পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চুড়িহাট্টার চৌরাস্তায় গিয়ে বোঝার উপায় নেই একদিন আগেও এখানে মানুষ ব্যস্ত সময় কাটাতো। রাস্তায় প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, রিকশা ও ভ্যানের অঙ্গার। পোড়া বাড়িগুলো মানুষহীন নীরব নিস্তব্ধ। এসব বাড়ির নিচে ছিল বিভিন্ন ধরনের মার্কেট ও দোকান। রাস্তার ওপর বিল্ডিংয়ের অংশবিশেষ ভেঙে পড়ে রয়েছে। সবই এখন ধ্বংসস্ত‚প। মৃত্যু, কান্না, আহাজারি, পোড়া গন্ধ, ধোঁয়া, আর্তনাদ, আকুতি আর চিৎকার সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডের পর ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে নন্দকুমার দত্ত রোডের চুড়িহাট্টা এলাকার পুরো চৌরাস্তা এলাকা। এদিকে, অগ্নিকান্ডে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিক্যাল সূত্র নিহতের সংখ্যা ৮১ জন বলে জানায়। তবে এ সংখ্যা ফায়ার সার্ভিসের মতে ৬৭ জন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ৭৮, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ৭৬ জন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মতে ৮১ এবং পুলিশের আইজিপি ৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া আরো দু’শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৪১ জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। তাদের সবার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানসহ বিভিন্ন দলের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অগ্নিকান্ডের পর ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে ছুটে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী, ঢাকা সিটি দক্ষিণের মেয়র ও আইজিপিসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানতে চাইলে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কেউ বলছেন, ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলার কারখানা থেকে এর সূত্রপাত, কেউ বলছেন, আগুন লেগেছে ভবনটির পাশের হোটেল থেকে। কেউবা বলছেন, ভবনের উত্তর দিকের রাস্তার গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। যেখানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে সেই চুড়িহাট্টা কয়েকটি সরু রাস্তার মিলনস্থল। আসগর লেন, নন্দকুমার দত্ত রোড ও হায়দার বক্স লেন। সবগুলোই গলিপথ। এক পাশে ওয়াহেদ ম্যানশন। অন্য পাশে বাচ্চু মিয়ার বাড়ি। বিপরীত পাশে চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদ। ওয়াহেদ ম্যানশন, বাচ্চু মিয়ার বাড়ি ও চার পাশের বাড়িগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুরো এলাকায় আতঙ্কিত মানুষের ভিড়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের নিরাপত্তা কর্মীরা চার পাশের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন। ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীরা ভেতরে এখনো খুঁজে দেখছে কোনো লাশ পড়ে রয়েছে কি না।
ঘটনাস্থল গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের লক্ষ্য যারা আহত হয়েছেন তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেয়া। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমরা ঘটনার তদন্ত করব। তদন্তের পর কেন, কিভাবে আগুন লেগেছে সে সম্পর্কে জানাতে পারব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এর পরই পাশের খুঁটির আরো দু’টি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছেন। তারা বলেন, মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে, সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুই তলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেও ঘটে বিস্ফোরণ। পুড়ে যায় সড়কে থাকা প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলে, অটোরিকশা, রিকশাসহ শতাধিক যানবাহন। প্রায় ১৪ ঘণ্টা চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট নিয়ে ২০০ জন কর্মী আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এ সময় দু’টি হেলিকপ্টার দিয়ে আকাশ থেকে পানি দিতে দেখা গেছে। তবে খুবই ঘনবসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
গতকাল সরেজমিন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুড়িহাট্টা এলাকাটি একটি সরু গলি, যেখানে দুইটি রিকশা কোনোমতে যাতায়াত করতে পারে। আগুনের ঘটনার সময়ে সরু এই গলির হাজী ওয়াহেদ ম্যানসন থেকে শুরু করে পাশের ওয়াটার ওয়ার্কস রোড, জেলখানা মোড়সহ আশপাশের সবখানেই ছিল যানজট।
