Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বুড়িগঙ্গা-তুরাগে ফের উচ্ছেদ

ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ভয়-ভীতির উর্ধ্বে থেকে সমন্বিতভাবে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর তীরে অবৈধ স্থপনা উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করতে বিআইডব্লিউটিএকে নির্দেশ দিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ।
গতকাল সোমবার ঢাকা নদী বন্দর টার্মিনাল সদরঘাট থেকে মোহাম্মদপুর বসিলা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের উচ্ছেদকৃত এলাকা পরিদর্শনকালে এ নির্দেশ দেন তিনি। নৌপরিবহন সচিব বলেন, ঢাকা শহরের চারদিকের নদীগুলোসহ দেশের সকল নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন নদীসমূহের তীরভূমিসহ নদীগর্ভ হতে অবৈধ স্থাপনা- ভরাট উচ্ছেদ অপসারণের লক্ষ্যে অভিযান জোরদার করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২ কার্যদিবসে বুড়িগঙ্গা-তুরাগে পরিচালিত ১ম পর্ব অভিযানের স্থানগুলো উচ্ছেদকৃত আবর্জনা-ভরাটকৃত অংশ অপসারণসহ চলমান ওয়াকওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণের লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণকে নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। নৌপরিবহন সচিব সাংবাদিকদের বলেন, নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে দখল-দূষণমুক্ত প্রবহমান নদী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভয়-ভীতির উর্ধ্বে থেকে জিরো টলারেন্স মনোভাবে জেলা প্রশাসন, রাজউক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিয়ে সমন্বিতভাবে চলমান উচ্ছেদ অভিযান আরো জোরদার করতে বলা হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় আমিন মোমিন নামক একটি হাউজিং কোম্পানী সম্পূর্ণভাবে ভরাটকৃত তুরাগ নদীর মুল চ্যানেলটিসহ বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর গর্ভ-তীরভূমির ভরাটকৃত অংশ ড্রেজিং এর মাধ্যমে দ্রুত অপসারনেরও নির্দেশ দেন নৌ পরিবহন সচিব। তিনি বলেন, উচ্ছেদকৃত এলাকা যাতে পুনরায় বেদখল না হয়ে যায় সেজন্য কঠোর মনিটরিং ও পাহারাদার নিয়োগের ব্যবস্থাসহ ওয়াকওয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করবে বিআইডব্লিউটিএ। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে ১২ দিন অভিযান করা হয়। অবৈধ দখলে বিআইডব্লিউটিএ-এর কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকলে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সচিব বলেন, শুধু অভিযান নয়, নদীতীর যাতে কেউ আর দখল করতে না পারে সেজন্যও নিয়মিত নজরদারিও চালানো হবে। এর আগে তুরাগ তীরে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৭শ’ ২০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
গত ২৯ জানুয়ারি থেকে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদ ও এর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিআইডব্লিউটিএ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম তিন পর্যায়ের অভিযানকালে ৯ দিনে মোট ১ হাজার ৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং প্রায় ১৩ একর তীরভূমি উদ্ধার হয়। উচ্ছেদকৃত অবৈধ স্থাপনার মধ্যে অনেকগুলো বহুতল পাকা ভবন ও কারখানা ছাড়াও আধাপাকা ভবন এবং টিনের ঘর ও টংঘরও রয়েছে। এই সময়কালে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের দায়ে সংশ্লিষ্টদের ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একজনকে এক মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান ১১ দিনের মাথায় এসে বাধার মুখে পড়ে।
বসিলা এলাকায় তুরাগের পাড় দখল করে গড়ে তোলা একটি হাউজিং প্রকল্প উচ্ছেদে গিয়ে এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের বাধার মুখে পড়েন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা। এমনকি উচ্ছেদ অভিযান সাময়িক স্থগিত করে ফিরেও আসতে হয়েছে তাদের। তবে প্রভাবশালী মহলের এমন বাধা সত্তে¡ও বুধবার থেকে আবার উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা। এদিন সকাল ৯টায় বসিলা এলাকা থেকেই শুরু হবে উচ্ছেদ অভিযান।
গত ২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় এ অভিযান। ওই দিন বসিলা এলাকায় তুরাগের তীরভূমি দখল করে গড়ে তোলা ‹আমিন- মোমিন হাউজিং› থেকে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। স্থানীয় দুই ভাই আমিন ও মোমিন নদীর জায়গা দখল করে ওই হাউজিং গড়ে তুলেছেন। তবে হাউজিং প্রকল্পটির মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর প্রভাবশালী ঠিকাদার রাকিবুল আলম দীপুর নামে শতশত সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে।
বিআইডব্লিউটি-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার অল্প সময় পর হঠাৎ করেই অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর দুপুর আড়াইটার দিকে উচ্ছেদ অভিযানের তত্ত্বাবধানে থাকা বিআইডব্লিউটিএ-এর ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন সংস্থার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার ফোন পেয়ে অভিযান এলাকা ছেড়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহূত বুলডোজার ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যরাও এলাকা ত্যাগ করেন। বন্ধ থাকা উচ্ছেদ অভিযান আবারো শুরু হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উচ্ছেদ

১৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