Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতির সূচকে অবনমন : জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দুর্নীতি নিরোধে আমাদের সাফল্য প্রায় শূণ্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) সর্বশেষ প্রতিবেদনই তার সাক্ষ্য দেয়। বার্লিনভিত্তিক এই সংস্থা গত ২৯ জানুয়ারি তার বার্ষিক দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০১৮ প্রকাশ করেছে। সূচকে দেখা যায়, ০-১০০ স্কেলে বাংলাদেশ ২৬ স্কোর পেয়েছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ২ পয়েন্ট কম। অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশের স্থান আরো নাজুক। ১৮০টি দেশের তালিকায় উচ্চ অবস্থান অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম, যা ২০১৭ সালের তুলনায় দুই ধাপ নিচে। নিম্ন অবস্থান অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম, যা ২০১৭ সালের তুলনায় চার ধাপ নিচে। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে চতুর্থ সর্বনিম্ন। আফগানিস্তান ছাড়া অপর যে দুটি এশীয় দেশ বাংলাদেশের তুলনায় নিম্নতর, তারা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া ও কম্বোডিয়া। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ভুটান, ৬৬ স্কোর পেয়ে উচ্চক্রমে যার অবস্থান ২৫তম। এরপর ভারত ৪১ স্কোর পেয়ে ৭৮তম, শ্রীলংকা ৩৮ স্কোর পেয়ে ৮৯তম, পাকিস্তান ৩৩ স্কোর পেয়ে ১১৭তম, মালদ্বীপ ও নেপাল ৩১ স্কোর পেয়ে ১২৪তম এবং ১৬ স্কোর পেয়ে আফগানিস্তান ১৭২তম। বৈশ্বিক তালিকায় সর্বনিম্ন স্কোর সোমালিয়ার, ১০ পয়েন্ট। দেশটি এবারসহ মোট ১২বার এ সূচকে সর্বনিম্ন স্থান পেয়েছে।
যেসব দেশে দুর্নীতি সবচেয়ে কম বলে নিরূপিত হয়েছে, তাদের মধ্যে শীর্ষে আছে ৮৮ স্কোর পেয়ে প্রথম স্থানে ডেনমার্ক। ৮৭ পেয়ে দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ড, ৮৫ পেয়ে তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড। নরওয়ে ৮৪ পেয়ে সপ্তম এবং তারপর ক্রমানুসারে নেদারল্যান্ড, (৮২) কানাডা ও লুক্সেসবার্গ (৮১) জার্মানী ও যুক্তরাজ্য (৮০)। সিঙ্গাপুর ছাড়া প্রথম ২০টির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এশীয় দেশের মধ্যে রয়েছে হংকং (৭৬) এবং জাপান (৭৩)।
টিআই ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ধারণা সূচক সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সরকারি খাতে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি সম্পর্কে একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরাই টিআই’র লক্ষ্য। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপের ওপর ভিত্তি করে এ সূচক নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো দেশের টিআই’র চ্যাপ্টারের তথ্য বা গবেষণা ব্যবহার করা হয় না। এবার বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য গবেষণা গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো হলো : ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে, ইকোনমিস্ট ইন্টিজেন্স ইউনিটের কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস, বার্টলম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সফরমেশান ইনডেস্ক, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রির রিস্ক গাইড, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড কন্সটিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড জাস্টিজ প্রজেক্টের রুল অব ল ইনডেক্স এবং ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেটিক ডাটাসেট। সঙ্গতকারণেই এখানে টিআই’র বাংলাদেশ চ্যান্টার টিআইবির কোনো তথ্য ও গবেষণার সহায়তা নেয়া হয়নি।
অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, টিআই সূচকে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়। ওই সময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা এই দুর্নাম স্বীকার করতে চাননি। পক্ষান্তরে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা টিআই প্রতিবেদনকে শুধু গ্রহণই নয়, তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করতে কিছুমাত্র কসুর করেননি। এখনো প্রসঙ্গ উঠলে তারা সেকথা উল্লেখ করতে ছাড়েন না। প্রশ্ন উঠতে পারে, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশে দুর্নীতি কি খুব একটা কমেছে? টিআই প্রতিবেদন তেমন সাক্ষ্য দেয় না। এই সময়ে আমরা মধ্যম স্তরেও যেতে পারিনি। মধ্যম স্তরে যেতে ৪৩-১ পেতে হয়। বিগত ১০-১২ বছরে বাংলাদেশ ২৪ থেকে ২৮-এর মধ্যে ওঠানামা করেছে। কোনো কোনো বছরে সামান্য কিছু কমলেও পরবর্তীতে আবার বেড়েছে। যেমন, গত বছর সামান্য কমলেও এ বছর বেড়েছে। দুর্নীতি কমার ক্ষেত্রে সামান্য অগ্রগতি ঘটলেও অর্থাৎ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের অবস্থান থেকে উঠে এলেও তাতে আত্মতুষ্ঠ হওয়ার মোটেই কোনো কারণ নেই।
