নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ঢাকার দরকার ছিল ১৩ রান, হাতে ২ উইকেট। কুমিল্লার হয়ে বোলিংয়ে আসেন সাইফ উদ্দিন। প্রথম বলেই উইকেট। এলবির ফাঁদে পড়ে ফিরে যান রুবেল হোসেন। আন্দ্রে রাসলেকে স্ট্রাইক দিতে পরের বলে তড়িঘড়ি ১ রান নেন শাহাদাত হোসেন। যার কাঁধে তখন ঢাকাকে শঙ্কামুক্ত করার গুরুদায়ীত্ব, সেই রাসেল তৃতীয় বলে রানই পেলেন না! পোড়খাওয়া সাউফউদ্দিনের চতুর্থ বলটি আরো দুর্বোধ্য ঠেকলো ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের কাছে, ডট! শেষ ২ বলে প্রয়োজন ১২ রান। কঠিন সমীকরণে স্বপ্ন দেখা শুথু মাত্র রাসেল ক্রিজে বলেই। পঞ্চম বলে সজোরে হাঁকালেন ছক্কা। চওড়া হলো কাঁধ, বাড়ল আশার সাধ। দুরু দুরু বুকে হোম অব ক্রিকেটে পিনপতন রিবতা। কিছুটা সময় নিয়ে শেষ বলটি ছুড়লেন সাইফ। বৃদ্ধিদীপ্ত ইয়র্কার আঘাত হানলো উইন্ডিজ তারকার পায়ে, তবুও চালালেন ব্যাট। তাফে মাটিতে ফেলেই বল ছুট দেয় সীমানায়, তবে প্রয়োজন মেটাতে পারেনি। ব্লাইন্ড সেই চারে জয় থেকে এক রান আগেই থেমে যায় ঢাকার চাকা। বারবার রঙ পাল্টানো ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে দারুণ এক জয় এনে দিলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
১১ ম্যাচে অষ্টম জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে গেল আগেই শেষ চার নিশ্চিত করা কুমিল্লা। সমান ম্যাচে ষষ্ঠ হারের স্বাদ পাওয়া ঢাকার পয়েন্ট ১০। শেষ চারে যেতে হলে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে জিততেই হবে তাদের। ১২ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে আছে রাজশাহী কিংস। খুলনার বিপক্ষে ঢাকা হারলে শেষ চারে খেলবে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।
শেষ চার আগেই নিশ্চিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। ম্যাচটা ঢাকা ডায়নামাইটসের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে শেষ চারে উঠবে দলটি। সেই লক্ষ্য সাকিব আল হাসানের দলের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। কুমিল্লাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে মাত্র ১২৭ রানেই বেঁধে ফেলে ঢাকা।
ম্যাচটি যে তাঁদের জন্য স্রফে আনুষ্ঠানিকতার, সেটি বোঝা গেল ব্যাটিংয়ে। ১১ ওভার শেষে ৬৫ রান তুলতেই দলটির ৫ উইকেট নেই। শেষ আশা হিসেবে ছিলেন থিসারা পেরেরা। তাঁর ব্যাটে ভর করে যদি সম্মানজনক স্কোর তোলা যায়। নাহ, সেটিও হলো না। ঢাকার অষ্টম উইকেট হিসেবে পেরেরা যখন ফিরলেন স্কোরবোর্ডে উঠছে মাত্র ৮৭। ইনিংসে আর বল বাকি ২৯টি। এরপর কুমিল্লা আর কীভাবে লড়াকু পুঁজি গড়ে!