প্রত্যক্ষদর্শী কাওসার আমিন ও মোতাহার হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আগুন এমন দানবের মতো হানা দেয় যে, হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনের উত্তরের রাস্তায় দাঁড়ানো পিকআপ ভ্যান, রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেলসহ শতাধিক যানবাহন সব নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যেগুলো এখনও বিবর্ণ হয়ে চুড়িহাট্টার ওই রাস্তায় পড়ে রয়েছে। আগুনে ভবনগুলোর দেয়াল, গাড়ি, দোকানপাটের অংশ হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনের উত্তর ও পশ্চিম পাশের রাস্তায় লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকা বা ধ্বংসস্ত‚প এটি। আগুনে আশপাশের আরো কমপক্ষে পাঁচটি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনের তাপে খসে পড়েছে ভবনটির পাশের শাহী মসজিদের বাইরের দেয়ালের টাইলসও।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, হাজী ওয়াহেদ ম্যানসন ভবনটি চার তলা। এর আন্ডারগ্রাউন্ডে আরো একতলা রয়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ডের পুরোটাই গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি কেমিক্যাল বোঝাই, কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আন্ডারগ্রাউন্ডের ভেতরে প্রবেশ করেনি। চারতলা ভবনটির মূল মালিক হাজী ওয়াহেদ মারা গেছেন। শীর্ষ তলায় থাকেন তার দুই ছেলে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার পুরোটাই কারখানা ও গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব কারখানা ও গুদামে সুগন্ধি, পাউডার (কসমেটিকসসহ কলকারখানার পণ্য), খেলনা, বাতি (ড্রিমলাইট), ফ্রিজ মেরামত, গ্রিজ-মবিলসহ দাহ্য পদার্থের কারবার। আর নিচতলাতে বিভিন্ন দোকানপাট ভাড়া দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত। ওই তলায় অনেক রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থ থাকায় মুহূর্তেই বিস্ফোরণ ঘটে। আগুনের বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গেই হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশের দেয়ালটি যানজটপূর্ণ ব্যস্ত রাস্তার ওপর আছড়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ভবনটির পশ্চিম-উত্তর কোণে থাকা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারটিতেও বিস্ফোরণ ঘটে। সে ভয়াবহ দৃশ্য চোখে না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ৭০টি লাশ পেয়েছি। লাশের মধ্যে কিছু কিছু লাশ আছে তাদের চেহারা দেখে শনাক্ত করা যাবে। কিছু কিছু লাশ আছে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট লাগবে, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা যাবে। কিছু কিছু লাশ আছে চেহারা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা যাবে না, তাদের আমরা ডিএনএ প্রফাইলিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করব।
শাহী মসজিদের ইমাম আবদুল হক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ব ঠিক এমন সময় বিকট শব্দ পাই। মসজিদ থেকে বের হতেই আগুনের লেলিহান শিখা দেখি। আগুনের ধোঁয়ায় মুহূর্তেই চার পাশ অন্ধকার হয়ে যায়। এরপর মসজিদে যারা ছিলাম দ্রæত বের হই। রাস্তা সরু হওয়ায় এখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতেও বেগ পায়। ফজরের পরও আমরা আগুন জ্বলতে দেখি।
তিনি আরো বলেন, নিহত বা নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরাই নন, পাড়া- প্রতিবেশীদের কারো মুখেই তেমন কথা নেই। শোকের ছায়া নেমেছে চকবাজার এলাকাজুড়ে। ফজরের নামাজ শেষে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদে বিশেষ দোয়ায় অংশ নেন মুসল্লিসহ এলাকাবাসী। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয় সেখানে। এ সময় শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। গতকাল পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে একই দৃশ্য দেখা গেছে।
বাচ্চু মিয়ার বাড়ির পাশের বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, বাচ্চুর বাড়ির নিচের দোকানটি ছিল দাহ্য পদার্থের। রাস্তায় যে পোড়া পিকআপ ভ্যানটি পড়ে আছে ওটা বিস্ফোরণ ঘটে প্রথম। এখান থেকে আগুন এসে বাচ্চুর বাড়িতে লাগে। দাহ্য পদার্থ থাকায় মুহূর্তেই পাশের বাড়িগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ সার্জেন্ট তৈয়েবুর রহমান জানান, ভয়াবহ এই অগ্নিকাÐের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। আজরাইলকে দেখলাম। তবে তিনি আমাকে নেননি। ভাগ্যগুণে আমি বেঁচে গেছি। ওদের মতো আমিও পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারতাম। