Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংকিং খাত সংস্কারে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতির কারণে ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকছে। বড় বড় দুর্নীতি এবং খেলাপি ঋণ এ খাতটিকে ভঙ্গুর ও দুর্বল করে ফেলেছে। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও খাতটিতে সুশাসন এবং সুশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার তেমন কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে এ খাতটিতে সংস্কার এবং অনিয়ম দূর করার জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়েই সোচ্চার হয়েছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, খেলাপী ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। খেলাপী ঋণ নিয়ে তিনি বলেছেন, এটি একটি ক্রাইম। আমাদের এই ক্রাইম বন্ধ করতে হবে। এই ঋণ বাড়ার প্রবণতা আমাদের থামাতে হবে। জাতিকে খেলাপি ঋণ থেকে মুক্ত করতে হবে। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আরো বলেছেন, ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, কৃষকের টাকা, এই টাকাকে খেলাপিতে পরিণত করা যাবে না। খেলাপি ঋণ বন্ধে আমরা অর্থমন্ত্রীর দৃঢ় এ বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। উল্লেখ করা প্রয়োজন, খেলাপি ঋণ এবং ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা রোধে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাংকগুলোতে বিশেষ অডিটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ সম্পর্কিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনটি অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাংকিং খাতকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে খেলাপি ঋণের নীতিমালায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন, অর্থঋণ আদালত আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন সংস্কারসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে খেলাপি ঋণ কমাতে প্রথমবারের মতো অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়টি সবচেয়ে ইতিবাচক উদ্যোগ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এটি যথাযথভাবে করতে পারলে খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা যাবে।
আমরা দেখেছি, বিগত বছরগুলোতে ঋণ দেয়ার নামে ব্যাংকিং খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। ব্যাংকের একশ্রেণীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে এবং বিদেশেও পাচার করেছে। এর প্রভাবে পুরো ব্যাংকিং খাতে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং খাতটি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যাক্তির বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বরং এক ধরনের দায়মুক্তির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তো বটেই এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনকেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা, সেখানে ব্যাংকটি সে দায়িত্ব পালন করেনি। বলা অসঙ্গত হবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের গোচরেই এসব দুর্নীতি হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থার জন্ম হয়েছে। এ খাতটির অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং হাজার হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের প্রবণতা কোনোভাবেই বন্ধ করা যায়নি। বরং দিন দিন বেড়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংকের এক হিসেবেই দেখা গেছে, ২০১৭ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এবং দুর্নীতি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি ঋণের বোঝা বাড়িয়েছেন, তারা প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তারা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে যেমন ঋণ নিয়েছেন, তেমনি ঋণ পরিশোধ না করে ক্ষমতার জোরেই ঋণ খেলাপি হয়েছেন। জনগণের অর্থ ঋণ নিয়ে তা না দেয়া এসব ঋণ খেলাফিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বা নিতে পারছে না। সঙ্গতকারণেই ঋণখেলাপিদের নিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, তারা কারা? তার এ প্রশ্ন তোলা থেকে এটাই প্রতীয়মাণ হয়, খেলাপি ঋণ যারাই নিয়ে থাকুক না কেন, তাদেরকে আর ছাড় দেয়া হবে না। তিনি এ কথাও বলেছেন, তারা যে ঋণপত্র খুলে মূলধনী যন্ত্রপাতি এনেছে, তা কোথায় বসিয়েছে তা আমরা দেখব। ব্যাংকিং খাতকে এমন একটা অবস্থানে নিয়ে আসতে চাই, যেখানে শুধু সততার বিজয় হবে, সবাই সত্য জানবে। অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট, তিনি যে কোনো মূল্যে ব্যাংকিং খাতকে স্বচ্ছ ও সৎ একটি খাতে পরিণত করতে চান। আমরা মনে করি, অর্থমন্ত্রীর এ দৃঢ়তা এ খাতটির উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে তার সততা ও দক্ষতার বিষয়টিও আমরা দেখেছি। অর্থমন্ত্রী হয়ে ব্যাংকিং খাত সংস্কার করে তা জনমুখী করতে যে উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাতেও তিনি সফল হবেন বলে বিশ্বাস করি।
দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে মূল নিয়ামক শক্তি হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি, কর্মসংস্থান ইত্যাদি সৃষ্টির প্রধানতম ক্ষেত্র এটি। এ খাত যদি দুর্বল ও দুর্নীতিতে জর্জরিত থাকে, এর অর্থ নিয়ে ছিনিমিনি ও নয়-ছয় হয়, তবে সামগ্রিক অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। বিগত বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে অরাজকতা, খেলাপি ঋণ ও লুটপাটের অপসংস্কৃতি চলছে, তাতে এ খাতটি অনেকটা ধ্বংসের দিকে ধাবিত। এমন এক পরিস্থিতিতে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আ হ ম মুস্তফা কামাল শক্ত হাতে হাল ধরেছেন এবং খাতটিকে দুর্নীতিমুক্ত নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। তার পরিকল্পনা এবং নির্দেশ মতো কাজ হলে আশা করা যায়, অচিরেই এ খাতটি চাঙ্গা ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং লুটেরা শ্রেণীর দৌরাত্মার অবসান ঘটবে। তার এ পরিকল্পনা ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে। আমরা অর্থমন্ত্রীর এই মহা ও সময়োচিত উদ্যোগ ও পরিকল্পনার সাফল্য কামনা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন