের স্থবিরতা এবং ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ সচল রাখতে এসব পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার।
খেলাপি ঋণ এবং ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্নীতি ও অচলাবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিগত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আক্ষেপ প্রকাশ করলেও সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারেননি। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করতে চলেছেন। দেশে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা, অর্থনৈতিক খাতে সম্ভাবনা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কাজ করছে এসব খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও আমলাতান্ত্রিক দৌরাত্ম্য। গত সোমবার রাজধানীতে সরকারী মালিকানাধীন বৃহত্তম ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে কোরানের আয়াত উদ্ধৃত্ত করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঘুষ না খাওয়ার শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন বলে গতকাল প্রকাশিত খবরে জানা যায়। ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে একদিকে যেমন সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, অন্যদিকে ব্যাংকিং সেক্টরের কর্মকর্তাদের মোটিভেশন ও নৈতিক অবস্থান এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আইনের পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়টিকে স্মরণ করিয়ে দেয়া নি:সন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ও নজিরবিহন। অর্থমন্ত্রীর এই উদ্যোগ লক্ষ্য অর্জনে সফল হোক। ব্যাংকিং সেক্টরের অস্বচ্ছতা এবং খেলাপি ঋণের দুষ্টচক্র ভেঙ্গে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ও রফতানী বাণিজ্যে কাঙ্খিত গতি ফিরে আসবে। এই প্রত্যাশা সকলের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগবান্ধব


আরও
আরও পড়ুন