পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের কর্মসংস্থান, শিক্ষাব্যবস্থা ও পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে নানা রকম অভিযোগ দীর্ঘদিনের। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে দেশের যুব সমাজ ব্যাপক হারে বিদেশমুখী হয়ে পড়েছে। একইভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ও অনাস্থার কারণে দেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও রোগী বিদেশে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবেও দেশ থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সর্বোচ্চ হারে বাড়লেও লাখ লাখ ভারতীয় বৈধ-অবৈধভাবে চাকরী নিয়ে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রায় এককোটি প্রবাসি শ্রমিক বছরে যে পরিমানে রেমিটেন্স পাঠায় তার একটা বড় অংশই ভারতীয়রা নিয়ে যায়। এহেন বাস্তবতা সামনে রেখে দেশের সরকারী মেডিকেল শিক্ষায় ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য জানা যায়। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সার্ক কোটা ও ননসার্ক কোটায় দেশের সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া বিদেশীদের মধ্যে অন্তত ১৫জন ভারতীয় জাল নম্বরপত্র ও ভ’য়া সনদে ভর্তি হয়েছে। এ বছর বিষয়টি ধরা পড়লেও এ ধরনের জাল-জালিয়াতির ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিশেষত: প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অযোগ্যদের মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানোর ব্যাপারটি নানা কারণে উদ্বেগজনক ও ভয়ঙ্কর ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দেশের সরকারী মেডিকেল কলেজগুলোতে জনগনের রাজস্বের টাকায় বছরে শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। এ কারণে এসব মেডিকেল কলেজে নামমাত্র খরচে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ সুযোগ এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য অধিকার। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আদান-প্রদানে সার্ক কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ ও আদান-প্রদান আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানবৃদ্ধিতে ভ’মিকা রাখতে পারে। সেখানে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে হিতে বিপরীত ফল দিতে পারে। অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভর্তি হওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস সার্টিফিকেট নিয়ে ডাক্তার হিসেবে কেমন হবেন তা সহজেই অনুমেয়। তারা শুধু আমাদের জনগনের রাজস্বের ভর্তুকিতে বিনা খরচে ডাক্তারি পড়ছে না, উচ্চ মাধ্যমিকের জালিয়াতি নম্বরপত্র জমা দিয়ে স্কলারশিপও বাগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সার্ককোটার অপচয় এবং অবমূল্যায়ণ ঘটছে এবং একই সাথে এই কোটায় দাবীদার প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এই জাল জালিয়াতির সাথে ভারত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একশ্রেনীর কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ডাক্তারি পেশার সাথে মানুষের জীবন-মরণের সম্পর্ক বিদ্যমান। অযোগ্য, মেধাহীন ও অসৎ ব্যক্তিরা এই পেশাকে কলুসিত করলে তা সমাজের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে।
অনেক দেরিতে হলেও সার্ক কোটার নামে মেডিকেল কলেজে ভারতীয়দের জাল জালিয়াতির তথ্য ধরা পড়েছে। এমন একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ও শিক্ষা মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের টনক নড়বে বলে আশা করা যায়। এ ধরনের জাল জালিয়াতির সাথে স্বাস্থ্য অধি দফতের একশ্রেনীর কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। এর পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কোটি কোটি টাকা লেনদেনের যোগসুত্র থাকতে পারে। সম্প্রতি ভারতের মাদরাজ হাইকোর্টের এক রুলিংয়ে মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে নম্বরের অসঙ্গতি দূর করতে মেডিকেল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এম সি আই) কে নির্দেশ দিয়েছেন। নেপথ্য ঘটনা যাই হোক, এই জালিয়াত-দুর্নীতিবাজ চক্রের হোঁতাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সার্ক কোটায় সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী বাংলাদেশের সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সৃুযোগ পেলেও জালজালিয়াতির দায়ে অভিযুক্তদের সকলেই ভারতীয় নাগরিক। এ ঘটনার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তে এ ধরনের জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আরো কত সংখ্যক শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হয়েছে তা উদঘাটন করতে হবে। দেশীয় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও এমন কোনো দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে কিনা তা’ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রকৃত মেধাবী ও যোগ্য দাবীদারদের বাদ দিয়ে মেডিকেল কলেজে দুর্নীতিমূলকভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রভাব পুরো স্বাস্থ্য খাতকেই ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রশাসন যে সব প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন তা যেন কথার কথা না হয়। এর সাথে জড়িতদের অবশ্যই চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। সরকারী-বেসরকারী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার মান এবং ব্যয়বৈষম্য কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।