পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আন্তর্জাতিক কল রেট কমানো, অভিযান সত্ত্বেও কমছেনা অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) ব্যবসা। খোদ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) তথ্য অনুয়ায়ি প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিট কল টার্মিনেশন (অবৈধ উপায়ে কল আসা) হচ্ছে। যার ফলে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যারা লাইসেন্স নিয়েছেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করছে সেই বৈধ লাইসেন্সধারী আন্তর্জাতিক কল আনা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ)। অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে বিটিআরসি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করলেও কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না এই ব্যবসা। যদিও এসব অভিযানে কল টার্মিনেশনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়াত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটককেই শীর্ষে পাওয়া যাচ্ছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলছেন, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দু’টো বড় অভিযানের পর পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ্যণীয় নয়। এখানে অনেকরই গাফিলতি আছে বলে আমরা মনে করি। বিটিআরসির মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল বলছেন, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা দৈনিক মাত্র ১ লাখ সিম ব্যবহার করলে বছরে ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলার ২৬টি স্থাপনায় অভিযান চালিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও র্যাব। অবৈধ ভিওআইপি অভিযানে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ৪২ হাজার ১৫০টি সিম ও প্রায় ১ কোটি ২৩ লক্ষাধিক টাকা ম‚ল্যমানের অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে অবৈধ ভিওআইপির অভিযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত¡ মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের ৭৭ হাজার ৫৯০টি সিম বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি। অবৈধ ভিওআইপি অভিযানের অংশ হিসেবে সিডিআর এনালাইজার এবং জিও-লোকেশন ডিটেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপিতে ব্যবহারের অপরাধে টেলিটকের ৭৭ হাজার ৫৯০টি শনাক্ত হয় এবং বন্ধ করে দেয়া হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অবৈধ ভিওআইপি কল টার্মিনেশন প্রতিরোধে চলমান অভিযানের অংশ হিসাবে সিডিআর এনালাইজের মাধ্যমে গত ১৮ নভেম্বর টেলিটকের ৩৩ হাজার ৫৩৪টি সিম অবৈধ ভিওআইপি কল টার্মিনেশনে ব্যবহৃত হওয়ায় সনাক্ত করা হয় এবং গত ১১ অক্টোবর একই কারনে টেলিটকের ৪৪ হাজার ৫৬টি সিম বন্ধ করা হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিস্তৃত হয়েছে অবৈধ ভিওআইপির ব্যবসা। বিটিআরসি ও আইন শৃক্সক্ষলা রাক্ষাকারী বাহিনী পরিচালিত কয়েকটি অভিযানে এর প্রমাণ মিলেছে। এসব অভিযানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে উদ্ধার হয়েছে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সরঞ্জাম। গত কয়েক বছর বিটিআরসি থ্রিজি বা ফোরজি ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়ার সময় এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। বিটিআরসির কমিশনার রেজাউল কাদের বলছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ থেকে পরবর্তী তিন দিন হাইস্পিড মোবাইল ব্রডব্যান্ডের (থ্রিজি/ফোর জি) গতি কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় দেশে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল গড়ে প্রায় ১০০ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
এ বৃদ্ধির কিছু অংশ গ্রাহকরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কল করতে না পারায় হয়েছে; তবে সিংহভাগই বেড়েছে অবৈধ ভিওআইপি না হওয়ায়। অর্থাৎ, থ্রিজি বা ফোরজি মোবাইল ব্রডব্যান্ডের ওপর নির্ভর করে দেশে অবৈধ ভিওআইপি আরো প্রকট হচ্ছে। এভাবে বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
বিটিআরসির মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল বলেন, জঙ্গিরা তাদের অর্থ সংস্থানের জন্য অবৈধ ভিওআইপি’র সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে এ ব্যাপারে প্রথাগত মামলার পাশাপাশি মানি লন্ডালিংসহ অন্য সব অপরাধ কর্মের মামলা নেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে কমিশন।
২০১৮ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে পরিচালিত দুটি অভিযানে দেখা গেছে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় দেশের মোবাইল অপারেটরদের সিম ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। অভিযানে পাওয়া প্রায় ৫৩ হাজার সিমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে টেলিটক ও রবি’র সিম। এই দুটি অপারেটরের যথাক্রমে ২১ হাজার ১৮টি এবং ২০ হাজার ৭০৯টি সিম পাওয়া গেছে। বাংলালিংক ও গ্রামীণ ফোনের পাওয়া গেছে যথাক্রমে ৬ হাজার ৬০২টি এবং ৪ হাজার ৬৪৭টি সিম।
অভিযান দুটি’র পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, সিম বিক্রির পর কোথায় তা ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি লক্ষ্য রাখার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের। এজন্য তাদের বিটিআরসি’র কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এ সকল ব্যর্থতার জন্য অপারেটরদের টেলিযোগাযোগ আইন ও অর্থপাচার আইনের সম্মুখীন হতে হবে বলে উল্লেখ করেন বিটিআরসির মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল।
এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষোভের সাথে জানান, প্রকৃতপক্ষে অপরাধীদের বিরূদ্ধে তেমন কোন কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয় না। সম্প্রতি সরকার-ঘোষিত অভ্যন্তরীণ মোবাইল কল রেট সর্বনিম্ন প্রতি মিনিট ৪৫ পয়সা করা হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আন্তঃগামী কল রেটের যে হিস্যা মোবাইল অপারেটররা পায় তার মূল্য প্রতি মিনিট প্রায় ৩৩ পয়সা। এতে আন্তর্জাতিক আন্তঃগামী কলের চেয়ে অভ্যন্তরীণ কলের আড়ালে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে দেশের অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা আরো বেগবান হচ্ছে।
অবৈধ এসব ভিওআইপি ব্যবসায় তথ্য প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সকল সরঞ্জাম বিক্রির সময় বিক্রিত সরঞ্জামটি কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিতে হবে। এই বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছেন তারা। কঠোর হাতে এই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা দমনের জন্য সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে সম্প্রতি প্রণীত ডিজিটাল আইন ও অন্যান্য নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে মত দিয়েছে তারা।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।