ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
আর কে চৌধুরী
আমাদের দেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এ অবস্থায় করণীয় হচ্ছে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ আরও উন্নত করা। আর এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। সংঘাত-সহিংসতার ইতি ঘটানো।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করে আসছি, কি দেশি, কি বিদেশি কোনো বিনিয়োগই বাড়ছে না। বিগত বছরগুলোর বিনিয়োগ চিত্র এর প্রমাণ বহন করে। বিনিয়োগ আকর্ষিত না হওয়ার বা না বাড়ার নানাবিধ কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব প্রধান। এ ছাড়া রয়েছে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা, লালফিতার দৌরাত্ম্য, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব, রেল সড়ক ও নৌপথের অবকাঠামোগত দুর্বলতা ইত্যাদি। শিল্প বিনিয়োগের জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সংস্থান এবং উন্নত পরিবহন অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
উৎপাদন ও বিনিয়োগে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, তা কাটিয়ে উঠতে হবে। রফতানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি রফতানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বৈচিত্র্যেও নজর দিতে হবে। প্রচলিত পণ্যের সঙ্গে ওষুধ, জাহাজ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং ফার্নিচার রফতানিতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সূত্র মতে, ২০১০ সালে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপিতে রফতানির অবদান ছিল ১৪ শতাংশ। যা ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকীর শেষে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকীর প্রথমে অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছরের শেষ ৬ মাসে রফতানি আয় হয়েছে এক হাজার ৬১৭ কোটি ৬২ লাখ কোটি ডলার। এর পরে ২০১১-১২ অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ২ হাজার ২৯১ কোটি ৯ লাখ ডলার। আর রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয় ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু তৈরি পোশাকশিল্প থেকেই আয় হয় এক হাজার ৭৯১ কোটি ৪ লাখ ডলার এবং বাকিটা সব খাত থেকে আয় হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪২৮ কোটি ৭ লাখ ডলার প্রবৃদ্ধি অনেক কমে ৬ শতাংশ হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানি আয় হয় ২ হাজার ৭০২ কোটি ৭ লাখ ডলার এবং প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৩ হাজার ১৮ কোটি ৬ লাখ ডলার ও প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। সব শেষ গত অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৬৯ কোটি ৫ লাখ ডলার এবং প্রবৃদ্ধি অনেক কমে হয়েছে ৫ শতাংশ।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর-ইপিবি সূত্রমতে, বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু রফতানি হয়েছে তিন হাজার ১১৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে ছয় শতাংশ কম রফতানি হয়েছে। তবে আগের বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন দশমিক ৩৫ শতাংশ। তৈরি পোশাকসহ হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, অন্যান্য পাদুকা, পাট, বিশেষায়িত টেক্সটাইল, হোম টেক্সটাইল, কম্পিউটার সেবা রফতানি অর্জন করতে পারেনি লক্ষ্যমাত্রা।
এ কথা সত্য বিভিন্ন কারণে গেল অর্থবছরে রফতানি আয় অনেক কমেছে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে ভবিষ্যতে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তাই তো আগামীর জন্য ভালোভাবেই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আগামীর পঞ্চবার্ষিকী শুরু হচ্ছে। তাতে এ অর্থবছরে রফতানির আয় ধরা হয়েছে ৩১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার এবং রফতানির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৩ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ও প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪০ দশমিক ৬ বিলিয়ন এবং প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ও প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ও প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক এক শতাংশ এবং শেষ অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৯-২০ এ রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ও প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশ। আগামীতে মোট রফতানি আয় হবে ২৬ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার। গড়ে রফতানি আয় ধরা হয়েছে ৪৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ও প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সম্পর্কিত সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, গত অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ পূর্বের বছরের তুলনায় বেশি হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রার মূল্য কমে যাওয়ায় আমাদের আয়ের পরিমাণ কমেছে। গত বছর ১ কোটি ইউনিট পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১.৫৭ কোটি ইউনিট রফতানি করা সম্ভব হয়েছে। দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিদ্যমান থাকলে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রার মূল্য কমে না গেলে লক্ষ্যমাত্রার আরও বেশি পণ্য রফতানি ও আরও বেশি আয় অর্জন সম্ভব হতো। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রার মান বাড়লে এ বছর রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
বাণিজ্যমন্ত্রীর এ কথার সূত্র ধরে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রফতানি সম্ভব হলে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রার মান বাড়লে রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে যাবে। আমাদের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা উত্তরোত্তর বাড়ছে এবং আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে কিছু পূর্বশর্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে হবে। উৎপাদন ক্ষেত্রসমূহের পরিবেশ শান্ত, উত্তেজনামুক্ত ও স্থিতিশীল রাখতে হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে; বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সভাপতি বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন, সদস্য এফবিসিসিআই, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।