এক তামিম ইকবাল শুধু ত্রিশোর্দ্ধ রানের ইনিংস খেললেন। ২ ছক্কা ও ৪ চারে ২০ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এ ছাড়া কুমিল্লার আর কেউ ২০ রানের ওপাশে যেতে পারেননি। নয় ও দশে নামা মেহেদী হাসান (২০) ও ওয়াহাব রিয়াজ (১৬) কিছুক্ষণ না টিকলে কুমিল্লার স্কোর একশ’ রানও হতো না। ঢাকার হয়ে এদিন ৩০ রান দিলেও ৪ উইকেট নেন রুবেল হোসেন। দুর্দান্ত একটি ক্যাচও ধরেন এই পেসার। ২টি করে উইকেট সুনীল নারাইন ও সাকিবের।
কুমিল্লার চাইতে বাজে শুরুতে হয় ঢাকার জবাব। ২৯ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে তখনই কান্ডারীর ভুমিকায় দুই ক্যারিবিয়ান সুনীল নারাইন ও কাইরন পোলার্ড। নতুন ওপেনার মিজানুর রহমান ফেরেন ১৬ রানে। দলে গতকালই যোগ দেয়া উপুল থারাঙ্গা পারেন নি প্রমাণ দিতে (০), রনি তালুকদারও (১) ব্যর্থ এদিন। ছোট লক্ষ্য তখনও পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব দেখছিল ঢাকা শুধুমাত্র সাকিবের দুরদর্শিতায়। সেটিও মুখ থুবড়ে পড়ে ঢাকা অধিনায়কের (৭) সঙ্গে সঙ্গে।
সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করে যান নারাইন-পোলার্ড। তবে দলীয় ৭১ রানে উইকেটে হানা দেন শহীদ আফ্রিদি। তার বলে ওয়াহাব রিয়াজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২২ রানে ফেরেন নারাইন। এরপর পোলার্ডের শিকারি সেই সাইফউদ্দিন। দলীয় ৯০ রানে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৩৪ রানে ফেরেন উইন্ডিজ এই অলরাউন্ডার। সাইফের দিনে শূন্য হাতে ফেরেন নুরুল হাসান সোহানও।
ফের এক লড়াই। শুভাগত হোমকে সঙ্গে করে ব্যাটে ঝড় তোলেন আন্দ্রে রাসেল। আফ্রিদির ওভারে পরপর ২টি ছক্কা হাঁকান উইন্ডিজ এই অলরাউন্ডার। তবে দলীয় ১১২ রানে ওয়াহাব রিয়াজের বলে ক্যাচ দিয়ে শুভাগত ফেরেন ৪ রানে। সঙ্গীদের কাছ থেকে সহযোগীতা না পেয়ে ৩০ রানে অপরাজিত থেকে দলের হার দেখেছেন অসহায় রাসেল।
কুমিল্লার হয়ে ৪ ওভারে ১টি মেডেনসহ ২২ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। এছাড়াও মেহেদী হাসান ২টি উইকেট নেন। আর ১টি করে উইকেট নেন ওয়াহাব রিয়াজ, মোশাররফ হোসেন ও শহীদ আফ্রিদি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ২০ ওভারে ১২৭ (তামিম ৩৮, লুইস ৮, এনামুল ০, ইমরুল ৭, শামসুর ২, আফ্রিদি ১৮, থিসারা ৯, সাইফ ২, মেহেদি ২০, ওয়াহাব ১৬, মোশাররফ ৪*; শাহাদাত ১-০-১২-০, শুভাগত ৩-০-১৪-১, রাসেল ৪-০-২২-০, নারাইন ৪-০-২৫-২, রুবেল ৪-০-৩০-৪, সাকিব ৪-০-২৩-২)।
ঢাকা ডায়নামাইটস : ২০ ওভারে ১২৬/৯ (মিজানুর ১৬, থারাঙ্গা ০, রনি ১, সাকিব ৭, নারাইন ২২, পোলার্ড ৩৪, রাসেল ৩০*, সোহান ০, শুভাগত ৪, রুবেল ০, শাহাদাত ১*; সাইফ ৪-১-২২-৪, মেহেদি ৪-০-২২-২, ওয়াহাব ৪-০-২২-১, মোশাররফ ৩-০-২৩-১, থিসারা ১-০-৩-০, আফ্রিদি ৪-১-২৭-১)।
ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (কুমিল্লা)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।