Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাবে অর্থ পাচার

প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থ পাচার রোধে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান দরকার- ড. আকবর আলী খান বিনিয়োগ না হওয়ার দায় সরকারেরই- ফরাসউদ্দিন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাবে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাও অর্থ পাচারের অন্যতম কারণ। সরকার কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।
রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল ‘আন্তঃদেশীয় অবৈধ অর্থ প্রবাহ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থ পাচারের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাব অন্যতম কারণ। এ ছাড়া দেশের ভেতরে নিরাপত্তার অভাববোধও একটি কারণ। বিদেশে অর্থ পাচার রোধে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি, অপরাধীদের দৃশ্যমান শাস্তি, ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে বিদেশে টাকা পাঠাতে না দেয়া ও শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহের পর তার সঠিক ব্যবহার নিয়ে যথাযথ তদারকির প্রয়োজন।
রাজনৈতিক অস্থিরতাকে অর্থ পাচারের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন আহমেদ। গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা ২০০৭ সালের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। ওই সময় কেয়ারটেকার গভার্নমেন্টের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের একটা মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল। এজন্য তখন অর্থ দেশে না রেখে বিদেশে পাচার হয়েছে। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের চেয়ে আরও ৩৫ শতাংশ অর্থ পাচার বেড়ে যায়।
অর্থ পাচারে বিনিয়োগবান্ধব প্রতিকূলতাও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ফরাস উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। কারণ সরকারকেই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরির জন্য নীতি-কৌশল, সুযোগ-সুবিধা করে দিতে হবে। আর শতভাগ বিনিয়োগের পরিবেশ থাকলে অর্থপাচার হতো না।
সাবেক এই গভর্নর বলেন, অর্থ পাচার রোধের জন্য দেশে টাকা থাকলে নিরাপদে থাকবে এই মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে পাচারকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে দুই ধরনের অপরাধের বিচার হয় না। এক স্বর্ণ চোরাচালান, দুই ফরেন কারেনসি পাচার। অনেকেই ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট লিবারালাইজেশনের কথা বলছেন। মনে হয় এটা করার এখন সময় এসেছে।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থেই মুদ্রা বিনিময় হারকে বাজারমুখী করতে হবে। সঠিকভাবে মুদ্রা বিনিময় হারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারলে ছোটখাটো পাচার হতো না। মুদ্রার অতি মূল্যায়নের কারণে রেমিট্যান্স কমছে ও অর্থপাচার বাড়ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমালোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, সময় এসেছে প্রাইস কমিশন জাতীয় কিছু করার। এই কমিশন পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) নির্ধারণ করে দেবে। এছাড়া অর্থ পাচার রোধে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি ও স্বর্ণ চোরাচালান ধরার পাশাপাশি বিচার করতে হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশে লোকজন টাকা রাখতে ভয় পায় বলে জানিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, অর্থ পাচার রোধে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে। ড. আকবর আলি বলেন, অর্থ পাচারের দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি হলো উন্নত দেশের দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যটি হলে আইনের শাসনের অভাব। প্রশ্ন হলো কেন অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমার মনে হয় কর ফাঁকি দিতে এই টাকা পাচার হচ্ছে না। মূলত বাংলাদেশে লোকজন টাকা রাখতে ভয় পায়, করের হার আরো কমানো হলেও পাচার বন্ধ হবে। দেশ থেকে অনেক মানুষ চলে যেতে চায়।
অর্থ পাচার রোধে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠনের পরামর্শ দিয়ে ড. আকবর আলি খান বলেন, এই স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। এখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশে সর্বত্র সুশানের অভাব রয়েছে। সুশানের অভাব টাকা পাচারের একটি বড় কারণ। দেশ থেকে প্রচুর টাকা অবৈধভাবে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়টি খুবই জটিল। এই অর্থ পাচার রাতারাতি বন্ধ করা যাবে না। অর্থ পাচার রোধে আমাদের আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে। দুদকের কাজ দুর্নীতি রোধ করা, অপ্রিয় হলেও সত্য তাদের পক্ষে অর্থ পাচার রোধ করা অসম্ভব বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ। এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ২০১৩ সালে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের খবর শুনে হতবাক হয়েছি। গাছের গোড়ায় না গিয়ে পাতা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করায় এ অবস্থা। অর্থ পাচার রোধে মূল জায়গায় কাজ করতে হবে এবং মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় অর্থ পাচার ৮০ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় চলে যাবে।’
আলোচনার সভাপতি সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কয়েকটি বিষয়ে কাজ করলে অর্থ পাচার রোধ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তি উন্নত ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পাচার হওয়া অর্থের চেয়ে পাচার রোধে বেশি সময় দেয়া, আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সমন্বয়, অর্থ পাচারকারীদের দৃশ্যমান শাস্তি ও দুদক, রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ইত্যাদির মধ্যে সমন্বয়, সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাবে অর্থ পাচার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