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, গত বুধবার রাতে সোয়ারীঘাটে দায়িত্ব পালন শেষে মোটরসাইকেলযোগে চকবাজারের চুড়িহাট্টার গলি হয়ে বাসায় ফিরছিলাম। এখানে এসেই যানজটে পড়ি। মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেট কার ও ঠেলাগাড়িতে আটকে ছিল চুড়িহাট্টা মসজিদের গলিটি। রাত সাড়ে ১০টার পর হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। একটু দম নিয়ে তিনি বলেন, ওই বিকট শব্দের পর ভয়ে আমি মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যাই। তখন দেখতে পাই মাত্র ২০-২২ ফুট দূরে চোখের সামনেই রাজ্জাক ভবনে হু হু করে আগুন ধরছে। আমি এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি যে, মসজিদের বাঁ পাশের সরু গলি দিয়ে দৌড় দিই। কিছুদূূর যাওয়ার পর পেছনে ফিরে দেখি, গলির রাস্তার সব গাড়ি আর ভবন পুড়ছে। ১২ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে চুড়িহাট্টার গলিতে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহাম্মেদ খান বলেন, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্ত না করে এ বিষয়ে সঠিক করে বলা সম্ভব হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বার্ন ইউনিটে ভর্তি ৯:
অগ্নিকাÐের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ১৮ জন। তাদের মধ্যে ৯ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। বাকি ৯ জন বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীনরা হলেনÑ আনোয়ার (৫৫), মাহমুদুল (৫২), সেলিম (৪৪), হেলাল (১৮), রেজাউল (২১), জাকির (৩৫), মোজাফ্ফর (৩২), সোহাগ (২৫) ও সালাউদ্দিন (৪৫)। সোহাগের শরীরের ৬০ শতাংশ ও রেজাউলের শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ৯ জনের মধ্যে আনোয়ার, রেজাউল, জাকির ও সোহাগের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এর বাইরে ঢামেকের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও অনেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালসহ আরও বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের অনেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ও অনেকে ভর্তি রয়েছেন বলে স্থানীয় ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে।
বার্ন অ্যান্ড প্লস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক সামন্তলাল সেন বলেন, চিকিৎসাধীন নয়জনের কেউই ঝুকিমুক্ত নন। তাদের মধ্যে চারজন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। একজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন। খুব দ্রæত আরও দুজনকে আইসিইউতে নেওয়া হবে।
পরিচয় শনাক্ত
ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে ৪১ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল রাত পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া সবার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া লাশের মধ্যেÑ রাজু (৩০), তার ভাই মাসুদ রানা (৩৫), সিদ্দিকুল্লাহ (৪৫), আবু বকর সিদ্দিক (২৭), আলী মিয়া (৭৫), মোশাররফ হোসেন (৩৮), কামাল হোসেন (৫২), ইয়াসিন খান রনি (৩২), জুম্মন (৬৫), এনামুল হক (২৮), মজিবর হাওলাদার (৪৫), মুফতি ওমর ফারুক (৩৫), মোহাম্মদ আলী (৩২) ও তার ভাই আবু রায়হান (৩১), তার ছেলে আরাফাত (৩), ইমতিয়াজ ইমরোজ (২৪), হেলাল (৩০), ওয়াফিউল্লাহ (২৫), সোনিয়া (২৮), স্বামী মিঠু (৩৫), তাদের ছেলে শাহিদ (৩), রহিম দুলাল (৪৫), হিরা, নাসির, মঞ্জু, আনোয়ার, কাওছার, শায়লা খাতুন, আরমান হোসেন রিমন, মামুনুর রশীদ, আবু তাহের, রুবেল হোসেন, সৈয়দ সালাউদ্দিন, মুসা, ইলিয়াস মিয়া, মিজানুর, আসিফ, মো. হোসেন বাবু, খলিলুর রহমান সিরাজ, নূর ইসলাম হানিফ, নবীউল্লাহ খাঁনসহ আরও কয়েকজনের লাশের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে
হস্তান্তর প্রক্রিয়া:
দুপুর ৩টা থেকে লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে লাস হস্তান্তরে দীর্ঘ সময় লাগে। কামাল হোসেন নামে একজনের লাশ হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে প্রথম লাশ হস্তান্তর শুরু হয়।
নিহত কামালের শ্যালক মো. বাবুল বলেন, তার ভগ্নিপতি কামাল হোসেনের হসান্তরের সময় দীর্ঘ সময় লাগে। স্বাক্ষর করা নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। কোন কোন স্বজন বলেন, লাশ সনাক্তের সময় যে স্বাক্ষর করেলে বুঝে নেওয়ার সময়েও তাকে স্বাক্ষর করতে হয়। যার কারণে নিহতদের স্বজনদের অনেকে শোকে অজ্ঞান ও মূর্ছা যাওয়ায় স্বাক্ষর করতে পারছে না। এতে লাশ বুঝে পেতে বেগ পেতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।