টিআই’র দুর্নীতির সূচক সম্পর্কিত প্রতিবেদন যে শতভাগ সঠিক, এমন দাবি টিআই’ও করেনা। কারণ, সংস্থাটি বলেই দিয়েছে, এটি ‘ধারণা সূচক’ মাত্র। কিন্তু যেহেতু এটি গাবেষণার ফল, সুতরাং তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার কোনো যুক্তি নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রতিবছর টিআই’র এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের তরফে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুদকের চেয়ারম্যান প্রতিবেদনের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, টিআই’র কাছে তথ্য-প্রমাণ চেয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ তো প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যানই করেছেন। তার ভাষায়, টিআই দুর্নীতি বেড়েছে বলে যে কথা বলেছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ত্রুটিপূর্ণ ও মনগড়া। তিনি এও বলেছেন, দেশকে হেয়প্রতিপন্ন করতে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে রাজনৈতিক হাতিয়ার তুলে দেয়ার উদ্দেশ্যে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, যা সমাচীন নয়। তথ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, বিষয়টির মধ্যে রাজনীতি খোঁজার কোনো অবকাশ নেই। আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ থাকার কথা নয়। তাদের মতে, সরকারের বরং উচিৎ প্রতিবেদনটি ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। টিআই যেসব উৎস থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে, প্রয়োজনে সেইসব উৎস থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা এবং বিশ্লেষণ করা। সরকার দুর্নীতি দমন করতে চায়। এক্ষেত্রে ওইসব তথ্য-উপাত্ত সহায়ক হতে পারে। প্রতিবেদনটিকে একেবারে নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখে বা প্রত্যাখ্যান না করে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা ও আমলে নেয়াই সঙ্গত। দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি নিরোধে কাজ করা একমাত্র সরকারি সংস্থা হওয়ায় সেও এই প্রতিবেদন থেকে উপকৃত হতে পারে। প্রতিবেদনের যথার্থতা নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে, দ্বিমত প্রকাশ করতে পারে, প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। তাতে প্রতিবেদনটি পুরোপুরি নাকচ বা মিথ্যা হয়ে যায় না। সরকার বা দুদক প্রতি বছর দেশের দুর্নীতির ওপর এরকম একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে, যা হতে পারে টিআই’র প্রতিবেদনের যথার্থ জবাব। সরকার কিংবা দুদক কি প্রস্তাবটি ভেবে দেখবে?
দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি কেমন, সেটা জানার ও বুঝার জন্য টিআই’র প্রতিবেদন পড়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। মানুষের চোখের সামনেই দুর্নীতির নানা ঘটনা ঘটছে। দুর্নীতির অনেক অজানা ঘটনা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। কাজেই, দুর্নীতি বাড়ছে না কমছে তা পরখ করে দেখা কারো পক্ষেই কঠিন কিছু নয়। যখন দুদকের চেয়ারম্যান টিআই’র কাছে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ চেয়েছেন তখনই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে ৫৯০ কোটি ডলার (প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এভাবে প্রায় প্রতিবছর সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়ে যায়। জিএফআই’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে পাচার হয় ৫৪০ কোটি ডলার। এরপর থেকে পাচারের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এবং ২০১৪ সালে পাচার হয় ৯১১ কোটি ডলার। এভাবে গত ১০ বছরে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার ৯৫৬ কোটি ডলার। পাচারকৃত এই বিপুল অংকের অর্থ যে বৈধভাবে অর্জিত নয়, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত, তা না বোঝার কিছু নেই। জিএফআই’র মতে, প্রধানত, চারটি প্রক্রিয়ায় অর্থপাচার হচ্ছে। এগুলো হলো: পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) পণ্য রফতানির মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনডয়েসিং, হুল্ডি ও অন্যান্য মাধ্যমে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা।
