Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কর্ণফুলীর উচ্ছেদ আপাতত বন্ধ

বাজেট ও মাস্টারপ্ল্যানের অপেক্ষায় জেলা প্রশাসন

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদী রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযান কবে শুরু হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। প্রথম পর্যায়ে প্রায় পৌনে চার শতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে ১০ একর মূল্যবান ভ‚মি উম্মুক্ত করা হয়। উচ্ছেদ বন্ধ থাকায় ওই জমিতে ফের অবৈধ স্থাপনা তৈরী হচ্ছে। অর্থের অভাবে ওই জমি রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছে না জেলা প্রশাসন।
পতেঙ্গায় কর্ণফুলীর মোহনা থেকে শুরু করে কালুঘাট পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়। আদালতের নির্দেশে তিন পর্বে এসব স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ৫দিন প্রথম পর্যায়ের অভিযান চলে। কথা ছিল এর পর বারিকবিল্ডিং থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলাকায় উচ্ছেদ শুরু হবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নদীর তীর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় উচ্ছেদ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে জানা গেছে বেশ কয়েকটি কারণে উচ্ছেদ অভিযান থেমে আছে। উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। পতেঙ্গা এলাকায় উচ্ছেদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা মাঠে নেমেছে। তাদের সাথে সরকারি দলের অনেকে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। এছাড়া উচ্ছেদের আওতায় থাকা নদীর তীরের অধিকাংশ জমির মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের জায়গা বন্দর উদ্ধার করবে-এমন চিন্তাভাবনা থেকে জেলা প্রশাসন পিছিয়ে গেছে। সম্প্রতি নদীর তীরবর্তী একটি বস্তিতে অগ্নিকান্ডে ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর জনবসতি উচ্ছেদে সময় নেওয়ার কৌশল নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আবার উচ্ছেদ অভিযানের জন্য এক কোটি ২০ টাকা চাওয়া হলেও তা পাওয়া যায়নি। এসব কারণে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেছেন উচ্ছেদকৃত জমির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। আর এই কারণে আপাতত উচ্ছেদ বন্ধ আছে। তিনি বলেন, শুধু উচ্ছেদ করলেই তো হবে না, উদ্ধার করা জমি তো রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে। না হলে সেই জমি আবারও দখল হয়ে যাবে। সেজন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে চট্টগ্রাম বন্দর, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে উচ্ছেদ ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আমরা উচ্ছেদ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত দখলমুক্ত করা ভূমির প্রায় অংশ চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন। বারিক বিল্ডিং থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলাকার প্রায় পুরো অংশ বন্দরের মালিকানাধীন। শুধুমাত্র আরএস জরিপ অনুযায়ী লালদিয়ার চর এলাকায় নদীর তীরবর্তী কিছু ভূমি খাস হিসেবে জেলা প্রশাসনের আওতাভুক্ত। বন্দরের জমি হওয়ায় জেলা প্রশাসন তা উদ্ধারে মাঠে নামতে আগ্রহী নয়। ওই এলাকায় উচ্ছেদে গেলে সংঘাতেরও আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায় নগরীর পতেঙ্গায় লালদিয়ার চরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের যে সীমানা চিহ্নিত করা আছে তাতে প্রায় ১৭০০ পরিবারের বসবাস। উচ্ছেদ ঠেকাতে সেখানকার বাসিন্দারা নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি লালদিয়ার চর এলাকায় স্থানীয়দের একটি সমাবেশে যোগ দিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পুনর্বাসনের আগে উচ্ছেদের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন। এই অবস্থায় লালদিয়ার চরে আর কোনো অভিযান চালাতে আগ্রহী নয় জেলা প্রশাসন।
লালদিয়ার চরের মতো একাধিক জনবসতি আছে নগরীর সদরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত এলাকায়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী চাক্তাই বেড়া মার্কেট এলাকায় একটি বস্তিতে আগুনে ৮ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর বক্তব্য আসে- উচ্ছেদের জন্য মৌখিকভাবে এলাকা ছাড়তে বলার পর অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে এলাকার সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এই ঘটনার নেপথ্যে নাশকতা আছে কি-না সেটা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। তিনি নদী তীরের দরিদ্র লোকজনকে উচ্ছেদের ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনারও কথা বলেন।
এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের জন্য জেলা প্রশাসন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বাজেট চেয়েছিল ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের কাছে। তবে প্রথম পর্যায়ের উচ্ছেদ শুরুর পরও টাকা দেওয়া হয়নি। উচ্ছেদ শেষের আরও অন্তত ১৫ দিন পর এসেছে মাত্র ২০ লাখ টাকা। উচ্ছেদ এবং রক্ষণাবেক্ষণ একসঙ্গে করতে হলে টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বাজেটের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্ত পাচ্ছে না জেলা প্রশাসন।
২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশে ২০১৫ সালে আর এস অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছিল জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। তবে উচ্ছেদ শুরু হয় আড়াই বছর পর, যা আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উচ্ছেদ

১৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