পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) অপ্রতিরোধ্য। এই অবৈধ কারবার নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। কর্তৃপক্ষীয় তরফে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেমন, আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল টার্মিনেশন রেট কমানো হয়েছে, বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন চালু করা হয়েছে, অবৈধ কল আদান-প্রদানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অথচ এসব পদক্ষেপে তেমন কোনো সুফল মেলেনি। কোনো কিছুতেই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার রাস টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। উল্টো দিন কে দিন এই ব্যবসার বাড়-বাড়ন্ত লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বৈধপথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবৈধ ভিওআইপি কল বেড়েই চলেছে। এই অবৈধ ব্যবসার সুবাদে প্রতিবছর দেশ থেকে পাচার হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। আর সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। বিটিআরসির তথ্য মতে, প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিট কল আসছে অবৈধ পথে। অনেকে মনে করেন, অবৈধ কলের সংখ্যা বিটিআরসি’র দেয়া সংখ্যার চেয়ে আরো বেশি। তিন বছর আগেও যেখানে অবৈধ ভিওআইপি’র পাশাপাশি বছরে আন্তর্জাতিক কল থেকে রাজস্ব এসেছে ২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা সেখানে গত বছর এটি নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে; মাত্র ৯শ’ ৫ কোটি টাকা। বলা বাহুল্য, বৈধ পথে কল সংখ্যা কমে যাওয়ায় সরকার প্রতিবছর বিপুল অংকের রাজস্বই হারাচ্ছে না, বৈধ লাইসেন্সধারী আইআইজি অপারেটরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, অবৈধ ভিওআইপি মারফৎ হাতিয়ে নেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় যাচ্ছে, কি হচ্ছে তারও কোনো হদিস মিলছে না। পাচার হচ্ছে, তথ্য কেবল এটুকুই।
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে কারা জড়িত, সেটা অত্যন্ত সঙ্গত ও বড় প্রশ্ন। যারাই জড়িত, তাদের খুঁটি যে খুব শক্ত, তা উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। বলা হয়, তারা এতটাই প্রভাবশালী ও শক্তিমান যে তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিটিআরসি’র তরফে যে সব অভিযান চালানো হয়, তাতে সরঞ্জামসহ যাদের আটক করা হয়, তারা আসল ব্যক্তি নয়। এর পেছনের রাঘব-বোয়ালরা সব সময়ই অধরা থেকে যায়। সংস্থাটি তাদের খুঁজে বের করার কোনো উদ্যোগ নেয় না। অভিযোগ রয়েছে, বিটিআরসি’তেই এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যারা এই অবৈধ কারবারের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। তাদের ছত্রচ্ছায়া ও পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই মূল হোতা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আসলে এ ধরনের অভিযান লোক দেখানো কিনা, সে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যে অভিযান কাঙ্খিত সুফল দেয় না, তা চালানো-না চালানো সমান কথা। বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন, গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরে দুটো বড় ধরনের অভিযান পরিচালিত হওয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ্যণীয় নয়। এখানে অনেকেরই গাফিলতি আছে বলে তিনি মনে করেন। নিষ্ফল অভিযান এবং তাতে অনেকেরই গাফিলতি আছে বলে স্বীকার করার মধ্যে দায় এড়ানোর যে মনোভাব স্পষ্ট, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণীয় হতে পারে না। বৈধপথে ভিওআইপি ব্যবসা নিশ্চিত করা এবং অবৈধ ব্যবসা রহিত করার দায়িত্ব বিটিআরসি’র। কোনো অজুহাতেই এ দায়িত্ব পাশ কাটাতে পারেনা সংস্থাটি। কেন অভিযান চালানোর পরও সুফল আসছে না, কেন অবৈধ কারবারের মূল হোতাদের পাকড়াও বা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তার জবাব বিটিআরসিকেই দিতে হবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, বৈধ কলের চেয়ে অবৈধ কল বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার ক্রমাগত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার ভাষায়, এখাত থেকে প্রতিনিয়তই আয় কমছে। বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশন) বলেছেন, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা দৈনিক মাত্র একলাখ সিম ব্যবহার করলেও বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। প্রশ্ন উঠতে পারে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা দৈনিক কত সিম ব্যবহার করছে? সিম ব্যবহার করে কিভাবেই বা তারা এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে? বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের পর এটা কিভাবে সম্ভব? বায়োমেট্রিক ছাড়া সিম বিক্রী হওয়ার কথা নয়। বিভিন্ন অভিযানে যে হাজার হাজার সিম জব্দ করা হয়েছে, তাতে প্রমাণিত হয়, মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমে ওইসব সিম অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের হাতে গেছে। গ্রামীণ ফোন, টেলিটক, রবি, বাংলালিংক প্রভৃতি অপারেটরের সিম পাওয়া গেছে। এটা সাক্ষ্য দেয়, অপারেটররা এই অবৈধ ব্যবসার সহযোগী। এর মধ্যে বিভিন্ন অপারেটরের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছে বিটিআরসি। জরিমানা আদায় এর সমাধান নয়। অপারেটরদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এব্যাপারে বিটিআরসি কতটা রাজি? অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ করতে হলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের যেমন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে তেমনি এই অবৈধ ব্যবসার মূল হোতাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই সঙ্গে বৈধভাবে কল করার সুবিধা বাড়াতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।