এই যে প্রতিবছরই হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, তা সরকারের না জানার কথা নয়। প্রায়ই পত্রপত্রিকায় ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং, হুল্ডি ও ভিওআইপি ব্যবসার নামে অর্থপাচারের খবর প্রকাশিত হয়। কদিন আগেও এক খবরে বলা হয়েছে, ভিওআইপি’র মাধ্যমে বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। অথচ অর্থ পাচারের এই প্রক্রিয়াগুলো বন্ধ করা এবং পাচারকারীদের ধরার কোনো উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নিতে সরকারকে দেখা যায় না। দুর্নীতি কতটা বেপরোয়া রূপ নিয়েছে, ব্যাংকখাতের দিকে তাকালে তা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। ব্যাংকখাত থেকে গত ১০ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট ও পাচার হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন ব্যাংক, এমন কি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও টাকা লুট ও পাচার হয়েছে। সিপিডির হিসাবে, এই সময় ব্যাংক খাত থেকে সাড়ে ২২ হাজার কোট টাকা বেহাত ও পাচার হয়েছে। ব্যাংকখাতের বড় বড় জালিয়াতি ও অর্থ লুটের ঘটনার দুয়েকটি বাদে কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি। সংশ্লিষ্টরা অনেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। নানাভাবে এই যে লাখ লাখ কোটি টাকা লুট ও পাচার হয়েছে, তার বিচার, শাস্তি ও টাকা ফেরৎ আনার জোরালো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
টাকা লুট ও পাচারের সঙ্গে কারা জড়িত, সেটা কারো ধারণা ও আন্দাজের বাইরে নয়। কিছু তথ্য-প্রমাণ বিভিন্ন ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। প্রধানত, বড় বড় ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মী এর সঙ্গে জড়িত। লুণ্ঠিত অর্থ পাচার হয়ে কোথায় কোথায় গেছে, কী কী খাতে নিয়োজিত হয়েছে, তাও কারো অজানা নেই। পাচার হওয়া অর্থের একাংশ সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে, একাংশ মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ হয়েছে, একাংশ কানাডায় ঘরবাড়ি করায় ব্যবহৃত হয়েছে, একাংশ বিভিন্ন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ হয়েছে। এসব তথ্য এবং পাচারের সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করা মোটেই কোনো কঠিন কাজ নয়। ওই সব অর্থ বিভিন্ন দেশে বৈধভাবেই বিনিয়োগ হয়েছে। তাদের কাছে সব তথ্যই মজুদ আছে। তথ্য চাইলেই পাওয়া যায়। কিন্তু তথ্য চাওয়ার ব্যাপারে সরকারের এক ধরনের অনীহা লক্ষ্যণীয়। সরকার তথ্য সংগ্রহ করে অর্থ ফেরৎ আনার এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যথোচিত আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। নিচ্ছে না কেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। আর সরকারের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাহীনতার কারণে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ অর্জন ও পাচার বন্ধ তো দূরের কথা, এতটুকু কমছে না।
দুর্নীতি দেশের জন্য কত বড় ক্ষতি, তা ব্যাখ্যা করে বুঝানোর প্রয়োজন পড়েনা। এ যাবৎ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে যত টাকা পাচার হয়ে গেছে, তা যদি দেশেই থাকতো এবং বিনিয়োগ হতো তাহলে দেশের চেহারাই বদলে যেতো। অনেকে যুক্তি দেখাতে চান, যে দেশের অর্থনীতির আকার যত বড় হবে, সে দেশে দুর্নীতির আকারও তত বড় হবে। একথা বলে তারা বুঝাতে চান, আমাদের দেশের অর্থনীতির আকার বেড়েছে, ফলে দুর্নীতিও বেড়েছে। এটা যে একটা খোঁড়া যুক্তি, সেটা বলাই বাহুল্য। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে দুর্নীতি এত কম কেন? এর কি কোনো জবাব আছে?
এটাই সর্বাদিকসম্মত অভিমত, যেসব দেশে অপশাসন বা দু:শাসন বিরাজ করে কিংবা সুশাসনের ঘাটতি থাকে, দায়মুক্তি বা বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিস্তৃতি লাভ করে এবং জবাবদিহিতার কোনো বালাই থাকে না, সেসব দেশে দুর্নীতি বেশি হয়। আমাদের দেশে দুর্নীতি বৃদ্ধির পেছনে এসব কারণই যে নিয়ামক ভূমিকা রাখছে তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখেনা। দুর্নীতি সম্পূর্ণ নির্র্মূল করা হয়তো সম্ভব নয়; তবে তা সহনশীল পর্যায়ে রাখা খুবই সম্ভব। এ জন্য সুশাসন, আইনের শাসন, দায়মুক্তি বা বিচারহীনতার সংস্কৃতির উৎসাদন এবং সকল ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা যে উদ্বেগজনক, তাতে বিন্দুমাত্র কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচনের আগে ও সরকার গঠনের পরে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য থেকেও সেটা অনুধাবন করা যায়। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন নতুন সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা, তা প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ ও কমানো ছাড়া সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যের বাস্তবায়ন বিঘ্নিত ও বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এ বিষয়ে সাধারণ ঐকমত্য রয়েছে। সুতরাং, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরতম অবস্থান নিতেই হবে। দুর্নীতি কুরে কুরে দেশকে খেয়ে ফেলছে। কাজেই দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করা ছাড়া উপায় নেই। এই লড়াইয়ে সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন, দুদক ও নাগরিক সমাজকে সমন্বিত ভূমিকা রাখতে হবে। জনগণকেও এই লড়াইয়ে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর সবার আগে সুশাসন, ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা, গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন