পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশে কোনো নীতিমালা নেই। ই-বর্জ্য সংগ্রহেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে এই বর্জ্য যততত্র নিক্ষিপ্ত হচ্ছে এবং এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ ই-বর্জ্য। এ বর্জ্য আরো নানাভাবে পরিবেশের ক্ষতিসাধন করছে। জনস্বাস্থ্যর ওপর এর প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ। ই-বর্জ্য অটিজম শিশুর জন্মহার বৃদ্ধি ও শিশুর মানসিক বিকাশ না হওয়ার একটা উল্লেখযোগ্য কারণ। এটা শিশুদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলা ছাড়াও তাদের প্রতিবন্দী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। মাতৃস্বাস্থ্যের, বিশেষত মায়ের দুধের ক্ষতি করছে। টেলিকম রিপোর্টাস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : বাংলাদেশের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ’, শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তরা এমনটাই জানিয়েছেন। ওই আলোচনা সভাসূত্রেই জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়। গত বছর তৈরি হয় এক লাখ ৪২ হাজার টন। মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে তৈরি হয় এক হাজার টন। প্রতিবছর প্রায় চার কোটি মোবাইল ফোন আমদানি হচ্ছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক পণ্য ও ডিভাইসও আমদানি হচ্ছে। বলা বাহুল্য, এসব পণ্যের প্রতিনিয়ত উন্নত সংস্করণ হচ্ছে। ফলে দু’য়েক বছরেই মোবাইল ফোন, ল্যাপটব, কম্পিউটার ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটছে। পুরানোগুলো পরিত্যক্ত হচ্ছে। বিশ্বজুড়েই এ ধরনের নতুন নতুন ইলেক্ট্রনিক পণ্যের উদ্ভাবন ও উন্নত সংস্করনের প্রচলন অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। মানুষের প্রয়োজন, চাহিদা ও সুবিধার জন্যই এটি হচ্ছে। প্রযুক্তির এই উন্নয়ন এবং তার সেবা ও সুবিধা থেকে দূরে থাকার কোনো অবকাশ কারো নেই। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ায় অঙ্গীকারাবদ্ধ বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে ইলেক্ট্রনিক ও ডিজিটাল পণ্যের আমাদানি ও ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে ই-বর্জ্যরে পরিমাণও। ই-পণ্যের ব্যবহার আগামীতে আরো বাড়বে। পুরানো প্রযুক্তির বদলে নতুন প্রযুক্তি আসবে। বর্জ্যরে পরিমাণও সমানতালে বাড়বে। ই-বর্জ্যরে ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে আমরা ই-পণ্য ও নতুন প্রযুক্তি থেকে বিমুখ হয়ে থাকতে পারি না। একইভাবে এর ক্ষতি স্বীকার করে নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়। এমতাবস্থায়, উভয় কুল রক্ষায় কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেটাই বিবেচ্য।
উপযুক্ত ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এই প্রেক্ষাপটে, অত্যন্ত জরুরি। ই-বর্জ্য নিয়ে সমস্যা শুধু আমাদের দেশেই নয়, অন্যান্য দেশেও আছে। তারা কীভাবে এর সমাধান করছে, সেটা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। জানা গেছে, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটা নীতিমালা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নীতিমালাটা হলে একটা দিক নিদের্শনা পাওয়া যাবে। ই-বর্জ্য সংগ্রহের একটা সুনিদিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা থাকা খুবই দরকার। বর্জিত পণ্যের দাম ভালো হলে অনেকেই ফেলে না দিয়ে বিক্রী করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং এভাবে তা সংগ্রহ করা সহজ হয়ে উঠতে পারে। এ প্রসঙ্গে আলোচনা সভায় বিটিআরসির চেয়ারম্যান সামাজিক দায়বদ্ধতার তহবিল ব্যবহার করার পক্ষে অভিমত দিলে ডাক টেলিযোগাযোগ তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার জানান, ওই তহবিল এখাতে ব্যবহার করা যাবে কিনা, তিনি পরীক্ষা করে দেখবেন। মন্ত্রী ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি বিজনেস প্লানের কথাও উল্লেখ করেন। বলেন আমরা ভাবছি, একটি বিজনেস প্লান দাঁড় করিয়ে দিতে পারি কিনা, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-বর্জ্য সংগ্রহ করার একটি পদ্ধতি দাঁড়িয়ে যায়। কোনো ভাঙারি দোকানদার যদি একটি জিনিস ১০০ টাকায় বিক্রী করতে পারে, তাহলে সেটি ৫০ টাকায় কিনতে পারবে। এটা একটি সহজ সমাধান। মন্ত্রীর মতে, ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং করে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাত করা যেতে পারে। এভাবে ই-বর্জের মাধ্যমে একটি ব্যবস্থা ও দাঁড়িয়ে যেতে পারে, যাতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। তখন ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আলাদা ইনসেনটিভ দেওয়ায় কোনো প্রয়োজন হবে না।
বাস্তব কারণেই ই-পণ্যের ব্যবহার কমানো যাবে না। দিনকে দিন বরং বাড়বে। সঙ্গতকারণে বর্জ্যরে উৎপাদনও বাড়বে। যেহেতু ই-বর্জ্য পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর, সুতরাং কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। এ সংক্রান্ত নীতিমালাটি দ্রুত অনুমোদন ও কার্যকর হওয়া আবশ্যক। আজকের দিনে কোনো বর্জ্যই ফেলনা নয়। বর্জ্য রিসাইক্লিং করে নতুন নতুন ব্যবহার্য পণ্য তৈরি হচ্ছে। কৃষিবর্জ্য, গৃহস্থালী বর্জ্য ইত্যাদি থেকে সার, গ্যাস ইত্যাদি হচ্ছে। এসব বর্জ্য ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি তা থেকে বিভিন্নভাবে উপকারও পাওয়া যাচ্ছে। আমরা মনে করি, ই-বর্জ্য সংগ্রহ করে তা রিসাইক্লিং করে নতুন পণ্য উদ্ভাবনের বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এ গেল একদিক, অন্যদিকে ই-বর্জ্যরে ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। জনগণ এ ব্যাপারে সচেতন হলে যেখানে সেখানে তা ফেলবে না; নির্ধারিত স্থানেই ফেলবে। আর নির্ধারিত স্থান থেকে ওই বর্জ্য সংগ্রহ করা সহজ হবে। সেক্ষেত্রে কথিত বিজনেস প্লান বাস্তবায়নও সহজ হবে। যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন বর্জ্য নিরাপদ স্থানে ফেলার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।