নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শুরুটা হয়েছিল ধীর। সময়ের সাথে সাথে হয়েছেন পরিণত। ব্যাটেও ফিরেছে ধার। আর সেই ধারেই কচুকাটা ঢাকা ডায়নামাইটস বোলাররা। সাকিব-রুবেল-নারাইনদের তুলোধুনা করে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন তামিম ইকবাল। তার বিদ্ধংসী ব্যাটে চড়ে ৩ উইকেট হারানো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স তোলে ১৯৯। শিরোপা জিততে হলে তিন বারের চ্যাম্পিয়নদের করতে হতো কাঁটায় কাঁটায় ২০০। তবে উড়ন্ত শুরুর পরও বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ৯ উইকেটে ১৮২ রান তুলতে সক্ষম হয় ঢাকা ডায়নামাইটস। ১৭ রানের রোমাঞ্চকর জয় দিয়েই তৃতীয়বারের মত বিপিএলের শিরোপাউল্লাসে মাতে কুমিল্লা।
গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের ফাইনালের আগে আলোচনায় ছিলেন দুই দলের অলরাউন্ডাররা। হবারই কথা। একদিকে ঢাকার ঢাল আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ড, সুনীল নারিন ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিজে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই এ চার জনের কেউ না কেউ জ্বলে উঠছেন। জয়ের মূলনায়কও হয়েছেন। ঠিক তেমনি ভিক্টোরিয়ান্স শিবিরেও আছেন থিসারা পেরেরা, শহীদ আফ্রিদি, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের মতো অলরাউন্ডাররা। দলের জয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন প্রত্যেকে। তবে দিনটি যেদিন নিজের করে নেবেন বলে ব্রত নেন, তামিম সেদিন হোম অব ক্রিকেট ভুলিয়ে তোলেন আপন আলোয়। হয়েছেও তাই। দারুণ এক সেঞ্চুরিতে প্রথমবারের মত ফাইনালে নাম লিখিয়েই চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পেলেন তামিম। ফাইনাল সেরার পুরস্কারও ওঠে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬৭ রান করা এই ওপেনারের হাতেই।
তবে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ইমরুল কায়েসের দলের। দলীয় মাত্র ৯ রানেই বিদ্ধংসী ওপেনার এভিন লুইসকে হারায় কুমিল্লা। রুবেলের এলবির আবেদনে সাড়া দিয়ে কাতে আউট দেন আম্পায়ার। পরে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেন নি এই ক্যারিবিয়। ৭ বল খেলে একটি চারে করেছেন মাত্র ৬ রান। আরেক পাশে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের স্তম্ভ, দেশসেরা ওপেনার তামিমের শুরুটাও কিন্তু হয়েছিল ধীর। দেখে শুনে খেলেছেন প্রথম পাওয়ার প্লে পর্যন্ত। লুইসের দ্রুত বিদায়ে সেই চাপ বাড়ে আরো। এনামুল হক বিজয়ও খেলছিলেন সন্তর্পণে। তবে সাকিবের বলে এলবিতে কাটা পড়ার আগে ৩০ বল খেলে করেছেন ২৪ রান। পরের বলেই ক্রিজে আসা শামসুর রহমান শুভকে দারুণ ক্ষীপ্রতায় রান আউটের ফাঁদে ফেলেন সাকিব।
অপরপ্রান্তে ছটফট করতে থাকা তামিম রান বাড়ানো তাগিদেই কিনা মারতে গিয়ে একটুর জন্য আউট হওয়া থেকে বেঁচেছেন দু’বার।
ফিফটির পথেই একবার রুবেলের বলে ব্যাট ছুঁয়ে বল যায় উইকেটের পেছনে, তবে তা গ্লাভসবন্দী করতে পারেন নি নুরুল হাসান সোহান। একটু পরই ফাইন লেগে উড়িয়ে মারা বল দৌড়ে এসেও একটুর জন্য তালুবন্দী করতে পারেননি আন্দ্রে রাসেল। তবে ধৈর্য্য ধরেছেন, ফলও পেয়েছেন। সময়ের সাথে সাথে হাত খুলেছেন, বাজে বলে মেরেছেন যেদিকে খুশি সেদিকে। ৩১ বলে ফিফটি তুলেছিলেন ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায়। তারপরই যেন ভিন্ন তামিম। খোলশ ছেড়ে বেড়িয়েই ফনা তুলেছেন সাকিব, নারাইন আর রুবেলদের উপর। ছড়ি ঘুড়িয়ে ছক্কার পর ছক্কায় মাতিয়েছেন মিরপুরের কানায় কানায় পূর্ণ গালারি। ৫০ বলে তুলেছেন সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ব্যাট ক্যারি করে অপরাজিত ছিলেন ১৪১ রানে। বিপিএলের ইতিহাসে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। গত আসরের ফাইনালে এই ঢাকার বিপক্ষেই ১৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের ক্রিস গেইল। মাঠ ছাড়ার সময় তামিমেও ৬১ বলের ইনিংসটি জ¦লজ¦লে ১০টি চার ও ১১টি ছক্কায়। ৪র্থ উইকেটে ৪৫ বলে ১০০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ইমরুলের অবদান ২১ বলে ১৭!
প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই রান আউটে সুনীল নারাইনের বিদায়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নামা ঢাকা। সেখান থেকে দুর্দান্ত এক ঝড়ো জুটিতে ম্যাচে ফেরান রনি তালুকদার ও উপুল থারাঙ্গা। ৪৮ রানে থারাঙ্গার বিদায়ে ভাঙে ১০ ওভার দীর্ঘ ১০২ রানের জুটি। ২৭ বলে লঙ্কান এই ওপেনার মারেন ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা। এরপরই লাগে মড়ক।
মাত্র ৫ বল টিকতে পারেন সাকিব। ঢাকা অধিনায়ক ফেরেন মাত্র ৩ রানে। সেই শোকেই কিনা দারুণ খেলতে থাকা রনিও কাটা পড়েন রান আউটে। তবে তার আগে ৩৮ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে দলকে দিয়ে গেছেন পথের দিশা। কিন্তু বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিলে বারবারই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে আসরের সবচেয়ে সফল দলটি। পোলার্ডও ঝড়ের আভাস দিয়ে ফিরে যান একটি বরে চার-ঝক্কায় ১৩ রান যোগ করে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই কিছু না কিছু অবদান রাখা আন্দ্রে রাসেলও (৩) কিছু করতে পারেননি এদিন। শুভাগত হোম এলেন আর গেলেন।
আগের বলেই জীবেন পেয়েছেন, বাউন্ডারিতে তার উড়িয়ে মারা বল হাত ছুঁইয়ে সীমানা পার করেছেন থিসারা। পরের বলেই প্যাভিলিয়নের পথে সোহান। ১৫ বলে ১৮ রানে ফেরেন ঢাকা উইকেটরক্ষক। বিজয়-তামিমদের বিজয়োল্লাসে থামে ঢাকার পথচলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।