Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শিশুদের ডায়রিয়া পরবর্তী রক্তে লবণ তারতম্য

ডাঃ আহাদ আদনান | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

ডায়রিয়া যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য সাধারণ একটি রোগ। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া পরবর্তী কিছু সমস্যা প্রায়ই জটিল আকার ধারণ করতে দেখা যায়। বারবার পাতলা পায়খানার সাথে শরীর থেকে প্রচুর পানি, লবণ (এবং অন্যান্য পুষ্টিকণিকা) বের হয়ে যায়। একজন বয়স্ক ব্যাক্তির তুলনায় শিশুদের শরীরে জলীয় অংশের আপেক্ষিক মাত্রা অনেক বেশি। তাই এই পানি ও লবণ ঘাটতি খুব প্রকট হতে পারে। এই লেখায় আমি প্রধান কয়েকটি লবণের তারতম্য আলোচনা করব।
১। পটাশিয়াম ঘাটতিঃ আমাদের অন্ত্রের তরলে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। পাতলা পায়খানার ফলে এই লবণ খুব বেশি বের হয়ে যায়। এর অভাবে পেট ফেঁপে ফুলে যাওয়া, মাংসপেশির শিথিলতা, অন্ত্রের স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ ব্যাহত হওয়া, হৃৎপিন্ডের গতিতে সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। আবার শিশুর যদি আগে থেকে তীব্র মারাত্মক অপুষ্টি রোগ থাকে, তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার নজির আছে। ছয়মাসের অধিক বয়সের সবাইকে আমরা ডায়রিয়া হলে (এবং বৃক্কের অন্য কোন সমস্যা না থাকলে) কলা (কাঁচা, পাকা), ডাবের পানি, ফলের রস খেতে বলি এই পটাশিয়াম ঘাটতি প্রতিরোধের জন্য। মুখে খাওয়ার স্যালাইনেও এই লবণ থাকে। তবে লবণ বেশি কমে গেলে মুখে কিংবা রক্তের শিরায় পটাশিয়াম দেওয়া লাগতে পারে।
২। সোডিয়াম (এবং ক্লোরাইড) ঘাটতিঃ অন্ত্রের তরলে পটাশিয়ামের পাশাপাশি সোডিয়াম এবং ক্লোরাইডও থাকে। এছাড়া সাথে বমি থাকলে আরও বেশি করে সোডিয়াম কমে যায়। খাওয়ার স্যালাইন গ্রহণে এই ঘাটতি পুরন হতে পারে।
৩। সোডিয়াম আধিক্যঃ এই লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সোডিয়াম আধিক্যের সমস্যা। খাওয়ার স্যালাইন যদি পরিমাণের চেয়ে কম পানি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়, যেমন আধা লিটার পানির পরিবর্তে এক গ্লাস পানিতে এক প্যাকেট স্যালাইন, তাহলে এই সমস্যা হয়। এই সমস্যাটিই আমরা ভর্তি হওয়া রুগীদের মধ্যে বেশি পেয়ে থাকি। এই লবণের মাত্রা রক্তে বাড়ার সাথে সাথে শিশুর তৃষ্ণা বাড়তে থাকে। আবার তাকে দেওয়া হয় সেই একই অতিরিক্ত ঘন স্যালাইন। এই ‘দুষ্টচক্রে’ পড়তে পড়তে মস্তিষ্কের কোষ শুকিয়ে আসতে থাকে আর একসময় খিঁচুনি দেখা যায়। শুধুমাত্র সঠিক নিয়মে স্যালাইন প্রস্তুত করে খাওয়ালেই এই সমস্যা এড়ানো যায়।
৪। পটাশিয়াম আধিক্যঃ দুর্লভ কিছুক্ষেত্রে ডায়রিয়ার ফলে পানিশূন্যতা হয়ে বৃক্ক অকার্যকর (একিউট রেনাল ফেইলিউর) হতে পারে। ডায়রিয়া পরবর্তী হিমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোম নামে আরেকটি জটিলতায় রক্তে লোহিত কণিকা এবং অণুচক্রিকা কমার সাথে সাথে বৃক্ক অকার্যকর হতে পারে। তখনও এই পটাশিয়াম লবণ বেড়ে যায়। পটাশিয়াম জাতীয় খাবার তখন বরং আরও ক্ষতি করতে পারে। পানি, লবণের তারতম্য ছাড়াও ডায়রিয়ার পরে রক্তে অম্ল-ক্ষার ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এর সমাধানও খাওয়ার স্যালাইনে দেওয়া থাকে। ডায়রিয়া রোগীর রক্তে লবণ এবং অম্লের মাত্রা পরীক্ষা করার গুরুত্ত অবহেলা করা যায়না। তবে আশা করি এই লেখাটি কিছুটা হলেও এসব সমস্যা প্রতিরোধে আপনাকে সাহায্য করবে।

ডাঃ আহাদ আদনান
রেজিস্ট্রার, আইসিএমএই”, মাতুয়াইল, ঢাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডায়রিয়া

১৯ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন