Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোগী বিড়ম্বনার আরেক নাম খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

ডি এম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

৮ বছরেও বাড়েনি শয্যা সংখ্যা : প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী থাকছেন বারান্দা ও সিঁড়ির পাশে : শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা হাসপাতালজুড়ে

খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ, পিরোজপুরসহ আশেপাশের জেলা এবং উপজেলার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ২০১৪ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যা থেকে ১০০০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঘোষণার দীর্ঘ আট বছরেও বাড়েনি এর শয্যা সংখ্যা ও জনবল। প্রতিদিন ৫০০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি হচ্ছেন ১৫০০-এর ও বেশি। শয্যা না পেয়ে রোগীদের চরম দূরবস্থার মধ্যে থাকতে হচ্ছে বারান্দায়। অন্যদিকে, ভর্তি হতে না পারা রোগীদের দালালেরা নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মানহীন ক্লিনিকে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় এ ধরণের প্রায় ২০ ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্লিনিকে রোগী ভর্তি করার পেছনে খোদ মেডিক্যাল কলেজ হাপসাতালের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত এবং সিন্ডিকেটটি নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ সবখানে রোগীর প্রচÐ চাপ। মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক, গাইনিসহ সব বিভাগে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী। শয্যা সঙ্কুলান না হওয়ায় ঠাঁই নিতে হচ্ছে মেঝেতে। রোগীর চাপ সামলে অস্ত্রোপচার জটও কমাতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ভর্তি থাকা রোগীদের দিনের পর দিন অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
কথা হয় বটিয়াঘাটা উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন হেমায়েত উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, তার ছোটভাইকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। শয্যা না পেয়ে সার্জারি ওয়ার্ডের বারান্দায় রেখেছেন। তিনি আরো জানান, কয়েকজন দালাল পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, এই হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই সেখানে চিকিৎসা দেন।
চিকিৎসা নিতে আসা তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের রোগি আসমা বেগম জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যন্ত্রপাতি সবই আছে। কিন্তু তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই এখানে পাঠানো হয়েছে।
কিডনিতে সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া খুলনার ফুলতলা উপজেলার আজিজুল হক বলেন, হাসপাতালে বেড নেই। তাই বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে রয়েছি। আমার মত অনেকেই এভাবে বারান্দায় রয়েছেন। সরকার এতো উন্নয়ন করছে, অথচ হাসপাতালে বেড বাড়াচ্ছে না।
হাসপাতাল থেকে একটি ক্লিনিক অভিমুখে যাওয়ার সময় কথা হয় বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থেকে আসা রোগি হিমাংশু বিশ্বাসের সাথে। তিনি জানান, যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হতে যাচ্ছেন।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২৮৫টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ১৩৪টি শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিনেও হাসপাতালটিতে পরিসংখ্যানবিদ, রেকর্ড কিপার ও অফিস সহকারী পদ নেই। তৃতীয় শ্রেণির ৪৮টি পদের ১৩টি, চতুর্থ শ্রেণির ১০৯টি পদের বিপরীতে ২৯টি শূন্য রয়েছে। প্রশাসনিক দফতরের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে তিনটি অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি)। এর মধ্যে একটি জরুরি সেবা। বাকি দুটির একটি সিজারিয়ান এবং অন্যটি সাধারণ অস্ত্রোপচারের জন্য। ওটির এনেস্থিশিয়া চিকিৎসকের ১০টি পদের সাতটিই শূন্য। প্রতি সপ্তাহে একদিন একেক বিভাগের অস্ত্রোপচার করা হয়। কোন বিভাগের নির্ধারিত দিনে সরকারি ছুটি থাকলে সে সপ্তাহে আর অস্ত্রোপচার সম্ভব হয় না।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, হাসপাতালের শয্যা ৫০০টি। প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে ১১০০-১২০০। ৫৩ শতাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য। অন্য স্টাফের পদ শূন্য রয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি। এত কম জনবল নিয়ে শয্যার আড়াইগুণ বেশি রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছি। চিকিৎসক পদায়নের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠাই। এভাবেই চলছে হাসপাতাল।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতাল কেন্দ্রীক শক্তিশালী একটি দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। সিন্ডিকেটের কাজ হচ্ছে, হাসপাতালে রোগী এলে যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা বাইরের ক্লিনিকগুলো থেকে করানো। এছাড়া ভর্তির একদিন দু’দিন পর রোগীদের উন্নত চিকিৎসার কথা বলে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া। এসব কিছুর কমিশন হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা পেয়ে থাকেন। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশেপাশে বেশ কিছু ক্লিনিক গড়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিভাগ খুলনার উপ-পরিচালক ডা. ফেরদৌসী আক্তার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, খুলনা জেলাসহ সমগ্র বিভাগে অবৈধ ক্লিনিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। গত ২৯ মে খুলনার ৮টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হপাসাতাল এলাকায় অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক থাকলে তা বন্ধ করে দেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা মেডিক্যাল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